মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَصِفُوۡنَ ﴿۹۶﴾
মন্দের মুকাবিলা করুন যা উত্তম তা দ্বারা; তারা (আমাকে) যে গুণে গুণান্বিত করে আমরা সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত।
(সূরা মুমিনূন : ৯৬)
এই আয়াতের অর্থ মুহাদ্দিসিনে কেরামগন এইভাবেও করেছেনঃ
‘কেহ যদি তোমার সহিত অন্যায় ব্যবহার করে তুমি সদ্ব্যবহার দ্বারা তাহার প্রতিশোধ লও, তাহা হইলে যাহার সহিত তোমার শত্রুতা আছে সে তোমার পরম বন্ধু হইবে’।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
অর্থাৎ আপনি মন্দকে উত্তম দ্বারা, যুলুমকে ইনসাফ দ্বারা এবং নির্দয়তাকে দয়া দ্বারা প্রতিহত করুন। এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রদত্ত উত্তম চরিত্রের শিক্ষা, যা মুসলিমদের পারস্পরিক কাজ কারবারে সর্বদাই প্রচলিত আছে।
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
মন্দ প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট; ফলে আপনার ও যার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। আর এটি শুধু তারাই প্ৰাপ্ত হবে যারা ধৈর্যশীল। আর এর অধিকারী তারাই হবে কেবল যারা মহাভাগ্যবান।”
[সূরা ফুসসিলাত: ৩৪–৩৫]
অর্থাৎ যুলুম ও নির্যাতনের জওয়াবে কাফের ও মুশরিকদের ক্ষমা ও মার্জনাই করতে থাক। কারও কারও মতে, কাফেরদেরকে প্রত্যাঘাত না করার নির্দেশ পরবর্তীকালে জেহাদের আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। কারও কারও মতে, উম্মতের নিজেদের মধ্যে এর বিধান ঠিকই কার্যকর। শুধু কাফেরদের ক্ষেত্রে তা রহিত হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
কিন্তু ঠিক জেহাদের অবস্থায়ও এই সচ্চরিত্রতার অনেক প্রতীক অবশিষ্ট রাখা হয়েছে, যেমন-কোন নারীকে হত্যা না করা, শিশু হত্যা না করা, ধর্মীয় পুরোহিত, যারা মুসলিমদের মোকাবেলায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, তাদেরকে হত্যা না করা। কাউকে হত্যা করা হলে তার নাক, কান ইত্যাদি কেটে ‘মুছলা’ তথা বিকৃত না করা ইত্যাদি।
,
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তাঁর জীবনের প্রতিটি কাজ মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শত্রু, মিত্র নির্বিশেষে সবার সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করতেন। এমনকি শত্রুর প্রতিও তিনি কোনো অন্যায় আচরণ করতেন না। বরং তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতেন।
শত্রুদের প্রতি মহানবী (সা.) কখনো প্রতিহিংসাপরায়ণ হতেন না। বিনা কারণে তাদের প্রতি চড়াও হতেন না এবং একেবারে নিরুপায় না হলে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতেন না। অস্ত্র ধারণের পূর্বে তাদের সঠিক পথে আসার আহ্বান জানাতেন।
বদর যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয়। এ যুদ্ধে আবু জেহেলসহ ৭০ জন কুরাইশ নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলমান শাহাদতবরণ করে। বন্দিদের প্রতি মহানবী (সা.) যে উদার ও মধুর ব্যবহার করেছেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। মাত্র দুজন গুরুতর অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, অন্য সবার প্রতি উদার ব্যবহার করা হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) কুরাইশ বন্দিদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আবদ্ধ না রেখে মুক্তিপণ গ্রহণ করে মুক্তি দেন। মাত্র চার হাজার দিরহাম মুক্তিপণ নির্ধারিত হয়। আর যারা মুক্তিপণ দিতে অক্ষম ছিল, তাদের পরে তিনি বিনা শর্তেই মুক্তিদান করেন। মানবতার ইতিহাসে পরম শত্রুর প্রতি এরূপ উদারতা ও মহানুভবতা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মক্কা বিজয়ের পর তাঁর পরম শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও তিনি কোনোরূপ রক্তপাত না ঘটিয়ে তাদের বিনা শর্তে ক্ষমা করে দেন। শত্রুদের প্রতি এরূপ ক্ষমার দৃষ্টান্ত পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই।
কোনো যুদ্ধে মহানবী সাঃ এর হাতে কোনো কাফের মুশরিকদেরকে হত্যার কথা কোনো হাদীসে পাইনি।