উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো যেখানে কোনো কাজ ছাড়াই বিনিময় পাওয়া সেটা নাজায়েজ।
সুতরাং আপনার যে একটি বিজনেস আইডি খুলেছেন, এর রেফার কোড এর মাধ্যমে অন্য কাউকে আইডি খুলে দিলে আপনি যেই কমিশন পাবেন,এটা এমন এক বিনিময়, যার মোকাবেলায় আপনি কোনো শরীয়তে ধর্তব্য করার মতো কোনো কাজ করেননি।
তাই এই কমিশন নাজায়েজ।
,
কুরআনুল কারীমের আয়াত-
لا تاكلوا اموالكم بينكم بالباطل
এর ব্যাখ্যায় রঈসুল মুফাসসিরীন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেছেন, أن يأكله بغير عوض (শর্তযুক্ত আকদে) বিনিময়হীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থার উপার্জন। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৭২)
হযরত হাসান বসরীসহ অন্যান্য অনেক তাফসীরবিদও আয়াতটির একই ধরনের তাফসীর করেছেন (দ্রষ্টব্য: রূহুল মাআনী ২/৭০, ৫/১৫; তাফসীরুল মানার ৫/৪০)
★এটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
তাদের প্রায় প্রত্যেক সদস্যই এ কাজে জড়িত।
,
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিতঃ
এমএলএম-এর ব্যাখ্যা এই : Multi Level Marketing (M = Multi, L = Level, M = Marketing) Multi : বহু, নানা। যেমন : Multi Color (বহু বর্ণ), Multi National : (নানা দেশে সক্রিয়, বহুজাতিক), খবাবষ : স্তর, Marketing : ক্রয়বিক্রয়, বাজারে
পণ্য ছাড়া।
এককথায় এর অর্থ দাঁড়ায়,
বহুস্তরবিশিষ্ট বিপণন। এই অর্থ থেকেই অনেক কিছু বুঝে আসে।
যেমন-
ক. বহু স্তরবিশিষ্ট বিপণন মানে প্রথম ক্রয়বিক্রয়ের পরই কারবার শেষ হয় না; বরং সামনে বহু স্তরে এটি চলমান থাকবে। (ব্যাখ্যা সামনে আসছে)।
খ. এখানে দুইটা জিনিস বা দুইটা পদবি একত্রে অর্জিত হয় ১. ক্রেতা ২. পরিবেশক। ওদের ফরমেই তা লেখা আছে। দুনিয়ার অন্যান্য কারবারে কেনা শেষ হওয়ার পর কেবল একটি পদবি অর্জিত হয়। তা হল ক্রেতা এবং জিনিসও একটিই অর্জিত হয় তা হল পণ্য বা নির্ধারিত সেবা।
,
কিন্তু এখানে পদবী দুইটি, জিনিসও দুইটি। একটি হল পণ্য আর অপরটি হল ডিস্ট্রিবিউটরশীপ বা পরিবেশক হওয়ার যোগ্যতা। যেমন-ট্রি প্লান্টেশন। আপনি দশ হাজার টাকা দিয়ে ১২টি গাছ ক্রয় করলেন। এখানে আপনি একটি কিনলেন পণ্য। আরেকটি হল, উক্ত কোম্পানি থেকে কমিশন লাভের যোগ্যতা। আপনি আরো লোক যোগাড় করে দিতে পারলে কমিশন পাবেন। এতে বুঝা গেল, বিক্রয়টা এক স্তরে শেষ হয় না; বরং আপনার মাধ্যমে এবং আপনার পরবর্তী লোকদের মাধ্যমে তা বহু স্তরে বিস্তৃত হয়।
গ. আপনি কোম্পানিকে যে অর্থ দিয়ে তার সাথে জড়িত হলেন এর বিনিময়ে আপনি পাচ্ছেন দুইটি বিষয় : ১. পণ্য। তা হয়ত ক্ষেত্রবিশেষে নগদে পেয়ে যাবেন। ২. এটি থাকবে বাকি। যার নাম পরিবেশক হয়ে কমিশন প্রাপ্তি। আপনি নিজে অন্য ক্রেতা জোগাড় করে দিলে এবং সে ক্রেতারা আরো লোকজন নিয়ে আসলে আপনি পাবেন নির্ধারিত হারে কমিশন।
এটিকে নেটওয়ার্ক সিস্টেমও বলা হয়ে থাকে। তাই এমএলএম কোম্পানিগুলোর কারবারকে নেটওয়ার্ক বিজনেস বলেও আখ্যা দেওয়া হয়।
বিষয়টিকে সহজ করার জন্য একটি উদাহরণ টানা যেতে পারে। যেমন-ধরে নেওয়া যাক, গাছপালা লিমিটেড নামক একটি কোম্পানি ৫ বছর পর লাভসহ মূল দেওয়ার শর্তে ৫০০০/-টাকার বিনিময়ে ‘ক’ নামক ব্যক্তিকে ক্রেতা-পরিবেশক বানাল। এরপর ক নামক লোকটি উক্ত শর্তে খ ও গ নামক আরো দুজনকে কোম্পানির ক্রেতা-পরিবেশক বানাল। অতপর খ ও গ প্রত্যেকে কোম্পানিতে ভেড়াল যথাক্রমে ঘ, ঙ এবং চ, ছ কে। এভাবে প্রত্যেক নতুন ব্যক্তি দুজন করে ক্রেতা কোম্পানিতে নিয়ে আসবে। উপরোক্ত উদাহরণে ক নামক ব্যক্তি যেমনিভাবে খ ও গ নামক ব্যক্তিকে জোগাড় করার জন্য কোম্পানি থেকে কমিশন পাবে তেমনি স্থলবর্তী প্রত্যেক ব্যক্তি তথা ঘ, ঙ, চ, ছ সহ আরো যতজন এ লাইন দুটিতে নীচের দিকে যোগ হবে তাদের প্রত্যেকের অন্তর্ভুক্তির জন্য কোম্পানি তাকে বোনাস টাকা প্রদান করবে। এভাবে আপ লেভেল বা উপরের স্তরের ক্রেতাগণ ডাউন লেভেল তথা নিম্নস্তরের পরিবেশকদের মাধ্যমে টাকা উপার্জন করতে থাকবে এবং ঐ সব কোম্পানির ঘোষণা অনুযায়ী তারা বড় বড় পদবি অর্জন করে দেশ-বিদেশে ভ্রমণসহ বহুবিধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে থাকবে।
,
কেহ কেহ বলেন যে এখানে তো কাজ করেই কমিশন নেওয়া হচ্ছে,,,,,
আসলে,কাজ করা, কাজের জন্য দৌড়ঝাপ দেওয়া, কিন্তু তা যদি হয় অন্যের কাজ, সেই কাজটি যদি লেখা হয় অন্যের নামে তখন তো আর সেটিকে নিজ কাজ বলা চলবে না। অর্থাৎ এখানে দেখতে হবে কাজের নিসবত কার দিকে হয়েছে। এখানে প্রথম ব্যক্তি (উদাহরণস্বরূপ ‘ক’) যদি তৃতীয় লেভেলে কাউকে ভিড়ানোর জন্য কাজ করে তবে সেটি পরবর্তী
স্তরের লোকের কাজ। ‘ক’ কেবল তাকে তার কাজে সহযোগিতা করছে। কোম্পানি বলেন, শরীয়ত বলেন, আইন বলেন, কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি ক-এর কাজ নয়; বরং দ্বিতীয় স্তরের লোকের কাজ। যদি এটি ‘ক’-এর কাজ হত তাহলে ঐ পরিমাণই কমিশন পেত, যে পরিমাণ পেয়েছিল প্রথম দুজনকে বানিয়ে। যদি এ রকম হত যে, ‘ঙ’ যা পাচ্ছে এর একটি অংশ ‘ক’কে দিয়ে দিচ্ছে তাহলে দাবিটার কিছু যুক্তি থাকত। কিন্তু সে দিবে না; বরং উল্টো বলবে, আরে মিয়া! আর কত খাবেন। তো সে কাজ করেছে অন্য ব্যক্তির জন্য। আর বিনিময় দিচ্ছে কোম্পানি। কাজের সম্পর্ক একজনের সাথে আর বিনিময়ের সম্পর্ক আরেকজনের সাথে। দেখুন এ দুটিতে কি মিল আছে!!
খোদ কোম্পানির সফটওয়ারেই ঐ ব্যক্তিকে নিম্নস্তরের ব্যক্তি কর্তৃক নিয়ে আসা লোক হিসাবে ধরা হয় এবং রেফারেন্স হিসেবে তার নম্বরই ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এটি যেহেতু প্রথম ব্যক্তির কাজ নয় তাই ঐ কাজের জন্য প্রাপ্ত কমিশন উজরত বেলা আমল তথা কাজহীন বিনিময়ের অন্তর্ভুক্ত।
,
সে কোম্পানির পরিবেশক তা ঠিক। কিন্তু সে চাকরিজীবি নয়। কোম্পানি তাকে এমন কোনো পদে নিয়োগ দেয়নি যে, সময় দিলেই সে বেতন পেতে থাকবে। বরং কোম্পানি বলছে, আপনি চারজন লোক কোম্পানিতে ভেড়ালে তারা এবং তাদের অধস্তনরা আরো যত লোক নিয়ে আসবে সকলের জন্য আপনাকে কমিশন দেওয়া হবে। এখানেই শরীয়তের আপত্তি।
,
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নিয়ে আরো জানুনঃ