بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
হালাল ও হারাম ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরিভাষা। সাধারণত
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে সব বৈধ বিষয়কে হালাল ও সব অবৈধ বিষয়কে হারাম বলা হয়। হালাল
ও হারাম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। তাই প্রত্যেক মুমিন নিঃসংকোচে তার অনুসরণ করে। কেননা
সে বিশ্বাস করে,
وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ
الْخَبَائِثَ
‘তিনি
তাদের জন্য পবিত্র (ও উত্তম) বস্তু হালাল করেছেন এবং অপবিত্র (ও অনুত্তম) বস্তু হারাম
করেছেন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
আল্লাহর নির্ধারিত সীমা : মুমিনের জন্য হালাল ও হারাম আল্লাহ
কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কোরআনে আল্লাহ এই সীমারেখা অতিক্রম করতে নিষেধ করেছেন। ইরশাদ
হয়েছে,
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن
يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। সুতরাং তোমরা তা লঙ্ঘন কোরো না। যে ব্যক্তি
আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে তারাই অবিচারী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২৯)
নির্ধারণের অধিকার শুধু আল্লাহর : হালাল ও হারাম নির্ধারণের
অধিকার শুধু আল্লাহর। আল্লাহ এই অধিকার আর কাউকে দেননি। ইরশাদ হয়েছে,
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ لَكُم مِّن
رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَالًا قُلْ آللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ
أَمْ عَلَى اللَّهِ تَفْتَرُونَ
‘বলুন,
তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছেন তোমরা যে তার
কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ? বলুন, আল্লাহ
কি তোমাদের এর অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ
করছ?’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫৯)
মুমিনের পরিচয়ের অংশ : হালালকে হালাল মনে করা এবং হারামকে হারাম
মনে করা মুমিনের পরিচয়ের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন
পাঠ করেছে এবং তা মুখস্থ রেখেছে আর এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে,
তাকে আল্লাহ জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৯০৬)
হালালকে হারাম বলা জঘন্য অপরাধ : কোনো হালাল বস্তুকে হারাম বলা
আল্লাহর প্রতি অপবাদ দেওয়ার নামান্তর। আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জিহ্বা মিথ্যারোপ করে বলে আল্লাহর
প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য তোমরা বোলো না এটা হালাল এবং এটা হারাম।’ (সুরা নাহল,
আয়াত : ১১৬)
হালালকে হারাম করা সীমা লঙ্ঘন : কোনো হালাল বস্তুকে হারাম মনে
করা বা হারামতুল্য মনে করে তা পরিহার করা সীমা লঙ্ঘন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা,
আল্লাহ তোমাদের জন্য উত্কৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সেসবকে তোমরা হারাম কোরো না এবং সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের
পছন্দ করেন না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮৭)
হালাল বস্তু পরিহার করা অশোভনীয় : আল্লাহ মানুষের জন্য যা কিছু
বৈধ করেছেন যা পরিহার করা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! আল্লাহ স্বীয়
বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিকা সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে?
বলুন! পার্থিব জীবনে বিশেষ করে কিয়ামতের দিন এসব তাদের জন্য,
যারা ঈমান আনে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩২)
হালাল পরিহার বঞ্চিত হওয়ার নামান্তর : আল্লাহ যেসব বস্তু হালাল
করেছেন তা পরিহার করা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ারই নামান্তর। পবিত্র কোরআনে
আল্লাহ বলেন, ‘তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এসব গবাদি পশু ও শস্য
ক্ষেত নিষিদ্ধ; আমি যাকে ইচ্ছা করি সে ছাড়া কেউ এসব আহার করতে
পারবে না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৩৮)
মানুষের সন্তুষ্টির জন্য হালাল বস্তু বর্জন নয় : কোনো মানুষকে
সন্তুষ্ট করার জন্য আল্লাহ যা বৈধ করেছেন তা পরিহার করার অবকাশ নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আল্লাহ আপনার জন্য যা বৈধ করেছেন আপনি তা নিষিদ্ধ করছেন কেন? আপনি তো আপনার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি চাচ্ছেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ১)
হালাল-হারাম সম্পর্কের ঊর্ধ্বে : আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হালাল
ও হারামের বিধান যেকোনো ধরনের সম্পর্ক ও সম্প্রীতির ঊর্ধ্বে। এ জন্য ইহুদি ধর্ম ত্যাগের
পরও সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ও তাঁর সঙ্গীরা যখন শনিবারকে মর্যাদার চোখে দেখতেন
এবং উটের গোশত খেতে অপছন্দ করতেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাদের সতর্ক করে বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের
পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮; বিস্তারিত : তাফসিরে তাবারি)
হালাল বর্জনকারীদের প্রতি নবীজির হুঁশিয়ারি : যখন মদিনার একদল
সাহাবি নিজেদের ওপর কঠোরতা আরোপ করেছেন এবং বৈধ জিনিস নিজেদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন
বলে প্রকাশ পায়, তখন মহানবী (সা.) বলেন, ‘সাবধান! চরমপন্থীরা ধ্বংস হয়েছে।
তিনি এ কথা তিনবার বলেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৬০৮)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মূলত কোন কাজ হালাল হওয়া না হওয়া শরীয়তকর্তৃক নির্ধারিত। বিধায়
কোন কাজ যদি হালাল হয় তা থেকে উপার্জন করাও হালাল হবে ।আর কাজটি হারাম হলে
তা থেকে উপার্জন করাও হারাম হবে। আপনি প্রশ্নের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন বিষয়টিকে বুঝিয়েছেন
তা কমেন্টে উল্লেখ করার অনুরোধ রইল।