আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
502 views
in সাওম (Fasting) by (26 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ্।

⭕আমি একটি  কাজের শুকরিয়াস্বরূপ মান্নত করেছিলাম আজ রোজা রাখার।মান্নতের সময় ইন শা আল্লাহ ও বলেছিলাম।

⭕কিন্তু সেহেরির সময় ঘুম থেকে উঠতে পারি নি।

⭕ফজরের সময় পেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলি, তখন মনে ছিলো না রোজা আছি।কুলি করার সময় মনে পরে।তখন সাবধানে কুলি করি।পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজার ফলে কিছু গলায় গেছে নাকি জানি না।

⭕কুলি করার সময় সরাসরি পানি যায় নাই,তবে মুখে পানি দেওয়ার ফলে মুখ তো ভেজাই থাকে।পরে ঢুক গেলার সময় থুথুর সাথে সেই পানি গেলে কি রোজা ভাঙবে?
⚫আমার রোজা কি রাখা হয়েছে।আর না হলে কি এখন ভেঙে ফেলতে হবে?যেহেতু সবকিছুই অপরিপূর্ণ লাগছে

⚫ধরুন,নফল আর মান্নতের রোজার নিয়ত একসাথে করে ফেলেছিলাম।এখন এই দুটো তো একসাথে হয় না।এমতাবস্থায় কোন রোজাটি হবে?

⚫ইন শা আল্লাহ বললে কি মান্নতের রোজা ভাঙা যায়?গেলে এটি কি আবার রাখতে হবে?

⚫নফল রোজা ভাঙলে কি আবার রাখতে হয়?সোমবার বৃহস্পতিবারের রোজা রেখে আবার ভেঙে ফেললে?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আল্লাহর নামে মান্নত করার পর কাঙ্খিত বিষয় হবার পর মান্নত পূর্ণ করা জরুরী।

وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ وَلْيَطَّوَّفُوا بِالْبَيْتِ الْعَتِيقِ [٢٢:٢٩]

    তারা যেন তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে। [সূরা হজ্জ-২৯]

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,

 يُوفُونَ بِالنَّذْرِ

তারা মান্নত পূরা করে’’ (ইনসানঃ ৭)

 আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন,

 وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ

 ‘‘তোমরা যা কিছু খরচ করেছো আর যে মান্নত মেনেছো, তা আল্লাহ জানেন’’ (বাকারা : ২৭০)

সহীহ বুখারীতে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন,

 من نذر أن يطيع الله فليطيعه ومن نذر أن يعصى الله فلا يعصه.

 ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মান্নত করে সে যেন তা পূরা করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে।’’ [অথাৎ মান্নত যেন পূরা না করে।’’

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، يَبْلُغُ بِهِ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، قَالَ: مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، فَقَالَ: إِنْ شَاءَ اللهُ فَقَدْ اسْتَثْنَى.

হযরত ইবেন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো কসমের বাক্য উচ্চারণ করে এবং বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ তাহলে সে তার কসম প্রত্যাহার করে নিল। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩২৫৬; সুনানে কুবরা, বাইহাকী ৭/৩৬১)

 ইমাম নববী রাহ বলেন,

 ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﻮﻭﻱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﺃﺟﻤﻊَ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀُ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻣَﻦ ﻭﻋﺪ ﺇﻧﺴﺎﻧﺎً ﺷﻴﺌﺎً ﻟﻴﺲ ﺑﻤﻨﻬﻲّ ﻋﻨﻪ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﻲ ﺑﻮﻋﺪﻩ ، ﻭﻫﻞ ﺫﻟﻚ ﻭﺍﺟﺐٌ ، ﺃﻭ ﻣﺴﺘﺤﺐّ ؟ ﻓﻴﻪ ﺧﻼﻑ ﺑﻴﻨﻬﻢ ، ﺫﻫﺐ ﺍﻟﺸﺎﻓﻌﻲُّ ﻭﺃﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻭﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭُ ﺇﻟﻰ ﺃﻧﻪ ﻣﺴﺘﺤﺐّ ، ﻓﻠﻮ ﺗﺮﻛﻪ ﻓﺎﺗﻪ ﺍﻟﻔﻀﻞ ، ﻭﺍﺭﺗﻜﺐ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻩ ﻛﺮﺍﻫﺔ ﺗﻨﺰﻳﻪ ﺷﺪﻳﺪﺓ، ﻭﻟﻜﻦ ﻻ ﻳﺄﺛﻢ . ﻭﺫﻫﺐَ ﺟﻤﺎﻋﺔٌ ﺇﻟﻰ ﺃﻧﻪ ﻭﺍﺟﺐ ، ﻗﺎﻝ ﺍﻹِﻣﺎﻡُ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﻲ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻲ : ﺃﺟﻞُّ ﻣَﻦ ﺫﻫﺐَ ﺇﻟﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺬﻫﺐ ﻋﻤﺮُ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ، ﻗﺎﻝ : ﻭﺫﻫﺒﺖِ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﺔ ﻣﺬﻫﺒﺎً ﺛﺎﻟﺜﺎً : ﺃﻧﻪ ﺇﻥ ﺍﺭﺗﺒﻂ ﺍﻟﻮﻋﺪُ ﺑﺴﺒﺐ ﻛﻘﻮﻟﻪ : ﺗﺰﻭّﺝ ﻭﻟﻚ ﻛﺬﺍ، ﺃﻭ ﺍﺣﻠﻒ ﺃﻧﻚ ﻻ ﺗﺸﺘﻤﻨﻲ ﻭﻟﻚ ﻛﺬﺍ، ﺃﻭ ﻧﺤﻮ ﺫﻟﻚ ، ﻭﺟﺐ ﺍﻟﻮﻓﺎﺀ ، ﻭﺇﻥ ﻛﺎﻥ ﻭﻋﺪﺍً ﻣُﻄﻠﻘﺎً، ﻟﻢ ﻳﺠﺐ . ﻭﺍﺳﺘﺪﻝّ ﻣَﻦ ﻟﻢ ﻳﻮﺟﺒﻪ ﺑﺄﻧﻪ ﻓﻲ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﻬﺒﺔ ، ﻭﺍﻟﻬﺒﺔ ﻻ ﺗﻠﺰﻡ ﺇﻻ ﺑﺎﻟﻘﺒﺾ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ، ﻭﻋﻨﺪ ﺍﻟﻤﺎﻟﻜﻴﺔ : ﺗﻠﺰﻡ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﻘﺒﺾ "

 উলামায়ে কেরাম এ কথার উপর একমত যে,যদি কোনো মানুষ কারো সাথে এমন কোনো বিষয়ের ওয়াদা করে যা নিষিদ্ধ নয়,তাহলে তার জন্য উচিৎ হল সেই ওয়াদাকে পূর্ণ করা। ওয়াদাকে পূর্ণ করা ওয়াজিব না মুস্তাহাব?এ সম্পর্কে অবশ্যই মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম শা'ফেয়ী ও ইমাম আবু হানিফা এবং জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে ওয়াদাকে পূর্ণ করা মুস্তাহাব।যদি সে ওয়াদাকে ভঙ্গ করে ফেলে তাহলে যেন সে উত্তমতাকে পরিত্যাগ করল,এবং শক্ত মাকরুহে তানযিহি সম্ভলিত কাজে লিপ্ত হল।কিন্তু সে আবার গোনাহগার হবে না। অন্যদিকে এক দল উলামায়ে কেরামের মতে ওয়াদাকে পূর্ণ করা ওয়াজিব। ইমাম আবু বকর ইবনুল আরাবি মালিকি রাহ বলেন,যারা উক্ত মাযহাবের প্রবক্তা তাদের মধ্যে এটা উমর ইবনে আব্দুল আযিয রাহ শীর্ষে রয়েছেন।তিনি আরো বলেন,মালিকি মাযহাবের উলামাগণ তৃতীয় আরেকটি মাযহাবকে বর্ণনা করেছেন।সেটা হল যে, যদি কেউ কাউকে বলে, তুমি বিয়ে করবে বলে ওয়াদা করো তোমাকে এই পরিমাণ মাল দেয়া হবে।অথবা তুমি ওয়াদা করো আমাকে গালি দেবে না তোমাকে এই পরিমাণ মাল দেয়া হবে ইত্যাদি বাক্য। তাহলে এমতাবস্থায় ওয়াদাকে পূর্ণ করা ওয়াজিব হবে।আর যদি স্বাভাবিক ওয়াদা হয়ে থাকে তাহলে ওয়াদাকে পূর্ণ করা ওয়াজিব না। যারা ওয়াদাকে পূর্ণ করা ওয়াজিব বলেন না তারা বলেন, যে ওয়াদা হলো হেবার সমার্থক। আর জুমহুর উলামায়ে কেরামের মতে হেবা কবজা ব্যতীত পরিপূর্ণ হয় না।তবে ইমাম মালিক রাহ এর মতে ওয়াদা কবজার পূর্বেও ওয়াজিব হয়ে যায়। (আল-আযকার-৩১৭)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১.যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজ করার মান্নত করার সাথে সাথে ইনশাআল্লাহ বলে, তাহলে তার জন্য উক্ত কাজ সম্পাদন করার পর মান্নত পূরা করা ওয়াজিব নয়। তবে কেউ চাইলে তা করতে পারে।

২. রোযা রাখা অবস্থায় পেষ্ট দিয়ে ব্রাশ করা মাকরূহে তানজিহী। আর যদি পেষ্টের ফেনা গলার ভিতরে চলে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।

মাকরূহ হবার কারণ হল, পেষ্টের মাঝে এক প্রকার তীব্র ঝাঁজ থাকে, যা মুখের ভিতর স্বাভাবিকভাবে ব্রাশ করার সময় প্রবেশ করে থাকে। তাই এটি অপছন্দনীয়। কিন্তু ফেনা ভিতরে না গেলে রোযা ভাঙ্গবে না। কিন্তু ফেনা ভিতরে চলে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। {ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৪১; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/৫১৮রদ্দুল মুহতার ২/৪১৫-৪১৬; ফাতাওয়া খানিয়া ১/২০৪; হিদায়া ১/২২০}

৩. নিজ মুখের থুথু জমা না করে গিলে ফেললে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না। ইচ্ছাকৃতভাবে থুথু জমা করে তাহা গিলে ফেলাতে রোযা মাকরুহ হবে  । তবে রোযা ভেঙ্গে যাবেনা।  (আদদুররুল মুখতার ৩/৩৬৭)। আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/13391/

৪.যদি নির্দিষ্ট দিনে রোজা রাখার মান্নত করেন তাহলে ঐ দিনে নফল রোজার নিয়ত করলেও মান্নতের রোজাই আদায় হয়ে যাবে। কেননা, কোন নির্দিষ্ট দিনের রোজা রাখার মান্নত করলে এবং সেই দিন সে রোজা রাখলে মান্নতের রোজা বলে নিয়ত করুক বা শুধু রোজা বলে নিয়ত করুক বা নফল বলে নিয়ত করুক মান্নতের রোজাই আদায় হবে।

৫.নফল রোজা শুরু করার পর তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। যদি কোন কারণে সেদিন রোজা ভেঙ্গে ফেলা হয় তাহলে পরবর্তিতে উক্ত রোজার ক্বাযা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 364 views
0 votes
1 answer 527 views
...