আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
261 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (31 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ, উস্তায। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর আশা করছি ইন শা আল্লাহ।
১.আমি আগে ফজরে নিয়মিত উঠতে পারতাম আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু সপ্তাহ তিনেক ধরে একেবারেই উঠতে পারছি না। আমার খুব ভয় লাগছে। আমি কী দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমার কোনো গুনাহ'র কারণে কী এমন হচ্ছে? এমতাবস্থায় কী করতে পারি উস্তায? কীভাবে ফজরে নিয়মিত উঠতে পারি?

২.আমি একটা প্যাডে বিভিন্ন মাসনূন আমল যেমন সকাল, সন্ধ্যার যিকর, বিভিন্ন কুরআনিক বা হাদীসে বর্ণিত দোয়া অর্থ সহ লিখে রাখি হাতের কাছে পাওয়ার জন্য, সেই সাথে কুরআনের কিছু আয়াত ও আছে যেগুলো হিফজের নিয়্যাতে লিখেছিলাম (যেমন সূরা মূলক, সূরা তীন এর কিছু আয়াত, পুরো সূরা নয়) সব মিলিয়ে ১০,১৫ আয়াত হবে। আমার প্রশ্ন হলো আমি কী এই প্যাড টা উজু ছাড়া ধরতে পারবো, আর হিফজের জন্য  এভাবে বিভিন্ন সূরার লাইন খাতা বা প্যাডে লিখতে পারবো? যেহেতু সব সময় মুসহাফ বা মোবাইল থেকে দেখা সম্ভব হয় না।

৩.আমি ভীষণ অগোছালো হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন, মনে হচ্ছে নফসের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সময় নষ্ট করি খুব, আল্ল-হুম্মাগফিরলী। উস্তায, এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার উপায় কী? কিভাবে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
৪.সাদাকাহ করতে কী হাজবেন্ডের অনুমতি লাগবে? হাজবেন্ডের অনুমতি ছাড়া কী কী কাজ করা যাবে না?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায় না করলে কি শাস্তি হবে সে সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত আছে- হজরত আবু যুহাইর উমারাহ রুওয়াইবা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বের নামাজ (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বের নামাজ (আসর) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ [মুসলিম, হাদিস নং: ১০৪৯]

 

নিম্নে ফজরের নামাজ আদায়ে সহায়ক ৫টি পরামর্শ তুলে ধরা হলো-

১. ফজরে উঠতে দৃঢ় ইচ্ছা যদি আপনি করেন, তবে কখনোই রাত জাগবেন না। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন, যাতে একদিকে আপনার ঘুমও পূর্ণ হয়, অন্যদিকে যথাসময়ে ফজরের জন্য উঠতেও পারেন। রাসূল (সা.) এশার নামাজের পরপরই ঘুমাতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিজ্ঞানও এই অভ্যাসের যথার্থতার প্রমাণ প্রকাশ করেছে।

২. বিছানায় যাওয়ার আগে অজু করে নিন। যদি আপনি পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যান, তবে ফেরেশতারা আপনার ঘুম থেকে জাগার আগ পর্যন্ত আপনার জন্য দোয়া করতে থাকবে।

৩. রাসূল (সা.) ঘুমানোর সময় ডান কাত হয়ে, ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ঘুমাতেন। রাসূল (সা.)-এর অনুকরণে ঘুমের জন্য শোয়ার এই অবস্থা একদিকে যেমন ঘুমের জন্য সহায়ক, অন্যদিকে ফজরে যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্যও কার্যকর।

৪. আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে বেশি বেশি দোয়া করুন, যাতে আল্লাহ আপনাকে যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায়ে সামর্থ্য দান করেন। আল্লাহর কাছে যদি আপনি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে পারেন, তবে আল্লাহও আপনার প্রার্থনাকে কবুল করবেন।

৫. বিছানায় যাওয়ার সময় কিছু কোরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে নিন। বিশেষ করে সূরা সাজদাহ, সূরা মুলক, সূরা ইসরা, সূরা যুমার, সূরা কাহফের শেষ চার আয়াত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

হাদীস শরীফে এসেছে

 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ أَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ  لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেন, রাসূল   আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”।

 

(মুয়াত্তা মালিক ৬৮০, কানযুল উম্মাল ২৮৩০, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার ২০৯, আল মুজামুল কাবীর ১৩২১৭, আল মুজামুস সাগীর ১১৬২, সুনানে দারেমী ২২৬৬)

 

عن عبد الله بن عمر أن رسول الله ﷺ قال:لا يمس القرآن إلا طاهر

 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ৫১২)

 

বিনা ওযুতে কোরআন পড়া যায় ; তবে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। হাদিস শরিফে এসেছে, আলী রাযি. বলেন,

 

كان رسول الله ﷺ يقضي حاجته, ثم يخرج فيقرأ القرآن ويأكل معنا اللحم, ولا يحجبه ” وربما قال لا يحجزه ” من القرآن شيء ليس الجنابة

 

রাসুলুল্লাহ পায়খানা হতে বের হয়ে কোরআন পড়তেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। গোসল ফরয হওয়া ছাড়া কোরআন হতে তাঁকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না। (মুসনাদে আহমাদ ৬৪০)

 

সুতরাং বোঝা গেল, যে মুসলমান কোরআন স্পর্শ করতে ও তা পাঠ করতে ইচ্ছুক- তাকে অবশ্যই দৈহিকভাবে পবিত্র হতে হবে। অন্যথায় তাকে গুনাহগার হতে হবে।

 

যারা অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করতে চায়, তাদের আরো একটি প্রমাণ হলোবুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কাছে যে পত্র পাঠিয়েছেন তাতে কোরআনের আয়াত লেখা হয়েছে। অথচ সে ছিল কাফির।

 

আমরা বলতে চাই, হাদিসবিশারদরা এই হাদিসের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে পত্র প্রেরণের ঘটনাটি অপবিত্র অবস্থায় কোরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ হওয়ার আগে হয়েছিল, তাই এ বিধান রহিত হয়ে গিয়েছে। (শরহে বুখারি, ইবনে বাত্তাল : ১/১৫৮)

 

কোনো কোনো হাদিসবিশারদ বলেছেন, এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোনো পত্রাদি বা অন্য কিছুতে কোরআন শরিফের আয়াত লিখলে ওই পত্রাদি অপবিত্র অবস্থায় স্পর্শ করা যাবে, যদিও আয়াত স্পর্শ করা যাবে না। এ জন্যই রাসুল (সা.) আয়াতটি লিখেছিলেন। (আল মিনহাজ : ১২/১০৮)

 

আরো জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/793

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

১.শয়তান মানুষকে সময়মত নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ধোকা দেয়। বিশেষ করে ফজরের নামাজে। নিয়মিত ফজরের ওয়াক্তে জাগ্রত হতে উপরের নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করা যেতে পারেো

 

২.শরীয়তের বিধান হলো যদি কোনো কিতাবেখাতায় বা প্যাডে কুরআনে কারীমের সাথে অন্য লিখা সংযোজিত থাকে,এবং অন্যান্য লিখার তুলনায় কুরআন বেশী থাকে,তাহলে সে কিতাবকে স্পর্শকে করা যাবে না।

 

তবে যদি কুরআনের তুলনায় অন্য লিখা বেশী থাকে,চায় সেটা তাফসীর হোক বা অন্য কিছু,তখন উক্ত কিতাব বা খাতাকে বিনা অজুতে যদিও স্পর্শ জায়েয, তবে স্পর্শ না করাই উত্তম।এবং এমতাবস্থায় ঐ কিতাব বা খাতার যে সকল স্থানে কুরআনের আয়াত অঙ্কিত রয়েছে,সরাসরি ঐ স্থানে বিনা অজুতে স্পর্শ করা কিন্তু জায়েয হবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ কিতাবকে স্পর্শ করা জায়েয হলেও সরাসরি কুরআনের আয়াতের উপর হাত রাখা যাবে না। ঐ খাতা বা বইকে মাটিতে বা নিচু জায়গায় রাখা কুরআনের আদবের পরিপন্থি। বরং তা উচু জায়গায় রাখতে হবে। সেগুলিকে সরাসরি কুরআনে শরীফের উপরে রাখা যাবে না বরং কুরআন শরীফের নিচে রাখাই উত্তম।

৩.ওয়াওয়াসা ও শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচতে কিছু আমল রয়েছে।আমল গুলি সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুনঃ https://ifatwa.info/4622/

৪. স্বামী-স্ত্রী পরস্পর অনুমতি ব্যতীত একে অন্যর সম্পত্তি থেকে কোনো প্রকার খরচ করতে পারবে না।নিজ পিতা-মাতা বা আত্মীয়-স্বজনদেরকে সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবেন না।এমনকি আল্লাহর রাহে দান-খায়রাত পর্যন্ত ও করতে পারবেন না।আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন : https://ifatwa.info/30471?show=30472#a30472


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 297 views
...