উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যায়াম বা শরীর চর্চায় কোন আপত্তি নেই। তবে শর্ত হল, এতে হারাম ও শরিয়া বিরোধী কোন কিছু থাকতে পারবে না। যেমন:
১) সৎ উদ্দেশ্য থাকা। যেমন: সুস্থাস্থ , ফিটনেস, ব্যাথা-বেদনা ও রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি, শারীরিক শক্তি অর্জন, মানসিক উদ্যম তৈরি, আল্লাহর পথে জিহাদের প্রস্তুতি, আত্মরক্ষা, শত্রুর মোকাবেলা ইত্যাদি।
২) ব্যায়ামের জন্য এমন পোশাক না পরা যাতে লজ্জা স্থান এবং শরীরের গোপন অঙ্গগুলো বাইরে দৃশ্যমান হয়। সেই সাথে বিপরীত লিঙ্গের পোশাক না পরা।
৩) ব্যায়ামের সময় সতর ও লজ্জা স্থান খোলা যাবে না।
৪) মিউজিক বা গান-বাজনার তালে তালে ব্যায়াম করা হারাম।
৫) পর পুরুষ-নারী একসাথে ব্যায়াম করা হারাম।
৬) যে সকল ব্যায়ামে শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে সেগুলো করা যাবে না।
৭) ব্যায়াম করতে গিয়ে সালাত, সিয়াম, জিকির-আজকার ইত্যাদি ইবাদতের প্রতি যেন অবহেলা প্রদর্শিত না হয়।
৮) সীমাতিরিক্ত এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যায়াম করা উচিৎ নয় যাতে তার পরিবার, পড়াশোনা বা নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় বা প্রচুর সময় অপচয় হয়।
★সুতরাং এ সকল শর্ত সাপেক্ষে কোনো মহিলা বাসায় দড়ি খেলে, তাহলে ইনশাআল্লাহ ইসলামের দৃষ্টিতে তাতে কোন আপত্তি নাই।
,
(০২) পড়ালেখায় মনযোগী না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অন্যান্য ব্যস্ততা কিংবা দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনা।
,
এগুলো অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে। পড়ালেখার জন্য একনিষ্ঠতা অপরিহার্য। অন্য সকল ব্যস্ততা পরিহার করলে ইনশাআল্লাহ মন বসতে থাকবে। আর যদি দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনার কারণে পড়ালেখার প্রতি মনোনিবেশ করতে না পারেন, তাহলে তার চিকিৎসা এই যে, আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।।
নিজেকে ও নিজের সকল বিষয়কে আল্লাহ তাআলার কাছে সোপর্দ করে ভারমুক্ত হতে হবে এবং পড়াশোনায় মগ্ন হয়ে যেতে হবে। নিম্নের দোয়াটি মুখস্থ করে মাঝে মাঝে পড়তে পারেন–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।”
হযরত আনাস রাযি. হতে বর্ণিত, রাসূল ﷺ চিন্তাযুক্ত অবস্থায় উক্ত দোয়া পড়তেন। (বুখারী ২৮৯৩)
মনে রাখবেন, মন বসে না বলে বসে থাকা রোগবৃদ্ধিতে সহযোগিতা করা ছাড়া আর কিছুই নয়। মন বসে না-এই ওয়াসওয়াসাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। মন বসালেই বসবেন, জোর করে কাজে লেগে গেলেই মন বসবে। এজন্য ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজে লেগে যাবেন।
দুই- আর মুখস্থশক্তি বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ হল-
১। গুনাহ থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ গুনাহর কারণে মুখস্থশক্তিতে দুর্বলতা আসে।
খতীব আল-জামে নামক গ্রন্থে (২/৩৮৭) ইয়াইয়া বিন ইয়াহইয়া থেকে বর্ণনা করেন যে, এক লোক মালেক বিন আনাসকে বললেন: হে আবু আব্দুল্লাহ! মুখস্তশক্তি বাড়ানোর কোন কিছু আছে কি? তিনি বলেন: যদি কোন কিছু থাকে তাহলে সেটা হল: গুনাহ পরিত্যাগ করা। যখন কোন মানুষ গুনাহ করে তখন এ গুনাহটি তাকে ঘিরে রাখে এবং গুনাহর ফলে তাকে দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা পেয়ে বসে। সে গুনাহর কারণে তার চিন্তাধারা মশগুল হয়ে থাকে। এভাবে এ দুশ্চিন্তা তার অনুভূতির উপর আধিপত্য বিস্তার করে থাকে এবং তাকে অনেক কল্যাণকর কাজ থেকে দূরে রাখে। এর মধ্যে মুখস্থশক্তি অন্যতম।
২। অধিক হারে আল্লাহর যিকির করতে হবে। যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ইত্যাদি পড়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: واذكر ربك إذا نسيت“যখন ভুলে যান তখন আল্লাহর যিকির করুন”। (সূরা কাহাফ: ২৪)
৩। কোন কোন আলেম এমন কিছু খাবারের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। যেমন- মধু ও কিসমিস খাওয়া।
ইমাম যুহরী বলেন: তুমি মধু খাবে; কারণ এটি স্মৃতিশক্তির জন্য ভাল।
তিনি আরও বলেন: যে হাদিস মুখস্ত করতে চায় সে যেন কিসমিস খায়। (খতীব আল-বাগদাদীর ‘আল-জামে’ ২/৩৯৪)
আলেমগণ আরও বলেন: অম্লজাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তির জড়তা ও মুখস্থশক্তির দুর্বলতা বাড়ায়।
,
(০৩) সালাতুস শোকর এর বিধান শরীয়তে রয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের জন্য বা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ২ রাকাত নামাজ পড়া । এটাকেই সলাতুস শোকর বলা হয়ে থাকে।
কেউ কেউ ভালো সংবাদ শুনলে শুকরিয়া আদায় করার জন্য দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এটাই হচ্ছে সালাতুস শোকর বা দুই রাকাত নফল নামাজ। এটি নফল নামাজের অতিরিক্ত কিছুই না।
এটি পড়া যাবে।
,
(০৪)
শরীয়তের বিধান হলো যে ব্যক্তি রুকু সেজদা করতে সক্ষম উক্ত ব্যক্তি বসে নামায পড়ে তাহলে উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না। কারণ রুকু সেজদা নামাযের রুকন। তা কারণ ছাড়া ছেড়ে দিলে নামায হবে না।
من فرائضها القيام فى فرض لقادر عليه وعلى السجود، الدر المختار مع رد المحتار-2/132)
এমনকি যদি কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াতে পারে না। উক্ত ব্যক্তি যদি যতটুকু সময় দাঁড়াতে পারে ততটুকু সময় দাঁড়ানোর চেষ্টা না করেই বসে নামায পড়ে, তাহলেও উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না। যতক্ষণ সময় দাঁড়াতে পারে ততক্ষণ দাঁড়াবে। তারপর যখন দাঁড়াতে অক্ষম হয়ে যাবে, তখন বসে যাবে। এমনকি যদি লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে বা হেলান দিয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে যদি নিকটে লাঠি থাকে বা হেলান দেবার সুযোগ থাকে, তাহলে লাঠিতে ভর দিয়ে বা হেলান দিয়ে হলেও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। বসবে না। যদি লাঠি বা হেলান দেয়ার সুযোগ থাকা সত্বেও অযথাই বসে নামায পড়ে তাহলেও উক্ত ব্যক্তির নামায হবে না।
তবে যদি একদম দাঁড়াতেই না পারে, বা দাঁড়ালে মাথা ঘুরে পড়ে যায়, তাহলে বসে নামায পড়ার সুযোগ রয়েছে।
وان قدر على بعض القيام ولو متكئا على عصا أو حائط قام لزوما وما قدر ما يقدر ولو قدر آية أو تكبيرة على المذهب لأن البعض معتبر بالكل، (الدر المختار مع رد المحتار-2/267)
যার সারমর্ম হলো যদি এক আয়াত পড়ার সমান সময়ও দাড়াতে সক্ষম হয়,তাহলে সে দাড়াবে।
,
★★সুতরাং উপরে উল্লেখিত নিয়মের ভিত্তিতে কেহ যদি বসে নামাজ পড়ার অনুমতি পায়,তাহলে তার জন্য প্রশ্নে উল্লেখিত কাজ করা জায়েজ আছে।
এর জন্য তার ছওয়াবের কোনো কমতি হবেনা।
তবে যদি সে অনুমতি না পায়,তাহলে তার নামাজই হবেনা।