আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
367 views
in সালাত(Prayer) by (34 points)
❝আসসালামু আলাইকুম❞

আমি বর্তমানে কিছু সমস্যা ফেস করছি।
১. প্রায় নামাজ কাজা করি। আগে এমন হত না। এখন প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়। নামাজ কাজা হলে ভিষণ মানসিক অস্থিরতা তে ভুগি। নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। আর কাজা করবো না বলেও পরে কাজা করে ফেলি।

২. নামাজের মোনাজাতে কিছু চাইতে ইচ্ছা করে না। এমনে চাই কিন্তু জায়নামাজ এ বসলে হাত তুলে কিছু চাইতে ইচ্ছা করে না। এখন আর মোনাজাতেও তেমন কান্না আসে না

৩. নামাজে মনযোগ দিতে পারি না। মাঝে মাঝে নামাজে দাড়ালে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নামাজ পড়তে কষ্ট হয়।

৪. বিপদে পড়লে দোয়া করার সময় মনে হয় আল্লাহ মনে হয় আমাকে খারাপ ভাববে আমি সুখের সময় দোয়া না করে দুঃখের সময় দোয়া করতে আসছি।

৫. প্রায় মনে হয় আমি আল্লাহ থেকে, দ্বীন থেকে দূরে সরে গেছি।

এসকল সমস্যা থেকে পরিত্রানের উপায় বলে দিন প্লিজ।

~ জাযাকাল্লাহু খয়রন ~

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য গ্রহণ করা সম্ভব। এই ইবাদত আল্লাহর সঙ্গে কথা বলার অনন্য একটি মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। এ কারণে আমরা যতো বেশি ব্যস্তই থাকি না কেন, আল্লাহর দরবারে দিনে-রাতে পাঁচবার হাজিরা দেয়ার সময় অবশ্যই বের করতে হবে।

একজন মুসলিম এবং কাফেরের মধ্যকার প্রধান পার্থক্য হচ্ছে নামাজ। আব্দুল্লাহ ইবনে শাকিক (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবীরা (রা.) নামাজ ছাড়া অন্য কোনো আমল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরি মনে করতেন না। (তিরমিজি: ২৬২২)

এতোকিছু জানার পরও অনেকের মধ্যে নামাজ পড়ার ব্যাপারে অনিহা দেখা দেয়। আসলে এসবই শয়তানের প্ররোচনা।

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻗﺎﻝ : ( ﻳَﺄْﺗِﻲ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﺃَﺣَﺪَﻛُﻢْ ﻓَﻴَﻘُﻮﻝُ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﻛَﺬَﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﻘُﻮﻝَ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻖَ ﺭَﺑَّﻚَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺑَﻠَﻐَﻪُ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﻌِﺬْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻟْﻴَﻨْﺘَﻪِ ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﻣﺴﻠﻢ : ( ﺁﻣﻨﺖ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻠﻪ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,শয়তান তোমাদের কারো নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করে, এটা কে বানিয়েছে?ওটা কে বানিয়েছে? শেষ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে, খোদা-কে বানিয়েছে? যখন এমন অবস্থায় কেউ পতিত হবে,সে যেন আল্লাহর নিকট পানাহ চায়।এবং সাথে সাথে সে যেন উক্ত বিষয়ে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকে।এক বর্ণনায় এসেছে সে যেন আ'মানতু বিল্লাহি ওয়া রুসুলিহি পড়ে নেয়।(সহীহ বোখারী-৩১০২,সহীহ মুসলিম-১৩৪)

 

হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে অন্য এক বর্ণনায় এসেছে,

ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ( ﺟَﺎﺀَ ﻧَﺎﺱٌ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺴَﺄَﻟُﻮﻩُ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﺠِﺪُ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻳَﺘَﻌَﺎﻇَﻢُ ﺃَﺣَﺪُﻧَﺎ ﺃَﻥْ ﻳَﺘَﻜَﻠَّﻢَ ﺑِﻪِ ، ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺪْ ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻩُ ؟ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻧَﻌَﻢْ ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﺻَﺮِﻳﺢُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ )

কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন,আমাদের অন্তরে অনেক সময় মন্দ চিন্তাভাবনা চলে আসে।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,এটা কি সম্ভব?তারা বলল, জ্বী হ্যা।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, মাঝেমধ্যে এমন সন্দেহ মনে উঁকি দেয়াই হল, কামিল ঈমানের পরিচায়ক।(সহীহ মুসলিম-১৩২)

 

ইমাম নববী রাহ উক্ত হাদীসের ব্যখ্যায় লিখেন,

ﻣﻌﻨﺎﻩ ﺃﻥ ﺍﻟﺸﻴﻄﺎﻥ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﻮﺳﻮﺱ ﻟﻤﻦ ﺃﻳﺲ ﻣﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻓﻴﻨﻜﺪ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﺎﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ؛ ﻟﻌﺠﺰﻩ ﻋﻦ ﺇﻏﻮﺍﺋﻪ ، ﻭﺃﻣﺎ ﺍﻟﻜﺎﻓﺮ : ﻓﺈﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻪ ﻣﻦ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ، ﻭﻻ ﻳﻘﺘﺼﺮ ﻓﻲ ﺣﻘﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ، ﺑﻞ ﻳﺘﻼﻋﺐ ﺑﻪ ﻛﻴﻒ ﺃﺭﺍﺩ ، ﻓﻌﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﻣﻌﻨﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ : ﺳﺒﺐ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ : ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﺃﻭ ﺍﻟﻮﺳﻮﺳﺔ ﻋﻼﻣﺔ ﻣﺤﺾ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﺍﺧﺘﻴﺎﺭ ﺍﻟﻘﺎﺿﻲ ﻋﻴﺎﺽ ...

অর্থাৎ শয়তান সে ব্যক্তিকেই প্ররোচনা দেয়,যাকে গোমরাহ করতে সে নিরাশ হয়ে যায়।সে কাউকে গোমরাহ করতে নিরাশ হয়ে গেলে সর্বশেষে সে মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিতে চায়।

আর কাফিরের নিকট শয়তান যেকোনো থেকে যেহেতু আসতে পারে,তাই কাফিরকে প্ররোচনা দেয়ার কোনো প্রয়োজন তার থাকে না।কেননা সে যেকোনো সময় তার ইচ্ছামত কাফিরকে ব্যবহার করতে পারে।সুতরাং হাদীসের অর্থ হলো এই যে,ঈন্তরে ঈমানের দানা থাকার দরুণই শয়তান ঈমানদারদেরকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। এ বিষয়ে এটাই কাযী ঈয়ায রাহ এর পছন্দনীয় ব্যাখ্যা।(আল-মিনহাজ্ব-২/১৫৪)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

চলুন জেনে নেয়া যাক অনিহা কাটিয়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করার কিছু উপায়-

১. নামাজে যা পাঠ করা হয় তার অর্থ জানা:

নামাজে পাঠ করা সুরা এবং অন্যান্য দোয়ার অর্থ জানা একদিকে যেমন নামাজে মনোনিবেশ করাকে সহজ করে তোলে পাশাপাশি নামাজের সঙ্গে মুসল্লির একটি সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তাই নামাজে সচরাচর পাঠ করা সুরা এবং দোয়াগুলোর অর্থ জেনে নিতে হবে যাতে নামাজ আমাদের জন্য অন্তঃসারশূন্য না হয়। এতে করে নামাজ আদায়ের প্রতি কোনো অনীহা থাকলে তা দূর হয়ে যাবে।

২. দৈনন্দিন কাজসমূহের সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা:

প্রতিটি দিন শুরু করার আগে ওই দিনের জন্য একটি সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা তৈরি করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, নামাজের সময়গুলোতে যেনো কোনো কাজ না থাকে। স্কুল-কলেজে, অফিসে অথবা মার্কেটে কিংবা পরিবার পরিজনের সঙ্গে কোথাও বেড়াতে গেলে, সবক্ষেত্রেই নামাজের জন্য আগে থেকেই আলাদা করে সময় নির্ধারণ করে রাখতে হবে।

৩. সর্বদা নামাজের জন্য প্রস্তুত থাকা:

কোনো কাজে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে সঙ্গে করে জায়নামাজ, হিজাব এবং নামাজের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে যেতে হবে, যাতে করে এগুলোর কোনো একটি না থাকাটা নামাজ বাদ দেয়ার কারণ/অজুহাত না হতে পারে। নামাজ আদায়ের জন্য সবসময় শরীর পবিত্র রাখতে হবে।

৪. মোবাইলে অ্যালার্ম সেট করা:

বর্তমানে এমন অনেক অ্যাপ পাওয়া যায় যেখানে আপনার স্থানীয় সময়ে নামাজের সময় দেখাবে এবং নামাজের সময় হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আজান শুরু হয়ে যাবে। এ ধরনের অ্যাপ সময়মত নামাজ আদায় করার জন্য বেশ কার্যকর। আর যদি এ রকম কোনো অ্যাপ খুঁজে না পান তাহলে অন্তত নিজের কাছে থাকা ফোনে নামাজের সময়গুলোতে অ্যালার্ম সেট করে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার ব্যবহৃত ফোনটি সময়মত সালাত আদায়ের জন্য একটি চমৎকার রিমাইন্ডারে পরিণত হবে।

৫. প্রতিদিনের নামাজের জন্য একটি চেকলিস্ট তৈরি করা

দিন শেষে আপনি যে নামাজগুলো আদায় করলেন, সেগুলোতে টিক চিহ্ন দিন। এতে করে সালাত আদায়ে নিয়মিত হতে আপনার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে। কোনো সালাত মিস হয়ে গেলে তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে ও এর প্রতিকার করতে হবে।

৬. দোয়া করা

সবসময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে যেনো আল্লাহ তায়ালা নামাজকে আপনার দৈনন্দিন কাজের অংশ বানিয়ে দেন। নিয়মিত নামাজ আদায়ের জন্য কোনো রুটিন বানালে আপনি যেনো সেই রুটিন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারেন, সেজন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। সকল প্রকার গোনাহ থেকে তওবা করতে হবে ও বেশী বেশী ইস্তেগফার পড়তে হবে। শয়তান আপনাকে আল্লাহ থেকে দূরে সরে সরে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কুমন্ত্রণা দেওয়ার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। ওয়াসওয়াসা থেকে বাচার আমল জানতে ভিজিট করুন:  https://ifatwa.info/30681/?show=30681#q30681


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 278 views
...