সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্বঃ-
সন্তান জন্মের পর প্রথম সুন্নাত কাজ হলো ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেওয়া।
অর্থবহ নাম রাখা।
শিশুর জন্মের সপ্তম দিন আকিকা করা,এটি সুন্নত।
মাতা-পিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হক হলো পুত্রসন্তানের খতনার ব্যবস্থা করা।
মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব হলো স্বীয় সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষা দান করা। মহানবী (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর দ্বিনি জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। (ইবন মাজাহ, বায়হাকি, মিশকাত পৃষ্ঠা ৩৪)
সন্তানকে নম্রতা, ভদ্রতা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া মাতা-পিতার প্রধান দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেছেন, পিতা স্বীয় সন্তানকে শিষ্টাচার অপেক্ষা উত্তম কিছু শিক্ষা দিতে পারে না। (তিরমিজি, মিশকাত পৃষ্ঠা-৪২৩)।
শরীয়তের বিধান হলো বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলে সন্তানের ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব।
আর মেয়ে সন্তানকে বিবাহ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব।
কিন্তু ছেলে সন্তান বালেগ হওয়ার পরেও যদি কেহ অসুস্থতা,পাগল, ইলমে দ্বীন শিক্ষায় লিপ্ত থাকা ইত্যাদি কারনে যদি সম্পদ উপার্জন না করতে পারে,তাহলেও তার ভরনপোষণ দেওয়াও পিতার উপর ওয়াজিব বা জরুরি।
(নাজমুল ফাতওয়া ৫/২১৫)
আরো জানুনঃ
মাতা-পিতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানকে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি ইবাদতে অভ্যস্ত করা। তাছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, অপরকে সালাম দেওয়া এবং সুন্নত তরিকা মোতাবেক চলার প্রশিক্ষণ দেওয়া।
হযরত আমর বিন শুয়াইব তার সুত্রে বর্ণনা করেন,
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺷُﻌَﻴْﺐٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻴﻪِ ﻋَﻦْ ﺟَﺪِّﻩِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﻣُﺮُﻭﺍ ﺃَﻭْﻟَﺎﺩَﻛُﻢْ ﺑِﺎﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﻭَﻫُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀُ ﺳَﺒْﻊِ ﺳِﻨِﻴﻦَ ، ﻭَﺍﺿْﺮِﺑُﻮﻫُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀُ ﻋَﺸْﺮٍ ، ﻭَﻓَﺮِّﻗُﻮﺍ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﻀَﺎﺟِﻊِ ) .
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানাদিকে নামাযের আদেশ দাও যখন তারা সপ্ত বর্ষে উপনীত হয়।নামায না পড়ার ধরুণ তাদেরকে প্রহার করো যখন তারা দশম বৎসরে উপনীত হয়।এবং সাথে সাথে তাদের শয়নস্থল কে পৃথক করে দাও।(সুনানু আবি-দাউদ-৪১৮)
সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা মাতা-পিতার অন্যতম দায়িত্ব।
عَنْ أَبِىْ سَعِيدٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ قَالَا : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : مَنْ وُلِدَ لَه وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَه وَأَدَبَه فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إِثْمًا عَلٰى أَبِيْهِ
আবূ সা‘ঈদ ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কোনো সন্তান (ছেলে বা মেয়ে) জন্মগ্রহণ করে, সে যেন তার উত্তম নাম রাখে। আর (উত্তম) আচার-আচরণ শিক্ষা দেয় এবং যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হয় তখন যেন তার বিয়ে দেয়। বয়ঃপ্রাপ্তির পর যদি বিয়ে না দেয় এবং ঐ সন্তান যদি কোনো পাপ করে, তবে ঐ পাপের বোঝা পিতার ওপর বর্তাবে।
(শু‘আবুল ঈমান ৮২৯৯,মিশকাত ৩১৩৮)
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؓ عَنْ رَسُوْلِ اللّٰهِ ﷺ قَالَ : «فِى التَّوْرَاةِ مَكْتُوبٌ : مَنْ بَلَغَتِ ابْنَتُهُ اثْنَتَىْ عَشْرَةَ سَنَةً وَلَمْ يُزَوِّجْهَا فَأَصَابَتْ إِثْمًا فَإِثْمُ ذٰلِكَ عَلَيْهِ».
‘উমার ইবনুল খত্ত্বাব ও আনাস ইবনুল মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ) তাওরাত কিতাবে লেখা আছে যে, যখন কারো কন্যা সন্তান বারো বছর বয়সে পৌঁছে, আর সে যদি তার বিয়ে না দেয়, আর তার দ্বারা যদি কোনো পাপকর্ম হয়, তবে ঐ পাপকর্ম পিতার ওপর বর্তাবে।
(শু‘আবুল ঈমান ৮৩০৩,মিশকাত ৩১৩৯)
নিজ মেয়ে তালাক প্রাপ্তা হলে পিতা সাধ্য অনুযায়ী তাকে আবার বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
সামর্থ অনুযায়ী তার ভরনপোষন চালানোর চেষ্টা করবে।
ইসলাম বিধবা নারীর দায়িত্ব গ্রহণকারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেছে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ও দিনে সিয়ামকারীর মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)।