আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
281 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (9 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম শাইখ
কেউ যদি কথা কথা আল্লাহর নামে কসম করে তার ও কি কাফফারা দিতে হবে।

আর কেউ যদি মেসেজে লিখে আল্লাহর কসম তোমার সাথে কথা বললে আমি আমার হাত কেটে ফেলবো, পরে কি কথা বললে তাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-

(০১)
কথায় কথায় এহেন কসম করা থেকে শরীয়তে নিষেধ করা হয়েছে।
,
সহীহ বুখারীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

«خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِى ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَجِىءُ قَومٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ»

‘‘সর্বোত্তম মানুষ হচ্ছে আমার যুগের মানুষ। এরপর উত্তম হলো তাদের পরবর্তীতে আগমনকারীগণ। তারপর উত্তম হলো যারা তাদের পরবর্তীতে আসবে । অতঃপর এমন এক জাতির আগমন ঘটবে, যাদের কারো সাক্ষ্য কসমের আগেই হয়ে যাবে, আবার কখনো কসম সাক্ষ্যের আগেই হয়ে যাবে’’।
সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ২৬৫২।

সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

«ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ أُشَيْمِطٌ زَانٍ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ، وَرَجُلٌ جَعَلَ اللَّهَ بِضَاعَتَهُ و لا يَشْتَرِي إِلا بِيَمِينِهِ وَلا يَبِيعُ إِلا بِيَمِينِهِ»

‘‘তিন শ্রেণীর লোকদের সাথে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ হতে পবিত্র করবেন না; বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। তারা হচ্ছে, বৃদ্ধ ব্যভিচারী, অহংকারী গরীব, আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে ব্যবসার পণ্য বানিয়েছে। আল্লাহর নামে কসম করা ব্যতীত সে পণ্য ক্রয় করেনা, কসম করা ব্যতীত পণ্য বিক্রিও করেনা’’। ইমাম তাবরানী সহীহ সনদে এই হাদীছ বর্ণনা করেছেন।
সহীহুত্ তারগীব ও তারহীব, হাদীছ নং- ১৭৮৮।

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
কথায় কথায় কসম নিষেধ,তারপরেও কেহ যদি নিম্নোক্ত পদ্ধতিতে কসম করে,তাহলে সে কসম ভেঙ্গে ফেললে অবশ্যই তার কাফফারা দিতে হবে।
,   
আল্লাহর নাম নিয়ে অথবা কুর'আন বা আল্লাহর গুন বলে  ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা বা না করার শপথ করা। এ রকম শপথকে 'ইয়ামিনে মুনআকিদ' বা কার্যকর শপথ বলা হয়। এ শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারা ওয়াজিব হবে। এমনকি কোনো কোনো অবস্থায় গুনাহও হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَكِنْ يُؤَاخِذُكُمْ بِمَا عَقَّدْتُمُ الْأَيْمَانَ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ذَلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آَيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘‘তোমরা যে সমস্ত অর্থহীন কসম খেয়ে ফেলো, সে সবের জন্য আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না। কিন্তু তোমরা জেনেবুঝে যেসব কসম খাও সেগুলোর উপর তিনি অবশ্যই তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। এ ধরণের কসম ভেঙ্গে ফেলার কাফ্ফারা এই যে, দশজন মিসকীনকে এমন মধ্যম মানের খাদ্য প্রদান করবে; যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে খেতে দিয়ে থাকো অথবা তাদেরকে কাপড় পরাও অথবা একজন ক্রীতদাস মুক্ত করে দিবে। আর যে ব্যক্তি এর সামর্থ রাখে না, সে তিন দিন রোযা রাখবে। এ হচ্ছে তোমাদের কসমের কাফ্ফারা যখন শপথ করে তা ভেঙ্গে ফেলো। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ সংরক্ষণ করো। এমনিভাবে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য স্বীয় নিদর্শনাবলী বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও’’। (সূরা মায়েদাঃ ৮৯)

আরো জানুনঃ  

,
(০২) 
★ফুকাহায়ে কেরামগন বলেছেনঃ-
   
 أن اليمين لا تنعقد بمجرد الكتابة من غير نية، وأن كتابة اليمين تعتبر من الكناية، فإذا كتب اليمين بالله من غير نيته لم ينعقد يمينه.

جاء في الموسوعة الفقهية عند ذكر شروط اليمين: الشَّرِيطَةُ الرَّابِعَةُ التَّلَفُّظُ بِالْيَمِينِ، فَلاَ يَكْفِي كَلاَمُ النَّفْسِ عِنْدَ الْجُمْهُورِ، وَقَال الشَّافِعِيَّةُ: إِنَّ الْكِتَابَةَ لَوْ كَانَتْ بِالصَّرِيحِ تُعْتَبَرُ كِنَايَةً. اهـ مختصرا. وجاء في أسنى المطالب: الْيَمِينَ بِاَللَّهِ إنَّمَا تَكُونُ بِاسْمِهِ أَوْ صِفَتِهِ فَلَا تَنْعَقِدُ بِالْكِتَابَةِ. اهـ. ومثله ما جاء في قواعد ابن رجب: الْيَمِينَ بِاَللَّهِ لَا تَصِحُّ بِالْكِتَابَةِ
সারমর্মঃ
শুধু লিখিত কসম,এটি কসম আকারে সংগঠিত হবেনা নিয়ত ব্যাতিত।
লিখিত কসমকে কেনায়ার অন্তর্ভুক্ত ধরা হবে।
সুতরাং কেহ যদি আল্লাহর নামে কোনো কসম নিয়ত ছাড়াই লিখে, তাহলে তার এই কসম,কসম আকারে সংগঠিত হবেনা 
মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে আছেঃ 
কসমের ক্ষেত্রে চার নং শর্ত হলো শাব্দিক ভাবে উচ্চারণ করা। 


جاء في الموسوعة الفقهية الكويتية (7 / 267): "وقال الشافعية [عن اليمين] : إن الكتابة لو كانت بالصريح : تعتبر كناية " .
সারমর্মঃ
মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ গ্রন্থে আছেঃ 
শাফেয়ী রহঃ বলেন, নিশ্চয়ই লিখিত কসম যদি স্পষ্ট আকারে হয়ে থাকে,তাহলে সেটি কেনায়া হিসেবে গ্রহনযোগ্য হবে।

وقال مصطفى الرحيباني الحنبلي في "مطالب أولي النهى" (6/373) :
"تنعقد الْأَيْمَانِ بِالْكِتَابَةِ الْمَنْوِيَّةِ ، كَالطَّلَاقِ وَالْعَتَاقِ" 
وحكم الكناية في اليمين ، أن الحالف إذا نوى بها اليمين فهي يمين .
সারমর্মঃ
লিখিত কসম সংগঠিত হবে নিয়ত দ্বারা।
 
قال في "أسنى المطالب" (4/244) :
"(فَكِنَايَةٌ) : إنْ نَوَى بِهِ الْيَمِينَ ؛ فَيَمِينٌ
সারমর্মঃ
কেনায়া হলো যদি কেহ তার দ্বারা কসমের নিয়ত করে,তাহলে এটি কসম হবে।

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
উল্লেখিত মেসেজ দ্বারা যদি (যে মেসেজ লিখে পাঠিয়েছে) সেই ব্যাক্তি কসমের নিয়ত করে থাকে,তাহলে এটি কসম হবে।
অন্যথায় ( কসমের নিয়ত না করে থাকলে) কসম হবেনা।

যদি উক্ত মেসেজ লেখার সময় কসমের নিয়ত করেই থাকে,তাহলে সে কসম ভেঙ্গে ফেলবে।
তারপর কাফফারা দিবে।
কেননা এটি গুনাহের কাজের কসম।
যাহা শরীয়তে জায়েজ নেই।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا الْمُنْذِرُ بْنُ الْوَلِيدِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بَكْرٍ، حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ الْأَخْنَسِ، عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا نَذْرَ وَلَا يَمِينَ فِيمَا لَا يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ، وَلَا فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلَا فِي قَطِيعَةِ رَحِمٍ وَمَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا فَلْيَدَعْهَا وَلْيَأْتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ فَإِنَّ تَرْكَهَا كَفَّارَتُهَا، قَالَ أَبُو دَاوُدَ: الْأَحَادِيثُ كُلُّهَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ إِلَّا فِيمَا لَا يَعْبَأُ بِهِ

‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম সন্তান যে বস্তুর মালিক নয় তাতে তার কোনো মানত নেই শপথও নেই; আল্লাহর নাফরমানীর কাজে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয়ে কোনো মানত গ্রহণযোগ্য হবে না। কোনো লোক কসম খাওয়ার পর তার বিপরীতে কল্যাণ দেখতে পেলে সে তার শপথ বর্জন করে অধিকতর কল্যাণকর কাজটি করবে। পূর্বের শপথ বর্জন করাই শপথ ভঙ্গের কাফফারাহ গণ্য হবে।
আবু দাউদ ৩২৭৪



(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...