জবাব
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
(০১)
কারমা বলতে সহজ কথায়, কর্মফল।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
ظَهَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی النَّاسِ لِیُذِیۡقَهُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا لَعَلَّهُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ ﴿۴۱﴾
মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।
অন্য এক আয়াতে এই বিষয়বস্তু এভাবে বর্ণিত হয়েছে, “তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা: ৩০]
,
উদ্দেশ্য এই যে, এই দুনিয়ায় বিপদাপদের সত্যিকার কারণ তোমাদের গোনাহ; যদিও দুনিয়াতে এসব গোনাহের পুরোপুরি প্রতিফল দেয়া হয় না এবং প্রত্যেক গোনাহর কারণেই বিপদ আসে না। বরং অনেক গোনাহ, তো ক্ষমা করে দেয়া হয়। তবে এটা সত্য যে, সমস্ত গোনাহর কারণে বিপদ আসে না বরং কোন কোন গোনাহর কারণেই বিপদ আসে। দুনিয়াতে প্রত্যেক গোনাহর কারণে বিপদ আসলে একটি মানুষও পৃথিবীতে বেঁচে থাকত না। ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা আন-নাহল: ৬১]
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন।” [সূরা ফাতির: ৪৫] বরং অনেক গোনাহ তো আল্লাহ মাফই করে দেন। যেগুলো মাফ করেন না, সেগুলোরও পুরোপুরি শাস্তি দুনিয়াতে দেন না; বরং সামান্য স্বাদ আস্বাদন করান।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কেউ যদি পৃথিবীতে কারো ক্ষতি করে তাহলে কয়েক গুণ ক্ষতি সে পৃথিবীতে পাবেই,এমন কোনো কথা ইসলামে নেই।
তবে তার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যদি বান্দার হক দুনিয়াতে মাফ করে নেওয়া না হয়,তাহলে আখেরাতে অবশ্যই এর শাস্তি পেতে হবে।
কেউ খারাপ কিছু করলে তার সাথে খারাপ কিছু আবার ফিরে আসবেই, আর ভাল কিছু করলে ভালটা ফিরে আসবেই।
এমনটি ১০০% হবেই মর্মে ইসলামে নেই।
তবে হতে পারে।
,
(০২)
বিগ ব্যাং হলো ইংরেজি শব্দ, যার অর্থ হলো বিকট শব্দ। এই বিগ ব্যাং থিওরির মূল কথা হলো, আজ থেকে কোটি কোটি বছর আগে সৌরজগতে একদিন হঠাৎ নক্ষত্রে নক্ষত্রে সংঘর্ষ হয়, এতে একটি বিকট শব্দ হয়। এই বিকট শব্দের মাধ্যমে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রের টুকরো থেকেই এই পৃথিবীর সৃষ্টি। স্টিফেন হকিংয়ের বিগ ব্যাং থিওরি আজ সর্বমহলে স্বীকৃত। এ থিওরি মতে মহাবিশ্বের সকল দৃশ্য-অদৃশ্য গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টির শুরুতে একবিন্দুতে পুঞ্জীভূত ছিল। অতঃপর একটা মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে এরা চারদিকে ছড়িয়ে যেতে থাকে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰہُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۳۰﴾
‘যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে তারা কি দেখে না যে আসমানসমূহ ও জমিন মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে, তারপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সব কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে; তবুও কি তারা ঈমান আনবে না?’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩০)
★আয়াতটি আমাদেরকে একেবারে পরিষ্কারভাবে বলছে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রেরা একসময় এক জায়গায় পুঞ্জীভূত ছিল।
* رتق শব্দের অর্থ বন্ধ হওয়া, আর فتق এর অর্থ খুলে দেয়া। উভয় শব্দের সমষ্টি رتق ও فتق কোন কাজের ব্যবস্থাপনা ও তার পূর্ণ ক্ষমতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে আয়াতের অনুবাদ এই দাঁড়ায় যে, আকাশ ও পৃথিবী বন্ধ ছিল। আমি এদেরকে খুলে দিয়েছি। সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন এর অর্থ হচ্ছেঃ আসমান ও যমীন পরস্পর মিলিত ছিল তারপর আমরা সে দুটিকে পৃথকীকরণ করেছি। হাসান ও কাতাদা রাহেমাহুমাল্লাহ বলেনঃ এতদুভয়ের মধ্যে বাতাস দ্বারা পৃথকীকরণ করেছেন। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
মোটকথাঃ এ শব্দগুলো থেকে যে কথা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, বিশ্ব-জাহান প্রথমে একটি পিণ্ডের আকারে ছিল। পরবর্তীকালে তাকে পৃথক পৃথক অংশে বিভক্ত করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, নীহারিকা ইত্যাদি স্বতন্ত্র জগতে পরিণত করা হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে বন্ধ হওয়ার অর্থ আকাশের বৃষ্টি ও মাটির ফসল বন্ধ হওয়া এবং খুলে দেয়ার অর্থ এতদুভয়কে খুলে দেয়া। [কুরতুবী] তখন এ আয়াতের অর্থে আরও এসেছে, “শপথ আসমানের, যা ধারণ করে বৃষ্টি, এবং শপথ যমীনের, যা বিদীর্ণ হয়”। সূরা আত-তারেক: ১১-১২]
★এই বিগ ব্যাং থিওরির সিদ্ধান্ত হলো ‘অনবরত দূরে সরে যাওয়া গ্রহ নক্ষত্রগুলো একসময় আবার কাছাকাছি আসা শুরু করবে এবং সময়ের ব্যাবধানে সব একত্রে মিলিত হয়ে একটা পিণ্ডে পরিণত হবে।’
আর পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
یَوۡمَ نَطۡوِی السَّمَآءَ کَطَیِّ السِّجِلِّ لِلۡکُتُبِ ؕ کَمَا بَدَاۡنَاۤ اَوَّلَ خَلۡقٍ نُّعِیۡدُہٗ ؕ وَعۡدًا عَلَیۡنَا ؕ اِنَّا کُنَّا فٰعِلِیۡنَ ﴿۱۰۴﴾
‘সেই দিন আকাশমণ্ডলীকে গুটিয়ে ফেলব, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত দফতর’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৪)
ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ ہِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَہَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا اَوۡ کَرۡہًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیۡنَا طَآئِعِیۡنَ ﴿۱۱﴾
তারপর তিনি আসমানের প্রতি ইচ্ছে করলেন, যা (পূর্বে) ছিল ধোঁয়া। অতঃপর তিনি ওটাকে (আসমান) ও যমীনকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা আসলাম অনুগত হয়ে।
(সুরা হামিম সাজদাহ ১১)