بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
*সুরা ফাজর এর ১৪ নম্বর
আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ رَبَّكَ لَبِالْمِرْصَادِ
অর্থাৎ নিশ্চয় তোমার
পালনকর্তা ঘাঁটিতে সদা সতর্ক থাকেন’। رَصَد يَرْصُد رَصَدًا ওঁৎ পেতে থাকা’। সেখান থেকে مَرصد ও مِرصاد অর্থ সদা সতর্ক দৃষ্টি
রাখার ঘাঁটি যা সাধারণতঃ কোন উঁচু স্থানে স্থাপিত হয়ে থাকে’। আল্লাহপাক নিজেকে সেই
ঘাঁটিতে অবস্থানকারী বলেছেন। এর দ্বারা তিনি বান্দাকে সাবধান করেছেন। হাসান বাছরী ও
ইকরিমা বলেন, এর অর্থ يرصُدُ
عَملَ كلِّ إنسان حتى يجازيه به ‘তিনি প্রতিটি মানুষের কাজের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন, যাতে তাকে যথার্থ
প্রতিদান ও প্রতিফল দিতে পারেন’ (কুরতুবী)।
ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ يَسْمَعُ وَيَرَى ‘তিনি শোনেন ও দেখেন’। অর্থাৎ আল্লাহ
বান্দার সকল গোপন ও প্রকাশ্য কথা ও কাজ দেখেন ও শোনেন ও সে হিসাবে তার প্রতিফল দিয়ে
থাকেন। ইমাম কুরতুবী জনৈক আরব থেকে বর্ণনা করেন, একবার তাকে বলা হ’ল أين ربك ‘তোমার প্রভু কোথায়?’ জওয়াবে তিনি বলেন, لبالمرصاد ‘ঘাঁটিতে’। আমর ইবনু ওবায়েদ হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে,
একবার তিনি এই সূরাটি আববাসীয় খলীফা আবু জা‘ফর মানছূরের (১৩৬-১৫৭হিঃ/৭৫৪-৭৭৫
খৃঃ) সামনে পাঠ করেন। যখন তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন, তখন মানছূর
বলে ওঠেন يا
ابا جعفر ‘হে আবু জাফর’! যামাখশারী বলেন, মানছূরের এই চিৎকার ধ্বনির মধ্যে তীব্র ভয় প্রকাশ
পায়। কেননা এর মধ্যে অহংকারী শাসকদের জন্য দারুণ ধমকি রয়েছে (কুরতুবী)
সুতরাং উক্ত আয়াতে পুলসিরাত নিয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি।
*পুলসিরাত শব্দ নিয়ে সরাসরি না বললেও মহান আলাহ
তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন :
وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلَىٰ
رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا
তোমাদের প্রত্যেকেই
তা (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে; ওটা তোমার রবের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। (সূরা : মারিয়াম,আয়াত-৭১) আলোচ্য আয়াতে পুলসিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
পুলসিরাত অতিক্রম করা সম্পর্কে রাসূলুলাহ সা: বলেছেন, ‘সেদিন কেউ বিদ্যুতের
গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ ঘোড়ার গতিতে,
কেউ আরোহীর গতিতে, কেউ দৌড়িয়ে, আবার কেউ হাঁটার গতিতে (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে।’ (তিরমিজি, দারেমি) উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুলাহ সা: বলেছেন, ‘জাহান্নামের ওপর একটি পুল আছে,
যা চুলের চেয়েও বেশি চিকন আর তরবারির চেয়েও বেশি ধারালো। এর ওপর লোহার
শিকল ও কাঁটা থাকবে। মানুষ এর ওপর দিয়েই গমন করবে। কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বায়ুবেগে আর কেউ উত্তম ঘোড়া ও
উটের গতিতে পুলসিরাত পার হবে। আর ফেরেশতারা বলতে থাকবে, হে প্রভু!
সহিসালামতে অতিক্রম করাও, হে প্রভু! নিরাপদে পার করাও। কেউ নাজাত
পাবে, কেউ আহত হবে, কেউ উপুড় হয়ে পড়ে যাবে
আর কেউ অধঃমুখী হয়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে।’ (মুসনাদে ইমাম আহমদ : ২৪৮৪৭)