আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
273 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (4 points)
আমার বাবার খাবারের হোটেল আছে। আমাদের সংসারের ইনকাম সোর্স এই হোটেল। ছোটবেলা থেকে বাবা একাই হোটেলের দেখাশুনা করে আসছেন। কিন্তু বর্তমানে আমার বাবার এ্যাজমার ( শ্বাসকষ্ট)  প্রব্লেম থাকায় উনি হোটেলের দেখাশুনা করতে পারেন না। আমার ছোট ভাই আছে কিন্তু ওর একার পক্ষেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকা সম্ভব হয়না। অন্য মানুষকে দিয়ে করালে টাকা পয়সা এদিক ওদিক করে ফেলে।  এমতাবস্থায় আমি পরিপূর্ণ পর্দা মেইনটেইন করে যদি হোটেলে ক্যাশিয়ার হিসেবে বসি তাহলে কি ইসলামে এটা জায়েয হবে? ব্যবসাটাই এমন যে আমি পর্দার আড়ালে গিয়ে করতে পারবো না।

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আমরা https://ifatwa.info/29198/  ফতওয়াতে উল্লেখ করেছি যে, ইসলাম নারীদেরকে কর্মসংস্থান গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তার জন্য ক্রয় বিক্রয় ব্যবসা বাণিজ্য প্রতিনিধি নিয়োগসহ যাবতীয় লেনদেনে অংশগ্রহণ করার অনুমতি আছে।যে যাবত সে এ জাতীয় কারবারে অংশগ্রহণ করে শরঈ বিধান ও আচরণ বিধির ব্যাপারে যত্নবান থাকবে ততক্ষণ তাকে এ থেকে নিবৃত্ত করার অধিকার কারো নেই। (আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়াইতিয়্যাহ ৭/৮২)

উপরোক্ত কুরআন ও হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যে, ইসলামী শরীয়ত নারী সমাজকে মানবতার সেবা ও কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। উপার্জনের জন্য কাজ করা এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে সেজন্য গৃহের বাইরে যাওয়া নারীদের জন্য নিষিদ্ধ নয়। তবে তাতে নারী-পুরুষের অবাধ মেলমেশা ও বন্ধুত্ব সখ্যতা করে ইসলামী বিধান লঙ্ঘন করা সম্পূর্ণ হারাম ও নিষিদ্ধ।

মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ.وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى  আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

যদি কারো জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় সামান বা অন্য কোন পন্থা না থাকে, তবে সাজ-সজ্জা ছাড়া পর্দার সাথে চাকুরী ও কর্মসংস্থানের উদ্দেশে বের হওয়াও নারীদের প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অন্তর্ভূক্ত। তবে শর্ত হলো সৌন্দর্য প্রকাশার্থে বের না হওয়া, বরং বোরকা বা জিলবাব তথা বড় চাদর গায়ে দিয়ে বের হওয়া। (তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৭/১৩ )

আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে,

নারীরা ৩টি শর্তে নিজ গৃহের বাইরে চাকুরি বা কাজ করতে যেতে পারবে,

(১) ألا يكون العمل معصية (২) ألا يكون عملها مما يكون فيه خلوة بأجنبي (৩) ألا تخرج لعملها متبرجة متزينة بما يثير الفتنة

অর্থ : (১) কাজটি গুনাহের না হওয়া (২) নারীর কাজটি এমন স্থানে না হওয়া যেখানে পরপুরুষের সাথে একত্রে কাজ করতে হয় (৩) কাজের জন্য এমন সাজসজ্জা সহকারে বের না হওয়া, যা ফিতনা-ফ্যাসাদের দিকে প্ররোচিত করে। (আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আলকুওয়াইতিয়্যাহ ৭/৮৩-৮৪)

মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানভী রহ. বলেন,

নারীর ভরণ-পোষণ স্বামীর দায়িত্বে। কিন্তু কোনো নারীর যদি উপার্জনে সক্ষম অভিভাবক না থাকে তাহলে নিরুপায় অবস্থায় অর্থ উপার্জনের জন্য তার কর্ম বা চাকুরি করার অনুমতি আছে। তবে এ জন্য শর্ত হল, তার ভাবগাম্ভীর্যতা এবং অনুকূল পরিবেশ ও পর্দার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরপুরুষের সঙ্গে একত্রে দায়িত্ব পালন করা জায়েয নেই। (আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৬/৩৮)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!

ইসলামের দৃষ্টিতে জরুরি প্রয়োজনে মুসলিম নারীর জন্য পর্দা রক্ষা করে দোকানদারী করা বা হালাল ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করা বৈধ। আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন। সুতরাং তা পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য তবে এ ক্ষেত্রে তাকে মুখমণ্ডল সহ পূর্ণ হিজাব পরিধান করতে হবে (অধিক অগ্রাধিকার যোগ্য অভিমত হল, মুখমণ্ডল ঢাকা ফরয) এবং ফেতনা-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সর্তক থাকতে হবে।

পরপুরুষের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলা এবং কোমল কণ্ঠ পরিহার করতে হবে।কেননা, পরিপূর্ণ পর্দা মেইটেইন করে ব্যবসা করা নারীদের জন্য যদিও জায়েয আছে কিন্তু তাদের আওয়াজও পর্দার অন্তর্ভূক্ত আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করবে না এবং পর পুরুষের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।

যদি উপরোক্ত শর্তগুলি মেনে আপনি ব্যবসা করতে চান তাহলে তা আপনার জন্য জায়েয আছে অন্যথায় তা নাজায়েয। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...