আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
295 views
in সালাত(Prayer) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ।

প্রশ্ন১:কোনো মহিলা যদি রুকু সিজদায় পুরুষদের সাথে কোনো পার্থক্য না করে আর এভাবেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে নামাজ পড়তে।তাহলে কি তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে??

প্রশ্ন২:নামাজে সিজদায় মাতৃভাষায় দু'আ করা যাবে কি?সিজদায় মনে মনে বাংলাভাষায় দু'আ করা যাবে কি?
প্রশ্ন৩:নামাজে আরবীতে মুখে সব উচ্চারণ আর মনে মনে বাংলা ভাষায় অর্থ অনুবাদ/অনুধাবন করা কি জায়েজ হবে?

প্রশ্ন৪:রুকু,সিজদাহ দীর্ঘ করতে কি করা প্রয়োজন জানতে চাই ???খুশু-খুযু কিভাবে আনতে হয় নামাজে জানতে চাই।

কখনও যদি আল্লহর কাছে নিজের সব দু'আ বলতে মন চায় তাহলে নামাজের বাহিরে কিভাবে দু'আ করলে নাজায়েজ হবেনা?তাহাজ্জদ নামাজের সিজদায় কি মনে মনে নিজের মনের যত দু'আ আছে,চাওয়া পাওয়া আছে তা কি ব্যক্ত করা কান্নাকাটি করা জায়েজ হবে আল্লহর নিকট??নাকি কুরআনে বর্ণিত দু'আ করতে হবে,মনে মনে মাতৃভাষায় দু'আ করা যাবেনা?

নামাজের বাহিরে এমনি সিজদা বনত হয়ে মাতৃভাষায় দু'আ করা যাবে/কান্নাকাটি করা যাবে?

জাঝাকাল্লাহ্ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (60,240 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। সুতরাং নারী-পুরুষ নামাজ আদায়ের মাঝেও পার্থক্য রয়েছে।

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

১. তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব র. বলেন,

 

.... أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مر على امرأتين تصليان، فقال: اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل. (كتاب المراسيل للإمام أبو داود)

 

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে ) বললেন, যখন  সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।” (কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ, হাদীস ৮০)

 

২. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,

 

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- : إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ غَفَرْتُ لَهَا . رواه البيهقي في السنن الكبرى ٢/٢٢٣ في كتاب الصلاة (باب ما يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود)، وفيه أبو مطيع البلخي وقال العقيلي فيه : كان مرجئا صالحا في الحديث.

 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন  সেজদা করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিেেয় রাখে; যা তার সতরের জন্য অধিক উপযোগী। আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম।  সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২৩, অধ্যায়: সালাত, পরিচ্ছেদ: মহিলার জন্য রুকু ও  সেজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব। আমাদের দৃষ্টিতে এটি হাসান হাদীস। আবু মুতী আল বালখীর ব্যাপারে দলিলের আলোকে উকায়লীর মন্তব্যই অগ্রগণ্য।

 

৩. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,

 

جئت النبي صلى الله عليه و سلم فقال : فساق الحديث. وفيه: يا وائل بن حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها. (رواه  الطبراني في الكبير جـ ٢٢ صـ ١٩-٢٠ )

 

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাজির হলাম। তখন তিনি  আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও)  বলেছিলেন: হে ওয়াইল ইবনে হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর  মহিলা হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী ১৯-২০/২২, এই হাদীসটিও হাসান)

 

উল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে  ভিন্ন। বিশেষত ২নং হাদীসটি  দ্বারা একথাও বোঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাাধিক উপযোগী।

 

আপনি নামাযের বাহিরে বাংলায় দু'আ করবেন, অথবা আপনি আপনার অন্তরে সেই বিশেষ বিষয়কে উপস্থিত রেখে মুজমাল দু'আ যাতে দুনিয়া আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ রয়েছে,যেমন "রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ"  কুরআন-হাদীসে বর্ণিত এমন দু'আ করতে পারবেন।

 

নফল সালাতে বাংলায় দু'আ সম্পর্কে কেউ কেউ রুখসত দিয়ে থাকেন।

 

বিস্তারিত জানুনঃ   

https://www.ifatwa.info/185

 

নামাযের সেজদায় শুধুমাত্র কুরআন-হাদীসে বর্ণিত দু'আ গুলো করা যাবে।

সেজদায় গিয়ে سبحان  ربي الأعلى 

ছাড়াও অন্যান্য দোয়া পড়া যাবে। সমস্যা নেই। কিন্তু দুনিয়াবি দোয়া বা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দুআ করা যাবে না।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় অনেক দোয়া পাঠ করতেনঃ

 

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ فِى سُجُودِهِ « اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

 

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ সেজদায় পড়তেন আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি’ কুল্লাহু দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। {তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১১২, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নং-৬৭২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-১৯৩১}

আরো জানুনঃ  

https://ifatwa.info/5044/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে নামাজ হয়ে যাবে। তবে এভাবে নামাজ পড়া ঠিক হবে না। মহিলাদের জন্য উচিৎ হলো যে, তাদেরকে হাদীসে যেভাবে নামাজ পড়তে বলা হয়েছে সেভাবে তারা নামাজ পড়বে।

 

২. নামাজে সিজদায় মাতৃভাষায় মুখে উচ্চারণ করে দু'আ করা যাবে না। তবে কেউ কেউ নফল নামাজের ক্ষেত্রে রুকসত দিয়ে থাকেন। কিন্তু মনে মনে বাংলাভাষায় অন্তরে সেই বিশেষ বিষয়কে উপস্থিত রেখে মুজমাল আরবীতে দু'আ করা যাবে।

 

৩. হ্যাঁ, নামাজে আরবীতে মুখে সব উচ্চারণ আর মনে মনে বাংলা ভাষায় অর্থ অনুবাদ/অনুধাবন করা জায়েজ হবে।

৪. রুকু,সিজদাহ দীর্ঘ করতে বেশী সময় দিবেন এবং রুকু সিজদার দোয়া পড়বেন। আর নামাজে খুশু-খুযু আনতে হলে নিজের ধ্যাণ, খেয়াল নামাজে রাখবেন।

৫. নামাজের বাহিরে হাত তুলেও দোয়া করতে পারেন। আবার মনে মনেও দোয়া করতে পারেন।

৬. হ্যাঁ, তাহাজ্জদ নামাজের সিজদায় মনে মনে নিজের মনের যত দু'আ আছে,চাওয়া পাওয়া আছে তা  মনে মনে ব্যক্ত করে ও কান্নাকাটি করে আরবী মুজমাল দু'আ যাতে দুনিয়া আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ রয়েছে,যেমন "রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ"  কুরআন-হাদীসে বর্ণিত এমন দু'আ করতে পারবেন।

৭. হ্যাঁ, নামাজের বাহিরে এমনি সিজদা বনত হয়ে মাতৃভাষায় দু'আ করা যাবে/কান্নাকাটি করা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...