بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাব,
হাকিম ইবনে হিজাম (রা.)
থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা পৃথক না
হওয়া পর্যন্ত উভয়ের এখতিয়ার (গ্রহণ ও বর্জনের স্বাধীনতা) থাকবে। যদি তারা উভয়ে
সত্য কথা বলে ও (পণ্যের দোষত্রুটি) যথাযথ বর্ণনা করে তবে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত
হবে। আর যদি তারা মিথ্যা বলে ও (দোষ) গোপন করে, তবে তাদের কেনাবেচার
বরকত বিনষ্ট হয়ে যাবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৭৯)
আলোচ্য হাদিসে মহানবী
(সা.) ব্যবসায়ের মৌলিক দিক বর্ণনা করেছেন, যার ওপর ব্যবসার সাফল্য ও ব্যর্থতা নির্ভর করে।
তা হলো সত্য বলা ও পণ্যের গুণাগুণ ঠিকভাবে তুলে ধরা। সুতরাং মুমিন ব্যবসায়ীর দায়িত্ব
হলো লেনদেনের ক্ষেত্রে সত্য বলা এবং বস্তুর কোনো দোষত্রুটি থাকলে তা প্রকাশ করে দেওয়া।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ মান্য করা এবং পাপ পরিহারের কারণে ব্যক্তি যেমন
পরকালে পুরস্কৃত হবে, তেমনিভাবে সততার বিনিময়ে দুনিয়াতেও তার
ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিপরীতে মিথ্যাবাদী পরকালেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুনিয়াতে মানুষের
আস্থা হারাবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী
পরকালে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি,
হাদিস : ১২০৯)
মহানবী (সা.) ব্যবসার
মাধ্যমে অর্জিত উপার্জনকে উত্তম বলেছেন। রাফে বিন খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা
করা হলো, কোন উপার্জন উত্তম। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির নিজ হাতের উপার্জন এবং প্রত্যেক সৎ ব্যবসার মাধ্যমে যা অর্জিত হয়।’
(মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস : ২৭৮৩)
হাদিসবিশারদরা বলেন, সৎ ব্যবসা হলো যে ব্যবসায়
মিথ্যা ও প্রতারণা থাকে না। যা মানব কল্যাণে পরিচালিত হয় এবং যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার
অসৎ কোনো উদ্দেশ্য থাকে না।
ব্যবসায় যেই কাজগুলো পরিহার করতে হবে
আলোচ্য হাদিসের আলোকে
ইসলামী আইনজ্ঞরা বলেন, কেনাবেচার সময় ভালো ও মন্দ পণ্যের মিশ্রণ, ত্রুটি গোপন
করা, প্রতারণা করা, ওজনে কম দেওয়া নিষিদ্ধ।
কেননা তা মিথ্যা ও প্রতারণার অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে পণ্যের দাম বাড়াতে দালালি করা,
বাজারে আসার আগে তা কিনে ফেলা নিষিদ্ধ। আল্লাহ বলেন, ‘বলুন! মন্দ ও ভালো এক হতে পারে না, যদিও মন্দের আধিক্য
আপনাকে চমৎকৃত করে। হে জ্ঞানীরা! আল্লাহকে ভয় করো। যেন তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা
: মায়িদা, আয়াত : ১০০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের
সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না; তবে পারস্পরিক সন্তোষের
ভিত্তিতে ব্যবসা করা বৈধ। পরস্পরকে হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম
দয়ালু।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
অসৎ ব্যবসায়ীর ভয়ংকর
পরিণতি
মহানবী (সা.) যেমন সৎ
ব্যবসায়ীর জন্য ইহকালে ও পরকালে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, তেমনি অসৎ ব্যবসায়ীর ভয়ংকর
পরিণতির ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে, ‘রিফাআ (রা.)
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের মাঠে রওনা হলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) লোকদের কেনাবেচায়
মশগুল দেখে বলেন, হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! তারা রাসুলুল্লাহ
(সা.)-এর ডাকে সাড়া দিল এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকাল। তিনি বললেন,
কিয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গুনাহগাররূপে ওঠানো হবে। কিন্তু
যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে
এবং সততা ধারণ করে তারা ছাড়া।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২১০)