আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
267 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (67 points)
১। এক মেয়ের মা আশঙ্কা করে যে মেয়ের বুদ্ধি পরিপক্ব না। মেয়েটি অত্যধিক ইসলামি বই ক্রয় করায় মা আরও ভয় পান যে এত কম বয়সে মেয়েটি এত ধর্মকর্ম করে ও এত ইসলামি বই পড়ে। মেয়ের বয়স ২০+। মা তাকে এইসব ইসলামি বই পড়তে নিষেধ করে। মেয়েটি মাকে লুকিয়ে ইসলামি বই পড়ে। এমতাবস্থায় মায়ের নির্দেশ পালন না করার জন্য কি মেয়েটি গুনাহগার হবে?
২। বেশিরভাগ আলেমের মতে দাবা খেলা হারাম। অনেকে বলেছেন শর্তসাপেক্ষে হালাল যেমন নামাজ কাজা হওয়া যাবে না। এখন আমি যদি নামাজ কালাম ও অন্যান্য ইবাদত ঠিক রেখে দাবা খেলি (এক্ষেত্রে আমার নিয়ত হল বুদ্ধি শাণিত করা) তবে কি তা হালাল হবে?

৩। আমাদের ডিপার্টমেন্টে প্রতি বছর ইনডোর গেমসের আয়োজন করা হয়। সেখানে টাইপ রেসিং, লুডু, দাবা, পাবজি(রিসেন্ট অ্যাডিশন), কার্ড এসব খেলা হয়। আমি যদি শুধু টাইপ রেসিংয়ে ও দাবাতে (যদি উপরের উত্তরে হালাল হয়) অংশ নেই তবে কি আমার জন্য উক্ত টুর্নামেন্টে টাকা দেওয়া (খেলার সমপরিমাণ) ও খেলা জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
بسم الله الرحمن الرحيم 

জবাব,
মা বাবার সাথে উত্তম আচরণ প্রসংগে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۚ إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلَا تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلًا كَرِيمًا

তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।

وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا

তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। (সূরা বনি ইসরাঈল-২৩-২৪)

 عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السَّلَمِيِّ أَنَّ جَاهِمَةَ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلَيْهَا

মুআবিয়া ইবন জাহিমা সালামী (রহঃ) বলেন, আমার পিতা জাহিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে এসে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে গমন করতে ইচ্ছা করেছি। এখন আপনার নিকট মতামত জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। তিনি বললেনঃ তোমার মাতা আছে কি? সে বললোঃ হ্যাঁ। তিনি বললেন, তার খেদমতে লেগে থাক। কেননা, জান্নাত তার পদদ্বয়ের নিচে। ( সুনানে নাসাঈ-৩১০৮, সুনানে ইবনে মাজা-২৭৮১)



★বহু সংখ্যক হাদীস দ্বারা প্রমানিত যে দাবা খেলা জায়েজ নেই। হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ مُوسَى بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدَ، عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ.

আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা/পাশা খেললো সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো। (আবু দাউদ,ইবনে মাজাহ,আহমাদ, দার,হাকিম,ইবনে হিব্বান,আল আদাবুল মুফরাদ ১২৮১।)
,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، وَقَبِيصَةُ، قَالاَ: حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ مَرْثَدٍ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِي لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ.

আবু বুরায়দা (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা/পাশা খেললো সে যেন তার হাত শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করলো। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক,আল আদাবুল মুফরাদ ১২৮৩।)
,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، وَمَالِكُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالاَ: حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ قَالَ: حَدَّثَنِي عُبَيْدُ اللهِ قَالَ: حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِي هِنْدَ، عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ.

আবু মূসা আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দাবা/পাশা খেললো সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করলো। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, দারিমী, হাকিম, ইবনে হিব্বান,আল আদাবুল মুফরাদ ১২৮৪।)
,
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا وَجَدَ أَحَدًا مِنْ أَهْلِهِ يَلْعَبُ بِالنَّرْدِ ضَرَبَهُ، وَكَسَرَهَا.
নাফে (রহঃ) থেকে বর্ণিত। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) তার পরিবারের কাউকে দাবা/পাশা খেলায় লিপ্ত দেখতে পেলে তাকে প্রহার করতেন এবং দাবা/পাশার সরঞ্জাম ভেঙ্গে ফেলতেন। (মুয়াত্তা মালিক,আল আদাবুল মুফরাদ ১২৮৫।)
,
حَدَّثَنَا ابْنُ الصَّبَّاحِ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ عُبَيْدِ بْنِ أَبِي أُمَيَّةَ الْحَنَفِيِّ هُوَ الطَّنَافِسِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي يَعْلَى أَبُو مُرَّةَ قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ فِي الَّذِي يَلْعَبُ بِالنَّرْدِ قِمَارًا: كَالَّذِي يَأْكُلُ لَحْمَ الْخِنْزِيرِ، وَالَّذِي يَلْعَبُ بِهِ مِنْ غَيْرِ الْقِمَارِ كَالَّذِي يَغْمِسُ يَدَهُ فِي دَمِ خِنْزِيرٍ، وَالَّذِي يَجْلِسُ عِنْدَهَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا كَالَّذِي يَنْظُرُ إِلَى لَحْمِ الْخِنْزِيرِ.
ইয়ালা ইবনে মুররা (রহঃ) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি বাজি ধরে দাবা/পাশা খেলে সে শূকরের গোশত ভক্ষণকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি বাজি না ধরে দাবা/পাশা খেলে সে শূকরের রক্তে হাত রঞ্জিতকারীর সমতুল্য। আর যে ব্যক্তি তাদের সাথে বসে তাদের খেলা দেখে সে শূকরের গোশতের দিকে তাকিয়ে থাকা ব্যক্তির সমতুল্য।
(আল আদাবুল মুফরাদ ১২৮৮)

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনি ভাই / বোন!
১. দ্বীনি ইলম অর্জন করা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। তবে মুস্তাহাব ইলম অর্জনের ক্ষেত্রে মাতা পিতার হুকুম মান্য করা উচিত। কিন্তু মা বাবা যদি সেকুলার হয় বা ইসলামী শিক্ষা পছন্দ না করেন তাহলে তাদের দৃষ্টির আড়ালে কোন দ্বীনি বই পড়লে কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু সর্বপরি তাদের সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে।
২.দাবা খেলা সম্পূর্ণ নাজায়েয। যদি কোন আলেম তা জায়েয বলেন, তাহলে তার কথা সঠিক নয়।বিধায় আপনার জন্য দাবা খেলা জায়েয নেই।
৩.আপনার বর্ণনানুপাতে যেহেতু আপনি টাকা দিয়ে ঐ খেলায় অংশগ্রহণ করেন,বিধায় তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং উক্ত খেলায় আপনার জন্য অংশগ্রহণ করা জায়েয নেই।

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...