ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
শরীয়তে যেনার শাস্তি অনেক কঠোর। এর শর্ত গুলোও অনেক,যাতে করে স্বাভাবিক কাহারো কথার উপর ভিত্তি
করে সন্দেহমূলক ভাবে নির্দোষ ব্যক্তি সাজা না পান।
যেনার ক্ষেত্রে যদি চার জন স্বাক্ষী পাওয়া যায়,তাহলে স্বচক্ষে
কুয়ার ভিতর বালতি প্রবেশের ন্যায় একবারের জন্য হলেও দেখা কোনো অসম্ভব কিছু নয়।
এটি সম্ভব,এর জন্য ক্যামেরা ইত্যাদি সেট করার কোনো
প্রয়োজনীয়তা নেই।
প্রিয় পাঠক !
আসলে যদি যেনার ক্ষেত্রে চার জন স্বাক্ষী নাও পাওয়া যায়,তাহলেও কেবল সেই পুরুষ অথবা মহিলা যেকোনো
একজনের স্বীকার উক্তির উপর ভিত্তি করে যেনার শাস্তি দেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে তাদের কেউ শরীয়াহ মোতাবেক স্বীকার করলে চার স্বাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা
থাকবেনা।
মহিলা অবিবাহিত হলে অবশ্যই স্বীকার করবেই। ইসলামী রাষ্ট্র সেভাবেই ধর্মীও
ধাচের উপর গড়ে তুলবে।
হ্যাঁ যদি মহিলা বিবাহিতা হয়,
সেক্ষেত্রে
সেই মহিলা স্বীকার না করলে এক্ষেত্রে সেই মহিলার স্বামী লি'আন করে শাস্তি প্রয়োগের ব্যবস্থা করবে।
যদি এক্ষেত্রে উভয়েই লি'আন করে,তাহলে তাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক পুরোপুরি
বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
চোখের সামনে কেহ যদি নিজ স্ত্রী/বোনদের যেনা হতে দেখে,তাহলে সে কিভাবে বসে থাকবে?
সে তো নিজের প্রান বিলিয়ে দিয়ে হলেও সেই স্ত্রী/বোনকে রক্ষা করবে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَ الَّذِیۡنَ
یَرۡمُوۡنَ اَزۡوَاجَهُمۡ وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّهُمۡ شُهَدَآءُ اِلَّاۤ اَنۡفُسُهُمۡ
فَشَهَادَۃُ اَحَدِهِمۡ اَرۡبَعُ شَهٰدٰتٍۭ بِاللّٰهِ ۙ اِنَّهٗ لَمِنَ
الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۶﴾
আর যারা নিজদের স্ত্রীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, অথচ নিজেরা
ছাড়া তাদের আর কোন সাক্ষী নেই,
তাহলে তাদের
প্রত্যেকের সাক্ষ্য হবে আল্লাহর নামে চারবার সাক্ষ্য দেবে যে, সে নিশ্চয়ই সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা নুর ০৬)
وَ الۡخَامِسَۃُ اَنَّ
لَعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَیۡهِ اِنۡ کَانَ مِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۷﴾
আর পঞ্চমবারে সাক্ষ্য দেবে যে, সে যদি
মিথ্যাবাদী হয়, তবে নিশ্চয়
তার উপর আল্লাহর লা‘নত। (সুরা নুর ০৭)
وَ یَدۡرَؤُا عَنۡهَا الۡعَذَابَ اَنۡ تَشۡهَدَ
اَرۡبَعَ شَهٰدٰتٍۭ بِاللّٰهِ ۙ اِنَّهٗ لَمِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ۙ﴿۸﴾
আর তারা স্ত্রীলোকটি থেকে শাস্তি রহিত করবে, যদি সে
আল্লাহর নামে চারবার সাক্ষ্য দেয় যে, নিশ্চয় তার
স্বামী মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। (সুরা নুর ০৮)
وَ الۡخَامِسَۃَ اَنَّ غَضَبَ اللّٰهِ
عَلَیۡهَاۤ اِنۡ کَانَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿
আর পঞ্চমবারে সাক্ষ্য দেবে যে, যদি তার
স্বামী সত্যবাদী হয়, তবে নিশ্চয়
তার উপর আল্লাহর গযব। (সুরা নুর ০৯)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেন:
যখন কোন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেয় অথবা সন্তান সম্পর্কে
বলে যে, সে আমার
শুক্রজাত নয়, অপরপক্ষে
স্ত্রী স্বামীকে মিথ্যাবাদী অভিহিত করে দাবী করে যে, তাকে মিথ্যা
অপবাদের শাস্তি আশিটি বেত্ৰাঘাত প্ৰদান করা হোক, তখন
স্বামীকে স্বপক্ষে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করাতে বলা হবে। সে যদি যথাবিহিত চার জন
সাক্ষী পেশ করে যারা স্ত্রীর ব্যভিচারের পক্ষে এমনভাবে সাক্ষ্য দিবে যে স্ত্রীর
ব্যভিচার বিচারকের কাছে প্রমাণিত হয়ে পড়ে, তখন স্ত্রীর
প্রতি ব্যভিচারের হদ প্রয়োগ করা হবে। পক্ষান্তরে সে চার জন সাক্ষী পেশ করতে না
পারলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে লি’আন করানো হবে। প্রথমে স্বামীকে বলা হবে যে, সে কুরআনে উল্লেখিত ভাষায় চার বার
সাক্ষ্যদান করুক যে, সে এ
ব্যাপারে সত্যবাদী এবং পঞ্চম বার বলুক যে, সে
মিথ্যাবাদী হলে তার প্রতি আল্লাহর লা'নত বা
অভিশাপ বৰ্ষিত হবে।
স্বামী যদি এসব কথা থেকে বিরত থাকে, তবে যে পর্যন্ত
নিজের মিথ্যাবাদী হওয়ার কথা স্বীকার না করে অথবা উপরোক্ত ভাষায় পাঁচ বার কসম না
করে, সে পর্যন্ত
তাকে আটক রাখা হবে। সে যদি মিথ্যাবাদী হওয়ার কথা স্বীকার করে, তবে তার উপর অপবাদের শাস্তি প্রয়োগ করা হবে।
পক্ষান্তরে যদি পাঁচ বার কসম করে নেয়, তবে স্ত্রীর
কাছ থেকেও কুরআনে বর্ণিত ভাষায় পাঁচ বার কসম করিয়ে নেয়া হবে। যদি সে কসম করতে
অস্বীকার করে, তবে যে
পর্যন্ত সে স্বামীর কথার সত্যতা স্বীকার না করে এবং নিজের ব্যভিচারের অপরাধ
স্বীকার না করে, সে পর্যন্ত
তাকে আটক রাখা হবে। আর এরূপ স্বীকারোক্তি করলে তার উপর ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ
করা হবে।
পক্ষান্তরে যদি উপরোক্ত ভাষায় কসম করতে সম্মত হয়ে যায় এবং কসম করে নেয়, তবে লি'আন পূর্ণতা
লাভ করবে। এর ফলশ্রুতিতে দুনিয়ার শাস্তির কবল থেকে উভয়েই বেঁচে যাবে। আখেরাতের
ব্যাপার আল্লাহ তা'আলাই জানেন যে, তাদের মধ্যে
কে মিথ্যাবাদী। মিথ্যাবাদী আখেরাতের শাস্তি ভোগ করবে। কিন্তু দুনিয়াতেও যখন
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে লি’আন হয়ে গেল, তখন তারা
একে অপরের জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। বিচারক উভয়ের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে
দেবেন। এটা তালাকেরই অনুরূপ হবে। এখন তাদের মধ্যে পুনর্বিবাহও হতে পারবে না। [ইবন
কাসীর, কুরতুবী, সাদী]
আরো বিস্তারিত জানুন- https://ifatwa.info/27362/