আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
570 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (15 points)
আসসালামুয়ালাইকুম শায়েখ,

প্রথমেই এত বড় লেখার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

আমি ২-৩দিন থেকে তালাকের মাসায়েলগুলো পারছিলাম। তখন জানতে পারলাম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাকে উদ্দেশ্য করে তালাক উচ্চারণ করলেও তালাক হয়ে যায়।


আবার মুফতি ওলী উল্লাহ্ সাহেবের একটি উত্তর থেকে জানলাম দারুল উলুম দেওবন্দের ফাত‌ওয়া অনুযায়ী তালাক না বলে যদি স্ত্রীকে 'তুমি আমার জন্য হারাম' বা 'আমি তোমার জন্য হারাম' বলা হয় তাহলে নিয়ত ছাড়াও তালাক হয়ে যায়।


তার উত্তরের ঐ অংশটুকু নিম্নে দেওয়া হলো,


শরীয়তের বিধান হলো কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলেঃ

তুমি আমার উপর হারাম,আমার জন্য হারাম।
তাহলে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।
এখানে নিয়তের প্রয়োজন নেই।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৯/২৮৪)

,      
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।
উক্ত স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করতে চাইলে পুনরায় নতুন করে মোহরানা ধার্য করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।


وإن الحرام في الأصل کنایة یقع بہا البائن، لأنہ لما غلب استعمالُہ في الطلاق لم یبق کنایة، ولذا لم یتوقف علی النیة أو دلالة الحال إلخ (الشامي زکریا: ۴/۵۳۰)

সারমর্মঃ

হারাম শব্দ প্রকৃত পক্ষে কিনায়া বাক্য,এর দ্বারা বায়েন তালাক পতিত হয়৷।  
তালাকের ক্ষেত্রে হারাম শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক হওয়াতে এটি আর কিনায়া বাক্য হিসেবে নেই।

তাই নিয়ত না থাকলেও তালাক পতিত হবে।
الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (3/ 252):

"ومن الألفاظ المستعملة: الطلاق يلزمني، والحرام يلزمني، وعلي الطلاق، وعلي الحرام فيقع بلا نية للعرف.

 (قوله: فيقع بلا نية للعرف) أي فيكون صريحا لا كناية، بدليل عدم اشتراط النية وإن كان الواقع في لفظ الحرام البائن لأن الصريح قد يقع به البائن كما مر، لكن في وقوع البائن به بحث سنذكره في باب الكنايات، وإنما كان ما ذكره صريحا لأنه صار فاشيا في العرف في استعماله في الطلاق لا يعرفون من صيغ الطلاق غيره ولا يحلف به إلا الرجال، وقد مر أن الصريح ما غلب في العرف استعماله في الطلاق بحيث لا يستعمل عرفا إلا فيه من أي لغة كانت، وهذا في عرف زماننا كذلك فوجب اعتباره صريحا كما أفتى المتأخرون في أنت علي حرام بأنه طلاق بائن للعرف بلا نية مع أن المنصوص عليه عند المتقدمين توقفه على النية".

সারমর্মঃ

এগুলো শব্দ নিয়য় ছাড়া বললেও তালাক পতিত হবে।
হারাম শব্দ প্রকৃত পক্ষে কিনায়া বাক্য,এর দ্বারা বায়েন তালাক পতিত হয়৷।  
তালাকের ক্ষেত্রে হারাম শব্দটির ব্যবহার ব্যাপক হওয়াতে এটি আর কিনায়া বাক্য হিসেবে নেই।

তাই নিয়ত না থাকলেও তালাক পতিত হবে।


সেই থেকে আমার একটা বিষয় নিয়ে ওয়াস‌ওয়াসা কাজ করছে যে আমি কখনো আমার স্ত্রীকে কোন কারনে 'তুমি আমার জন্য হারাম’ অথবা ‘আমাদের সম্পর্ক হারাম' বলছি?

তো এসব চিন্তা করতে করতে আমার মুখ থেকে মনের চিন্তা করা কথা উচ্চারিত হয়ে যায়। কথাটি ছিল এমন, 'তুমি আমার জন্য হারাম হয়ত বলি নাই বলেছি আমাদের সম্পর্ক হারাম।' (যদিও এই টাইপের কথা কখনো তাকে বলেছিলাম কিনা শিওর না।'

কিন্তু কথাগুলো চিন্তা করার সময় আমার স্ত্রীর চেহারা আমার মনে আসছিল। মানে এরকম লাগছিলো যে আমি বাক‍্যগুলো তাকে বলেছিলাম (অর্থাৎ আগে যদি আমি এই কথাগুলো বলে থাকি তাহলে তখন বলার সময় যে চিত্র হত সেই চিত্রের মত চিত্র কল্পনায় আসছিল আমার বেখেয়ালেই।)

এখন আমার মুখ থেকে যখন নিজের অজান্তেই উচ্চারিত হয়ে যায় উপরোক্ত ঐ বাক‍্যটি। তখন আমি 'তুমি আমার জন্য হারাম' এইটুকু বলে থেমে যাই এক সেকেন্ড বা তারও কম সময়ের জন্য কারন আমার মনে হয় যে আমার বিচ্ছেদ ঘটে গেল নাতো এইটুকু বলার জন্য যেহেতু আমার কল্পনায় আমার স্ত্রীর চেহারা ছিল। তারপর পুরো বাক‍্যটি শেষ করি। অর্থাৎ বলি, ''তুমি আমার জন্য হারাম হয়ত বলি নাই বলেছি আমাদের সম্পর্ক হারাম।'

কিন্তু আমার কখনোই আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা ছিল না। তার সাথে আমার সম্পর্ক অনেক আন্তরিক এবং আমরা আলহামদুলিল্লাহ সুখে আছি। ওয়াস‌ওয়াসার কারনে এইসব বলছি কিনা চিন্তা করা।

তো আমার প্রশ্ন হচ্ছে,

১/ স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তালাক ব‍্যতিত অন‍্য শব্দ। যেমন: 'তুমি আমার জন্য হারাম', 'আমি তোমার জন্য হারাম', 'আমাদের সম্পর্ক  ইত্যাদি বললে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে কিনা?


২/ উপরোক্ত ভাবে বাক্যটি বলার কারনে আমাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়ে যাবে কিনা?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
শরীয়তের বিধান হলো স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তালাক দিলেও তালাক পতিত হয়ে যায়।    

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ أَبِىْ سَلَمَةَ عَنْ فَاطِمَةَ بِنْتِ قَيْسٍ : أَنَّ أَبَا عَمْرِو بْنَ حَفْصٍ طَلَّقَهَا الْبَتَّةَ وَهُوَ غَائِبٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا وَكِيْلُهُ الشَّعِيرَ فَسَخِطَتْهُ فَقَالَ : وَاللّٰهِ مَا لَكِ عَلَيْنَا مِنْ شَيْءٍ فَجَاءَتْ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ فَذَكَرْتُ ذٰلِكَ لَه فَقَالَ : «لَيْسَ لَكِ نَفَقَةٌ» فَأَمَرَهَا أَنْ تَعْتَدَّ فِىْ بَيْتِ أُمِّ شَرِيكٍ ثُمَّ قَالَ : «تِلْكِ امْرَأَةٌ يَغْشَاهَا أَصْحَابِىْ اعْتَدِّىْ عِنْدَ ابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ فَإِنَّه رَجُلٌ أَعْمٰى تَضَعِينَ ثِيَابَكِ فَإِذَا حَلَلْتِ فَاٰذِنِينِىْ». قَالَتْ : فَلَمَّا حَلَلْتُ ذَكَرْتُ لَه أَنَّ مُعَاوِيَةَ بْنَ أَبِىْ سُفْيَانَ وَأَبَا جَهْمٍ خَطَبَانِىْ فَقَالَ : «أَمَّا أَبُو الْجَهْمِ فَلَا يَضَعُ عَصَاهُ عَنْ عَاتِقِه وَأَمَّا مُعَاوِيَةُ فَصُعْلُوكٌ لَا مَالَ لَهُ انْكِحِىْ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ» فَكَرِهْتُه ثُمَّ قَالَ : «انْكِحِىْ أُسَامَةَ» فَنَكَحْتُه فَجَعَلَ اللّٰهُ فِيهِ خَيْرًا وَاغْتَبَطْتُ وَفِىْ رِوَايَةٍ عَنْهَا : «فَأَمَّا أَبُوْ جَهْمٍ فَرَجُلٌ ضَرَّابٌ لِلنِّسَاءِ». رَوَاهُ مُسْلِمٌ

আবূ সালামাহ্ (রহঃ) ফাত্বিমাহ্ বিনতু কয়স (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তার স্বামী আবূ ‘আমর ইবনু হাফস্ তাকে চূড়ান্ত তালাক দেয়, ঐ সময়ে সে মাদীনায় উপস্থিত ছিল না। অতঃপর স্বামীর ওয়াকীল (প্রতিনিধি : আইয়্যাস ইবনু আবূ রবী‘ এবং হারিস ইবনু হিশাম) আমার নিকট কিছু যব নিয়ে আসে, যাতে আমি (অতি নগণ্য মনে করে) অসন্তোষ হই। ওয়াকীল বলল, আল্লাহর কসম! আমাদের নিকট তোমার আর কিছুই পাওনা নেই। (কারণ, তুমি ত্বলাকে বায়িনপ্রাপ্তা অর্থ বাবদ যব ছাড়া আর কিছুই রেখে যায়নি) এতে ফাতিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে অভিযোগ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার কোনো খোরাকি খরচ নেই। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে উম্মু শরীক-এর ঘরে ‘ইদ্দত পালনের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরক্ষনেই বললেন, ঐ রমণীর ঘরে তো লোকজনের চলাচল বেশি হয় (অত্যন্ত দানশীলা ও অতিথিপরায়ণতার জন্য)। বরং তুমি ইবনু উম্মি মাকতূম-এর ঘরে ‘ইদ্দত পালন কর, সে অন্ধ ব্যক্তি বিধায় তুমি নির্দ্বিধায় গায়ের পোশাক ছাড়তে পারবে। অতঃপর যখন তোমার ‘ইদ্দতকাল শেষ হবে, তখন আমাকে খবর দিবে।

ফাতিমা (রাঃ) বলেন, আমার ‘ইদ্দতকাল শেষ হলে আমি তাঁকে জানালাম যে, মু‘আবিয়াহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান ও আবূ জাহ্ম (রাঃ) উভয়ে আমার নিকট বিয়ের প্রস্তাব (‘ইদ্দত শেষে) পাঠিয়েছে। তদুত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আবূ জাহম তো তার কাঁধ হতে লাঠি নামিয়ে রাখে না (তথা সে স্ত্রীকে অত্যধিক মারধর করে অথবা অধিকাংশ সময় সফরে থাকে)। আর মু‘আবিয়াহ্ তো দরিদ্র মানুষ, তার কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। তুমি উসামাহ্ ইবনু যায়দণ্ডকে বিয়ে কর (দীনদারী ও স্বভাব-চরিত্রতায় উত্তমতায় প্রাধান্য দাও)। ফাতিমা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বিয়ে করব না (উসামাহ্ কৃষ্ণবর্ণ ক্রীতদাস পুত্র হওয়ার কারণে)। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুনরায় উসামাকে বিবাহ করতে বললে তিনি তাকেই বিয়ে করলেন। আল্লাহ তা‘আলা এ বিয়েতে এমন বরকত দিলেন যে, অন্য রমণীরা ঈর্ষা পোষণ করত।

অপর বর্ণনায় আছে, আবূ জাহম স্ত্রীকে অতিমাত্রায় মারধর করত।
সহীহ : মুসলিম ১৪৮০, আবূ দাঊদ ২২৮৪, নাসায়ী ৩২৪৫, আহমাদ ২৭৩২৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪০৪৯,মিশকাত ৩৩২৪)

★সুতরাং স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তাকে কিনায়া তালাক দিলেও তাহা পতিত হবে। 

তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তুমি আমার উপর হারাম,আমার জন্য হারাম এগুলো মুখ দ্বারা উচ্চারণ করে বলার দ্বারা তালাক পতিত হয়ে যাবে।
,
(০২)
 যেই কয়বার উক্ত শব্দ ব্যবহার করেছেন,সেই কয়বার তালাক পতিত হবে।    
তিন তালাকের কম হলে নতুন করে তাকে বিবাহ করতে পারবেন।
তিন তালাক হয়ে গেলে শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত তাকে আর বিবাহ করতে পারবেননা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (15 points)
+1
ধন্যবাদ শায়েখ,
আমার স্পষ্ট মনে পরছে না আগে বলেছি কিনা বা কতবার বলেছি এবং আমার স্ত্রীর মতে আমি বলিনি। এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?
আমি শুধু পাপ থেকে বাঁচতে চাই।

আর যে বাক্যটি আমি বলেছি তার দ্বারা কি তালাক পতিত হবে? যেহেতু একবার বাক্যটি উচ্চারণ করেছি সেহেতু কয়বার হবে?

আর আমি আবার বলছি আমি তাকে আলাদা করে তাকে বলার উদ্দেশ্য ছিল না। শুধু উচ্চারণ করার সময় তার অস্পষ্ট চেহারা আমার মনে ভেসে উঠেছিল।

দয়া করে ইকটু কনফার্ম করবেন। খুব মনোকষ্টে ভুগছি বিষয়টা নিয়ে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...