بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ইসলামে বিয়ের পাত্রী দেখার
নিয়মঃ
বিবাহ মানব জীবনের অন্যতম একটি
অধ্যায়।একটি সুখী-সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবন গঠনে ইসলাম দিয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।পূর্ণ
শরয়ী নীতিমালা অনুযায়ী তা করা বাঞ্ছনীয়। প্রথমে জানতে হবে, পাত্রী কখন দেখা যায়। দ্বিতীয়ত
জানতে হবে, কী উদ্দেশ্যে দেখা যায়। মনে রাখতে হবে, পাত্রী কোন পণ্য নয় যে কেউ দেখতে থাকবে, অতঃপর যাকে পছন্দ
হয় তাকে বিবাহ করবে। অথচ কিছু লোক এরুপ অবাঞ্ছিত কাজ করে। তারা একের পর এক পাত্রী দেখে
আর ভাবে, এভাবে দেখে দেখে নির্ধারণ করবে যে, কাকে বিবাহ করবে। একাজ ইসলাম সম্মত নয়।
বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে সার্বিক
দিক পর্যালোচনার করে যার সংঙ্গে বিবাহের বিষয় চুড়ান্ত হয়ে যাবে, শুধু তাকে সর্বশেষ দিক হিসেবে
দেখার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং কাকে বিবাহ করবে, এটা নির্ধারণ করতে
হবে দেখাদেখির আগেই। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের
দ্বারা দেখা ইত্যাদির মাধ্যমে সব রকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে
তখন ছেলে মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে। সে সময় এ দেখা
দেখির বিশেষ উদ্দেশ্য হল, বিবাহের ব্যাপারে পারস্পরিক আগ্রহ সৃষ্টি।
বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে, পরিশেষে পাত্রীকে কোন ভাবে দেখে নেয়া বিধেয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ যদি কোন মেয়েকে
বিবাহের প্রস্তাব দেয় এবং তার এমন কিছু দেখতে পারে-যা তাকে আগ্রহশীল করবে, তবে সে যেন তা করে নেয়।”
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, “আমি বনী সালামা গোত্রের এক মেয়েকে
বিবাহের প্রস্তাব দেই এবং তাকে এক দৃষ্টি দেখার জন্য খেজুর গাছ তলায় লুকিয়ে থাকি। একদিন
আমি তাকে দেখে ফেলি, যা আমাকে তার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলে।
ফলে আমি তাকে বিবাহ করে নিই।” {সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৭}
অন্য বর্ণনায় আছে, একদা মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ)
জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা করেন।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যাও, তাকে
দেখে এসো। কারণ, এ দেখা তোমাদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টির ক্ষেত্রে
বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।”মুগীরা (রাঃ) বলেন, একথা শুনে আমি পাত্রী
দেখে আসি। {সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড,
৮৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৮৮}
সুতরাং বিবাহের পূর্বে পাত্রী
দেখা বৈধ। বরং তা মুস্তাহাব।
পাত্রী দেখার আরেকটি উল্লেখযোগ্য
উদ্দেশ্য হলোঃ
অন্যদের মাধ্যমে পাত্রীর যে
গুণাগুণ শুনেছে,
সে ব্যাপারে নিজেই অবগতি লাভ করা। যেন না দেখে বিবাহ করে পরে কোন ব্যাপারে
অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আপত্তি তোলার অবকাশ না থাকে। এ ব্যাপারে হযরত আবু হুরাইরা
(রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা
আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় জনৈক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) কে জানালেন যে, তিনি জনৈক আনসারী মেয়েকে বিবাহ করতে চান।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে দেখেছো?
উত্তরে তিনি বললেন, না, দেখিনি
। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, “যাও, দেখে
এসো। কারণ, আনসারদের চোখে কিছু ভিন্ন অবস্থা (চক্ষু ক্ষুদ্রতা)
আছে। (তাই তাকে দেখে সেই ব্যাপারটি মেনে নেওয়ার বিষয় আগেই ফায়সালা হওয়া দরকার)” {সহীহ মুসলিম, ২য় খন্ড, ১০৪ পৃষ্ঠা;
হাদীস নং ১৪২৪/সুনানে আবু দাউদ, ২য় খন্ড,
৩১৫ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ২০৮২/ফাতাওয়া শামী,
৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}
২। পাত্রী দেখানোর হুকুমঃ
বিবাহের জন্য পাত্রীকে দেখা
বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য বৈধ। ফিকহ ও হাদীসের ভাষ্য দ্ধারা এটা প্রমাণিত। অবশ্য পূর্বেই
বলা হয়েছে যে,
এ পাত্রী দেখার বিষয়টি আসবে চূড়ান্ত পর্যায়ে। অর্থাৎ অন্যান্য প্রয়োজনীয়
যাবতীয় ব্যাপার, খবরা-খবর নেয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাক হলে এবং পাত্রীক
মহিলাদের মাধ্যমে দেখানোর দ্ধারা পছন্দ করে বিবাহের ইচ্ছা দৃঢ় হলে, তখনই কেবল সর্বশেষে পাত্র পাত্রীকে দেখতে পারবে।
এ ব্যাপারে হযরত মুগীরা ইবনে
শু’বা (রাঃ) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি জনৈক মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব
দেই এবং বিষয়টা রাসূল (সাঃ) কে বলি।রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছো?
আমি বললাম, না।তিনি বললেন, তুমি তাকে দেখে এসো। কারণ-এ দেখাটা তোমাদের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে
বেশ উপযোগী হবে। ফলে আমি মেয়েটিকে দেখার জন্য যাই। তখন তার বাবা-মা সেখানে ছিল এবং
মেয়েটি পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম,
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মেয়েটিকে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি বলেন,
আমার এ-কথায় তার বাবা-মা নীরব রইলেন।অন্য বর্ণনায় আছে, যেন তারা আমার এ কথাকে অপছন্দ করলেন। (তারা বিবাহের আগে পাত্রীকে দেখানোর পক্ষে
ছিলেন না।)
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মেয়েটি বললো,
যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আমাকে দেখার জন্য আপনাকে আদেশ করে থাকেন,
তাহলে আপনার দেখার সুবিধার্থে আমি আপনার সামনে আসছি।আর যদি রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) আমাকে দেখার জন্য আপনাকে নির্দেশ না দিয়ে থাকেন, তাহলে
আপনি আমার দিকে দৃষ্টি দিবেন না।হযরত মুগীরা (রাঃ) বলেন, এরপর
আমি তাকে দেখি এবং তাকে বিবাহ করি।
{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২য় খন্ড, ৪২৪ পৃষ্ঠা; হাদীস নং
১৮৬৬}
এ হাদীস দ্ধারা স্পষ্টভাবে
বুঝা গেলো,
নিয়ম তান্ত্রীকভাবে পাত্রী দেখা জায়িয আছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয়
হলো, বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখার একটি উদ্দেশ্য উক্ত হাদীসে
বলা হয়েছে যে, এতে উভয়ের মাঝে সৌহার্দ্য সৃষ্টি হবে।
সুতরাং ফিকহের কিতাবসমূহের প্রাসঙ্গিক আলোচনা দ্বারা
পাত্রী দেখানোর অবকাশ আছে বলে প্রমাণিত হয়। তবে সেটা ঘটা করে বা জাঁকজমক পূর্ণভাবে
না হওয়া চাই। বরং অনানুষ্ঠানিক ও অনাড়ম্বর ভাবে হওয়া বাঞ্ছণীয়। তেমনি ভাবে পাত্রীকে
শুধু পাত্র দেখতে পারবে,পাত্র ছাড়া পাত্রের ভাই, পিতা, চাচা বা কোন মুরব্বী (পুরুষ) কিংবা অন্য কোন পুরুষ পাত্রীকে দেখতে পারবে না।
তা কিছুতেই জায়িয নয়। {সূত্রঃ সুনানে ইবনে মাজাহ,২য় খন্ড, ৭২৮ পৃষ্ঠা; হাদীস নং
১৮৬৬/,মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, ৬ষ্ঠ খন্ড,
১৬৩ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১০৩৩৫}
৩। পাত্রীর কতটুকু অংশ দেখা
যাবেঃ
পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে শুধু
পাত্রীর চেহারা,
হাতের পাঞ্জা ও পা দেখা যাবে। এছাড়া অন্যকোন অঙ্গ দেখা যাবে না। এমনকি
মাথার চুলও দেখা যাবে না। ইমাম বাইহাকী (রহঃ)
তার সুনান গ্রন্থে বিবাহ অধ্যায়ে “প্রয়োজনের ক্ষেত্রে মহিলাদের শুধু চেহারা ও হাতের
পাঞ্জা দেখা বৈধ” শিরোনামে একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস
(রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ),আয়িশা
(রাঃ) হতে হযরত আতা, সাঈদ বিন জুবাইর ও শাফী (রহঃ) সূত্রে পবিত্র
কুরআনের আয়াত-ﺍﻻ
ﻣﺎ ﻇﻬﺮ ﻣﻨﻬﺎ এর
ব্যাখ্যায় চেহারা ও হাতের পাঞ্জাকে উল্লেখ করেছেন।
তেমনি ভাবে ইমাম মুসলিম (রহঃ)
ও “বিবাহেচ্ছুক ব্যক্তির জন্য পাত্রীর চেহারা ও হাতের পাঞ্জা দেখা মুস্তাহাব” শিরোনামে
একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেছেন। {সূত্রঃ সুনানে বাইহাকী, ৭ম খন্ড, ৬৬ পৃষ্ঠা; হাদীস নং ১৩৪৯৬/বিদায়াতুল মুজতাহিদ,
৩য় খন্ড, ৩১ পৃষ্ঠা/ফাতাওয়া শামী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৭০ পৃষ্ঠা}
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
কাকে বিবাহ করবে, এটা নির্ধারণ করতে হবে দেখাদেখির
আগেই। বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে যাবতীয় বিষয় জানা এবং প্রয়োজনে মহিলাদের দ্বারা দেখা
ইত্যাদির মাধ্যমে সব রকম খোঁজ-খবর নেয়ার পর বিবাহের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তখন ছেলে
মেয়েকে দেখতে পারে এবং মেয়েও ইচ্ছা করলে ছেলেকে দেখতে পারে। বিবাহের জন্য সবকিছু পছন্দ
হওয়ার পর বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিলে, পরিশেষে পাত্রীকে কোন ভাবে
দেখে নেয়া জায়েয আছে। তবে ফাইনালি দেখার পরে যদি পছন্দ না হয় তাহলে এতে কোন গুনাহ হবে
না। কিন্তু শুধুমাত্র ছেলেই মেয়েকে দেখতে পারবে, ছেলের ভাই,
চাচা, বন্ধু বা বর পক্ষের কোন গায়রে
মাহরামের জন্য মেয়েকে দেখা জায়েয নেই।