بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
কোরআনের আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ
عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের
দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের ওপর আমার (প্রতিশ্রুত) নিয়ামত আমি পূর্ণ করে দিলাম,
আমি তোমাদের জন্য ইসলামকেই দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা: আল- মায়িদাহ, আয়াত: ৫:৩)
ইসলামের দৃষ্টিতে জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা এবং এ উপলক্ষে যে সমস্ত
ব্যয়বহুল আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয় সবই হারাম এবং বিদয়াত। জন্ম কিংবা মৃত্যু দিবস
পালনের কোন প্রমাণ নবিজির পবিত্র জীবনীতে পাওয়া যায় না। তাঁর সাহাবিদের মধ্যেও এধরনের
কোনো কিছুর প্রমাণ পাওয়া যায় না।
পৃথিবীর শুরু থেকে যত নবি-রাসুল এসেছেন, আমরা তাদের প্রত্যেকের
প্রতি ঈমান রাখি। তাদের প্রতিও ঈমান রাখা জরুরি। এখন এই অসংখ্য-অগনিত নবি-রাসুল,
তারপর খুলাফা রাশিদিন, অসংখ্য সাহাবা, তাবিয়িন, আয়িম্মা মুজতাহিদিন জন্ম গ্রহণ করেছেন ও ইন্তেকাল
করেছেন। যদি তাদের জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন ইসলাম সমর্থিত হত বা সাওয়াবের কাজ হত
তাহলে আমাদেরকে তো বছরব্যাপী জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনের ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ হয়ে যেতে
হত। ইসলামটা হয়ে যেত স্রেফ জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন কেন্দ্রিক।
সাহাবা আজমাইন ছিলেন সত্যিকারার্থে নবিপ্রেমিক ও তাঁর একনিষ্ঠ
অনুসারী। নবিপ্রেমের হাজারও নজির তারা স্থাপন করেছেন। জানবাজি রেখে নবিজিকে নিরাপত্তা
দিয়েছেন। কই, তারা তো কখনও নবিজির জন্ম কিবা মৃত্যুর অনুষ্ঠান পালন করেননি। যদি এটা ভালো
কাজ, নেকের কাজই হত, ভালোবাসার প্রমাণ হতো
তবে সাহাবারা কি সেটা অবশ্যই পালন করতেন না? অবশ্যই করতেন।
সুতরাং যেখানে প্রিয় নবিজির জন্ম এবং মৃত্যু দিবসই পালন করা
শরিয়তসিদ্ধ নয়, সেখানে অন্য কারো জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা কতটুকু
শরিয়ত সম্মত হতে পারে? আসলে ইসলামের সাথে এসবের দূরতম কোনো সম্পর্কও
নেই। ইসলামের পূর্ণতার শত শত বছর পরে ভক্তির আতিশয্যে কিংবা বিধর্মীদের সাদৃশ্যাবলম্বনে
ইসলামের গায়ে বিষফোঁড়ার ন্যায় এগুলোর উৎপত্তি ঘটেছে।
বর্তমান সমাজে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী সন্তান-সন্তুতি কিংবা বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর
জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী ঘটা করে পালন করা হয়ে থাকে। সেখানে অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে
বিশাল খাবার-দাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে, অনেক জায়গায় তো বাদ্যবাজনারও
ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। অথচ এভাবে জন্ম-বার্ষিকী কিংবা মৃত্যুবার্ষিকীতে আনন্দোৎসব
বা শোক পালন করা ইসলামি চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
জন্ম দিবস বা মৃত্যু দিবস কেন্দ্রিক এসব আচার-অনুষ্ঠান খৃস্ট, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অন্যান্য কাফিরদের ধর্মীয় রীতি। তাই এটা মুসলিমদের জন্য পরিত্যাজ্য।
হাদীসে অমুসলিমদের আদর্শ চাল চলন কে অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
অনুবাদঃ হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ বলেন যে
ব্যক্তি অন্য গোত্রে (অমুসলিম)-র অনুসরণ করবে সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত হবে। {আবু-দাউদ-৩৫১২}
তিনি আরও বলে গেছেন, ‘আমার পরে আমার শরিয়তের মধ্যে যে নতুন কোনো
আমল আবিষ্কার করবে, তা পরিত্যাজ্য।’ [বুখারি, মুসলিম]
বিদগ্ধ গবেষক আল্লামা ইবনে উছাইমিন রহ: বলেন
ﻭﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﺸﺮﻋﻴﺔ ﻣﻌﺮﻭﻓﺔ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻹﺳﻼﻡ ، ﻭﻫﻲ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ،
ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ ، ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻷﺳﺒﻮﻉ ( ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ) ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺳﻮﻯ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ
শরীয়ত স্বীকৃত ঈদ হল
তিনটা যা মুসলিমদের নিকট অতি সু-পরিচিত,এবং তা হল,ঈদুল আযহা,ঈদুল ফিতর,সাপ্তাহিক ঈদ (শুকুবার)এই তিন ঈদ ব্যতীত ইসলামে
অন্যকোন ঈদ নেই
(মাজমু'উ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমিন,২/৩০১)
হাদিসে আরো বলা আছে যে, প্রত্যেক বিদাআত বা নব আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহী
আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী কাজ। (সহী ইবনে খুযাইমা, ৩য় খন্ড, ১৪৩ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-
১৭৮৫)
হুজুরে পাক (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার
শরীয়তের নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।’ (সহীহ মুসলিম,
হাদিস: ৩২৪৩)
রাসূল (সা.) আরো বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব,
সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ
হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে
ভ্রষ্টতা।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস: ৭৬৮)
আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://www.ifatwa.info/166