আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
786 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (84 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম,

১- সকাল সন্ধ্যার বিশেষ আমল যে বলা হয়।

এখানে সকাল বলতে কি ফজরের সময় থেকে সকালের আমল করা যায়? নাকি সূর্যোদয়ের পর থেকে সকাল ধরা হয়?

আর সন্ধ্যার ক্ষেত্রে, সন্ধ্যার আমলের সময়সীমা কতক্ষন? এশার পর মানে রাতে ১২ টার আগে করলেই হবে?


২- 'বিসমিল্লাহি আল্লহম্মা আজহিব, হাররহা ওরা বারদাহা ওয়া ওয়া সবাহা'

এটি কি বদনজর থেকে রক্ষার দোয়া?

পড়ার নিয়ম কি? কারা পড়বে?

এটা আরবিতে লিখে দিলে উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

সকাল সন্ধার সময় সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত আছে।তবে সর্বাপেক্ষা পছন্দনীয় মত হল,ত্বুলুয়ে ফযর থেকে নিয়ে সুর্য পূর্ব দিগন্তে উদ্ভাসিত হওয়া(প্রথম প্রহর) পর্যন্ত সকালবেলা অবশিষ্ট থাকে। অন্যদিকে কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরামের মতে বিকালবেলা- আছর থেকে নিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে। তবে কেউ কেউ রাতের এক তৃতায়াংশ পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকার কথা বলেছেন। আবার কেউ কেউ এমন মাতামতও দিয়েছেন যে, বিকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলো/যিকিরগুলো মূলত মাগরিবের পর থেকে শুরু করা হবে।সম্ভবত সবচেয়ে বিশুদ্ধ কথা হল,

প্রত্যেকের উচিৎ সকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলো ফযরের সুচনা থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর মধ্যকার সময়ের মধ্যেই পড়ে নেয়া প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ।যদি কারো ছুটে যায়, তাহলে দ্বিপ্রহরের(দিন-১২টা) শেষ সীমা তথা যোহরের নামাযের কিছু পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ে নেবে। আর বিকালবেলার দু'আয়ে মা'ছুরাগুলোকে আছর থেকে নিয়ে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে পড়ে নেবে।তবে যদি ছুটে যায়,তাহলে রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সময়ের ভিতরেই পড়ে নিবে। এর প্রমাণ হল,যিকির সম্পর্কে কুরআনের ঐ সমস্ত বাচনভঙ্গি ও প্রয়োগকৃত শব্দাবলী যা দ্বারা বুঝা যায় যে যিকির উপরোক্ত সময়েই পড়তে হবে।

যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ

এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।(সূরা মু'মিন-৫৫)

উক্ত আয়াতে َﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ দ্বারা দিনের প্রথমাংশ উদ্দেশ্য।এবং ِاﻟْﻌَﺸِﻲِّ দ্বারা দিনের শেষাংশ উদ্দেশ্য।সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,যিকিরের সময় হল,ফযরের সূচনা থেকে এবং আছরের পর থেকে।

ইবনুল-ক্বায়্যিম রাহ. বলেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻘﻴﻢ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : ﻗﺎﻝ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ( ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻐُﺮُﻭﺏِ ) ﺳﻮﺭﺓ ﻕّ 39/ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺗﻔﺴﻴﺮ ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﺬﺍ ﻭﻛﺬﺍ ﺣﻴﻦ ﻳﺼﺒﺢ ، ﻭﺣﻴﻦ ﻳﻤﺴﻲ ، ﺃﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ : ﻗﺒﻞ ﻃﻠﻮﻉ ﺍﻟﺸﻤﺲ ، ﻭﻗﺒﻞ ﻏﺮﻭﺑﻬﺎ ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻞ ﺫﻟﻚ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻭﻃﻠﻮﻉ ﺍﻟﺸﻤﺲ ، ﻭﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻭﺍﻟﻐﺮﻭﺏ ، ﻭﻗﺎﻝ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ( ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻷِﺑْﻜَﺎﺭِ ) ﻏﺎﻓﺮ 55/ ، ﻭﺍﻹﺑﻜﺎﺭ ﺃﻭﻝ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ، ﻭﺍﻟﻌﺸﻲ ﺁﺧﺮﻩ . ﻭﺃﻥ ﻣﺤﻞ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﺒﺢ ، ﻭﺑﻌﺪ ﺍﻟﻌﺼﺮ . ﺍ . ﻫـ ﻣﻠﺨﺼﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻮﺍﺑﻞ ﺍﻟﺼﻴﺐ ( 200 ) ﻭﻳﺮﺍﺟﻊ ﺷﺮﺡ ﺍﻷﺫﻛﺎﺭ ﺍﻟﻨﻮﻭﻳﺔ ﻻﺑﻦ ﻋﻼﻥ ( 3 / 74 , 75 ، 100 )

ভাবার্থঃ আল্লাহ তা'আলার বানী

ﻓَﺎﺻْﺒِﺮْ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻳَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﻗَﺒْﻞَ ﻃُﻠُﻮﻉِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﻭَﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟْﻐُﺮُﻭﺏِ

অতএব, তারা যা কিছু বলে, তজ্জন্যে আপনি ছবর করুন এবং, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে আপনার পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করুন।(সূরা ক্বাফ-৩৯)

এ আয়াতের ঐ সমস্ত হাদীসের ব্যখ্যা যেগুলোতে বর্ণিত রয়েছে যে, যে ব্যক্তি সকালবেলা এই এই দু'আ পড়বে এবং যে ব্যক্তি বিকালবেলা এই এই দু'আ পড়বে( তাকে এমন এমন প্রতিদান দেয়া হবে।)

সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,হাদীসে বর্ণিত সকালবেলা দ্বারা সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সময়-ই উদ্দেশ্য।এবং বিকালবেলা দ্বারা সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়-ই উদ্দেশ্য।আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন,

ﻭَﺳَﺒِّﺢْ ﺑِﺤَﻤْﺪِ ﺭَﺑِّﻚَ ﺑِﺎﻟْﻌَﺸِﻲِّ ﻭَﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ

এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসা-সহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।(সূরা মু'মিন-৫৫)

উক্ত আয়াতে َﺍﻟْﺈِﺑْﻜَﺎﺭِ দ্বারা দিনের প্রথমাংশ উদ্দেশ্য।এবং ِاﻟْﻌَﺸِﻲِّ দ্বারা দিনের শেষাংশ উদ্দেশ্য।সুতরাং উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা গেল যে,দু'আয়ে মাছুরার  সময় হল,ফযরের সূচনা থেকে এবং আছরের পর থেকে।(আল-ওয়াবিলুস-সাঈব-২০০,শরহুল আযকার লি ইবনিল আল্লান-ইমাম নববী-৩/৭৪----১০০)

যেমন হাদীসে কিছু দু'আ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি সূরা বাক্বারার শেষ দু-আয়াত রাত্রে পড়বে,সেই রাত্রের জন্য এই দু-আয়াত যথেষ্ট হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী৪০০৮,সহীহ মুসলিম-৮০৭)

প্রকাশ থাকে যে,রাত মাগরিব থেকে শুরু হয়ে ফযরের সূচনার পূর্ব পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকে।সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য উচিৎ যে, সে যেন  প্রত্যেক দু'আ এবং যিকিরকে তার সময়ের ভিতরেই আদায় করে নেয়।যদি দু'আয়ে মাছুরা তার নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করে যায়,তাহলে কি পরবর্তীতে সে এগুলোর কাযা করতে পারবে?

শাঈখ উসাঈমিন রাহ. বলেন,দু'আয়ে মা'ছুরা  সমূহকে কেউ ভূলে গেলে যদি  ভিন্ন সময়ে তার কাযা করে নেয় তাহলে আমি মনে করি যে,সে এর উপর সওয়াব প্রাপ্ত হবে।আমি অধমও মনে করি সে সওয়াব প্রাপ্ত হবে।

* বদনজরের কুরআনি আমল বদজনজর এড়াতে নিয়মিত কুরআনি এ আমলগুলো করা যেতে পারে। নিয়মিত কুরআনি আমলে আল্লাহ তাআলা বদনজর থেকে মুক্ত করবেন। আর তাহলো-সুরা ফাতিহা পড়া, আয়াতুল কুরসি পড়া (সুরা বাকারা, আয়াত ২৫৫), সুরা বাকারার শেষের দুই আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬), সুরা ইখলাস পড়া,সুরা ফালাক্ব পড়া এবং সুরা নাস পড়া।

বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া

বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঝাঁড়-ফুক দেয়া। বদনজরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ঝাঁড় ফুকের সময় এ দোয়া পড়া-

بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ وَمِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أوْ عَيْنٍ حاَسِدٍ اللهُ يَشْفِيْكَ بِسْمِ اللهِ أرْقِيْكَ

অর্থ : আল্লাহর নামে কষ্ট দানকারীর সব অনিষ্টতা থেকে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। হিংসুক ব্যক্তির কুদৃষ্টির অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাঁড়-ফুক করছি। আল্লাহ তোমাকের আরোগ্য দান করতে তারই নামে ঝাঁড়-ফুক করছি।’ (বুখারি ও মুসলিম)

أعُوذُ بِكَلِماَتِ اللهِ التاَّمَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطاَنٍ وَهاَمَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ

অর্থ : ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামসমূহের মাধ্যমে শয়তানের সব আক্রমণ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। বিষধর প্রাণীর ও বদনজরকারীর অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (বুখারি)

بِسْمِ اللهِ يُبْرِيْكَ ومِنْ كُلِّ داَءٍ يَشْفِيْكَ، ومِنْ شَرِّ حاِسِدٍ إذاَ حَسَدَ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ ذِيْ عَيْنٍ

অর্থ : ‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, তিনি তোমাকে মুক্ত করুন, প্রত্যেক অসুখ থেকে আরোগ্য দান করুন, প্রত্যেক হিংসুকের হিংসা থেকে এবং প্রত্যেক বদনযরের অনিষ্ট থেকে (মুক্ত করুন)।’ (মুসলিম)

*আরবীতে দোয়াটি হলো,

 اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنْهُ حَرَّهَا وَبَرْدَهَا وَوَصَبَهَا ( إعجاز القرآن في علاج السحر والحسد ومسّ الشيطان – ص 109 )

(মুস্তাদরাকে হকেম,নাসাঈ)

মাসনূন দোয়াগুলি যেভাবে সকাল সন্ধা পড়া হয়, সেভাবে উক্ত দোয়াটিও সকাল সন্ধা তিনবার করে পড়বে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...