ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১.২)
ইদ্দত কাকে বলে? সে সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে..
هي انتظار مدة معلومة يلزم المرأة بعد زوال النكاح حقيقة أو شبهة المتأكد بالدخول أو الموت كذا في شرح النقاية للبرجندي.
ইদ্দত হল,স্বাভাবিক বিবাহ বিচ্ছেদ বা খালওয়াতে সহীহা(তথা স্বামী-স্ত্রী সহবাসের নিকটবর্তী আচরণ বা নির্জনে বসবাস) বা স্বামীর মৃত্যুর পর মহিলা কর্তৃক শরীয়ত নির্ধারিত কিছুটা সময় অপেক্ষা করা।(অন্য কোথাও বিয়ে না বসা)
ইদ্দত দুই প্রকার
(১)তালাকের ইদ্দত
(২)স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত
(১)তালাকের ইদ্দত সাধারণত তিন হায়েয বা তিন মাসিক।ছোট বালিকা যার হায়েয এখনো আসেনি বা বৃদ্ধা মহিলা যার হায়েয বন্ধ হয়ে গেছে,তার ইদ্দত হল তিন মাস।আর স্ত্রী গর্ভবতী হলে উক্ত স্ত্রীর ইদ্দত হল সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া।
(২)স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তখন স্ত্রীর ইদ্দত হল চার মাস দশদিন।স্ত্রী সন্তানসম্ভাবনা হলে স্ত্রীর ইদ্দত হল এক্ষেত্রে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া। ইদ্দত পালন কালে স্বামীর উপর স্ত্রীর ভরণপোষণ ওয়াজিব।
ইদ্দত পালনকারিণীর অবস্থানঃ
عَلَى الْمُعْتَدَّةِ أَنْ تَعْتَدَّ فِي الْمَنْزِلِ الَّذِي يُضَافُ إلَيْهَا بِالسُّكْنَى حَالَ وُقُوعِ الْفُرْقَةِ وَالْمَوْتِ كَذَا فِي الْكَافِي.
ইদ্দত পালনকারীণী ঐ ঘরে ইদ্দত পালন করবে যেখানে সে বিবাহ বিচ্ছেদন সময়ে বা স্বামীর মৃত্যুকালীন সময়ে অবস্থান করে আসছিলো।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৫৩৫)
الْمُتَوَفَّى عَنْهَا زَوْجُهَا تَخْرُجُ نَهَارًا وَبَعْضَ اللَّيْلِ وَلَا تَبِيتُ فِي غَيْرِ مَنْزِلِهَا كَذَا فِي الْهِدَايَةِ.
স্বামী মৃত্যুর ইদ্দত হলে স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতেই অবস্থান করবে।বিশেষ প্রয়োজন হলে দিনে ও রাত্রের পাথমিক অংশে বাহিরে যেতে পারবে।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৫৩৪)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
ইদ্দতের সময় বিয়ে করলে বিয়ে-ই সহীহ হয় না।ইদ্দতের সময় হল,তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর দিন থেকে পরবর্তী সময়।সুতরাং তালাক বা স্বামী মৃত্যুর পর যদি ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হয়ে যায়,আর এমতাবস্থায় স্ত্রী ইদ্দত পালন না করে,তাহলে পরবর্তীতে আর ইদ্দত পালনের কোনো প্রয়োজনিয়তা নাই। সুতরাং ইদ্দতের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শুধুমাত্র বিয়ে করে নিলেই হবে। ইদ্দত পালন করা লাগবে না।
(৩)
স্বামীর পক্ষ থেকে যে তালাক দেয়া হয় সেটাকে তালাক বলা হয়।
আর স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাযী সাহেব বা উনার স্থলাভিষিক্ত কারো নিকট তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে মালের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা বলে। অথবা স্বামী মালের বিনিময়ে তালাক দিতে রাজি হলে স্বামী -স্ত্রী তারা পরস্পরও খুলা তালাক দিতে পারবে।
যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
إزَالَةُ مِلْكِ النِّكَاحِ بِبَدَلٍ بِلَفْظِ الْخُلْعِ كَذَا فِي فَتْحِ الْقَدِيرِ وَقَدْ يَصِحُّ بِلَفْظِ الْبَيْعِ وَالشِّرَاءِ وَقَدْ يَكُونُ بِالْفَارِسِيَّةِ كَذَا فِي الظَّهِيرِيَّةِ..............
.......(وَحُكْمُهُ) وُقُوعُ الطَّلَاقِ الْبَائِنِ كَذَا فِي التَّبْيِينِ.
وَتَصِحُّ نِيَّةُ الثَّلَاثِ فِيهِ.
وَلَوْ تَزَوَّجَهَا مِرَارًا وَخَلَعَهَا فِي كُلِّ عَقْدٍ عِنْدَنَا لَا يَحِلُّ لَهُ نِكَاحُهَا بَعْدَ الثَّلَاثِ قَبْلَ الزَّوْجِ الثَّانِي كَذَا فِي شَرْحِ الْجَامِعِ الصَّغِيرِ لِقَاضِي خَانْ
খুলার সজ্ঞাঃ
খুলা(বা তার সমার্থক) শব্দাবলী দ্বারা মালের বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করাকে খুলা বলে।
খুলা 'ক্রয়-বিক্রয় ' শব্দ দ্বারাও সংগঠিত হতে পারবে।কখনো ফারসি শব্দাবলী দ্বারাও সংগঠিত হবে।(যাহিরিয়্যাহ)
খুলার হুকুম হলঃ
খুলা করার দ্বারা বায়িন তালাক পতিত হয়।সাধারণত এক তালাকে বাইনই পতিত হবে,তবে তাতে তিন তালাকের নিয়্যাত ও বিশুদ্ধ হবে।
যদি কেউ কোনো মহিলাকে বারবার বিয়ে করে।এবং প্রত্যেকবারই বিয়ের করার পর খুলা করে নেয়।তাহলে ঐ স্বামীর জন্য উক্ত খুলাকৃত স্ত্রীকে তিনবার খুলার পর আর বিয়ে করতে পারবে না।
হ্যা তিনবার খুলা করার পর যদি উক্ত স্ত্রী অন্য স্বামীকে গ্রহণ করে অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়,তাহলে ঐ মহিলা জন্য দ্বিতীয়বার প্রথম স্বামীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া;১/৪৮৮)
খুলা তালাকের পদ্ধতি হল,
স্ত্রী স্বামীকে মালের বিনিময়ে তালাকের প্রস্তাব দিবে।এবং স্বামী কবুল করবে।
স্ত্রী স্বামীকে লক্ষ্য করে বলবে, আমি এত টাকার বিনিময়ে তোমার নিকট খুলা তালাক চাই।এবং স্বামী বলবে, আমি রাজি, বা আমি তোমাকে খুলা তালাক দিলাম,ইত্যাদি।