হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْوَلِيدِ الْكِنْدِيُّ الْكُوفِيُّ، حَدَّثَنَا الْمُفَضَّلُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " اشْتَكَتِ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا وَقَالَتْ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَجَعَلَ لَهَا نَفَسَيْنِ نَفَسًا فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسًا فِي الصَّيْفِ فَأَمَّا نَفَسُهَا فِي الشِّتَاءِ فَزَمْهَرِيرٌ وَأَمَّا نَفَسُهَا فِي الصَّيْفِ فَسَمُومٌ "
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন একদিন জাহান্নাম তার প্রভুর নিকট অভিযোগ করে বললো যে, আমার এক অংশ অন্য অংশকে গ্রাস করছে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা তার জন্য দুটি নিঃশ্বাসের ব্যবস্থা করেন। এর একটি নিঃশ্বাস শীতকালে এবং অন্যটি গ্রীষ্মকালে ৷ শীতকালের নিঃশ্বাস ‘যামহারীর’ (শৈত্যপ্রবাহ) এবং গ্রীষ্মের নিঃশ্বাস সামূম (লু হওয়া)।
সহীহ : বুখারী ৫৩৭-৫৩৮, মুসলিম ৬১৫, তিরমিযী ২৫৯২, ইবনু মাজাহ্ ৪৩১৯, আহমাদ ৭২৪৭, দারেমী ২৮৮৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৭৪৬৬।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
জাহান্নামের শ্বাস-প্রশ্বাস তার আসল ও প্রকৃত অর্থে আছে।
কিছু ‘আলিম বলেন যে, প্রকৃত অর্থে নেই বরং রূপক অর্থে আছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটি যথাযথ। ইমাম নাবাবীও প্রথম উক্তিটি সমর্থন করেছেন।
কিন্তু এখানে একটি আপত্তি ও প্রশ্ন দেখা দেয় যে, পৃথিবীর উপর গরমটি তো কম-বেশী হয় সূর্যের নিকট ও দূরে হওয়ার কারণে। তাহলে পৃথিবীর গরমটি সূর্যের কারণে হলো জাহান্নামের কারণে নয়। উত্তর হলো এই যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা‘আলা রব্বুল ‘আলামীন সূর্যের ও জাহান্নামের মাঝে একটি সূক্ষ্ম সংযোগ ও সম্পর্ক সৃষ্টি করে রেখেছেন। যে সংযোগের মাধ্যমে সূর্য জাহান্নাম থেকে তাপ সংগ্রহ করে পৃথিবীর বুকে ছাড়ছে। আমরা মানুষ আমাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে সূর্য। আর উপলব্ধি করছি সূর্যের তাপ। প্রকৃতপক্ষে যে তাপটি আমরা অনুভব করি তা হচ্ছে জাহান্নামের তাপ। আর সূর্য ঐ তাপটি আমাদের নিকট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি যন্ত্র মাত্র।
,
★কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলোঃ জাহান্নামের নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকাল নয় বরং গ্রীষ্মকালে জাহান্নাম নিঃশ্বাস নেয়। শীতকাল জাহান্নামের নিঃশ্বাস নয় বরং শীতকালে জাহান্নাম নিঃশ্বাস নেয়।
ইমাম ইবনু আব্দিল বার(র.) তার তামহীদ গ্রন্থে এই হাদিসের ব্যাখ্যায় এটি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।
قال ابن عبد البر رحمه الله :
"وأما قوله : (فأذن لها بنفسين : نفسٍ في الشتاء ، ونفس في الصيف) : فيدل على أن نفَسها في الشتاء : غير الشتاء ، ونفَسها في الصيف : غير الصيف" انتهى .
" التمهيد " ( 5 / 8 )
অর্থঃ এটি থেকে বোঝা যায় যে জাহান্নামের নিঃশ্বাস শীতকালে ঘটে। নিঃশ্বাস শীতকাল নয়। জাহান্নামের নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকালে ঘটে। নিঃশ্বাস গ্রীষ্মকাল নয়।
আত তামহীদ- ৮/৫
কিছু ইসলামী স্কলার গন বলেছেনঃ
শীত গ্রীষ্মের তীব্রতার জন্য প্রত্যক্ষ কারণ হল সাড়ে তেইশ ডিগ্রী কোণে হেলে থাকা পৃথিবীর উপর সূর্যের তীর্যক বা খাড়াভাবে আলো দেয়া। আর পরোক্ষ কারণ হল জাহান্নামের নিঃশ্বাস। রাসূল(ﷺ) এখানে পরোক্ষ কারণ উল্লেখ করেছেন কারণ এ প্রসঙ্গে এটিই আমাদের জানা প্রয়োজন আর তা "ওহী" ছাড়া জানার সুযোগ নেই। আর প্রত্যক্ষ কারণকে উল্লেখ করেননি অপ্রআসঙ্গিক হওয়ায়। আর সেটা তো মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি দ্বারাই বুঝতে সক্ষম।
সুতরাং এটা সুনিশ্চিত যে পরোক্ষ কারণের উল্লেখ প্রত্যক্ষ কারণের অনুপস্থিতিকে আবশ্যক করে না।তাই শীত-গ্রীষ্মকালের তীব্রতার জন্য জাহান্নামের নিঃশ্বাসকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা সূর্যের আলো বিভিন্ন কোণে পতিত হওয়ার তারতম্যের কারণকে বাতিল করে না।