আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
607 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (25 points)
আসসালামু আ'লাইকুম

১) শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহ কি হানাফি ছিলেন ?

২) ইমাম আবু হানিফা রহ কে নিয়ে ওনার সমসাময়িক ও পরবর্তী অনেক বড় বড় ইমামদের সমালোচনা পাওয়া যায় , বিশেষ করে হাদিস শাস্রে । ওনী কি সত্যিই হাদিস শাস্রে মিসকিন ছিলেন ?  শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহ নাকি বলেছেন - ইমাম আবু হানিফা কোন বই লেখেননি ।

৩) আরবের অনেক বড় বড় আলিম আহলে হাদিসের পক্ষে মত দিয়েছে কেও কেও তাবলীগ ও দেওবন্দিদের সমালোচনা করেছে । এসব দেখে মাজহাব মানার প্রতি আবার সংশয় দেখা দিয়েছে । video link : https://fb.watch/74mx2aeVet/  । ওনাদের বক্তব্য কি সঠিক ?

বক্তব্য দিয়েছেন-

শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায (রহিমাহুল্লাহ)

প্রয়াত গ্র‍্যান্ড মুফতি, সৌদি আরব

শাইখ ড. সালেহ আল ফাওযান

সদস্য, সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ, সৌদি আরব

শাইখ ড. আব্দুর রহমান আস-সুদাইস

প্রধান ইমাম, মসজিদ আল হারাম ও মসজিদ আন নববী

প্রেসিডেন্ট, হারামাইন শরিফাইন পরিচালনা অধিদপ্তর

শাইখ ড. সৌদ আশ-শুরাইম

ইমাম, মসজিদ আল হারাম

শাইখ ড. খালিদ গামিদি

সাবেক ইমাম, মসজিদ আল হারাম

শাইখ ড. সালেহ আল-তালিব

সাবেক ইমাম, মসজিদ আল হারাম

শাইখ ড. আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম

ইমাম, মসজিদ আন নববী

শাইখ ড. সুলাইমান আর-রুহাইলী

ইমাম, মসজিদুল কুবা, মুদাররিস, মসজিদ আন নববী, মদীনা

শাইখ ড. উসমান খামিস

কিবার আলেম, কুয়েত

1 Answer

0 votes
by (574,110 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ হানাফি ছিলেন কিনা,এই মর্মে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
,   
ফুয়ুযুল হারামাইন এর ১০২ নং পৃষ্ঠায় শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ বলেনঃ

اعلم ان الملل والمذاہب بالحقیقةیقال ملة حقة․․․․․․․معنیین: احدھما جلی والآخر دقیق یری من بعد ……وکذلک معنی حقیة المذہب ان یکون احکامہ مطابقة لما قالہ رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم فی نفس الامر ولما کان علیہ القرون المشہود لھا بالخیر ، وان کانت المسألة لا نص فیھا ولا روایة فحقیقتہا ان تکون محفوفة بقرائن تورث غالب الظن بان النبی صلی اللہ علیہ وسلم لو تکلم فی المسألة لما نطق بغیر ھذاالقول …… وکذلک المذھب ربما یکون العنایة المتوجہة الی حفظ ملة حقة متوجہة بحسب معدات الی حفظ مذہب خاص بأن یکون حفظة المذہب یومئذ ھم القائمین بالذب عن الملة ۔وھذا المعنی الدقیق لا یوقف علیہ الا بالنور النبوی …فنقول ترای لی ان فی المذھب الحنفی سرا غامضا ثم لم ازل اتحدث فی ھذا السر الغامض حتی شاہدت ان لھذا المذھب یومنا ھذا رجحانا علی سائر المذاھب بحسب ھذا المعنی الدقیق، الخ۔“
শেষাংসে বলা হয়েছেঃ
আমরা বলি যে হানাফি মাযহাবের মধ্যে রহস্যময় গোপন দেখা যায়।
অতঃপর আমি সেগুলো সম্পর্কে গবেষণা করি,বলি।
এমনকি আমার সামনে পরিলক্ষিত হয়েছে যে এই যুগে হানাফি মাযহাবই বাকি মাযহাব গুলোর উপর প্রাধান্য পাবে,,,,। 
  
,
★তাই অনেকেই এসব লেখার উপর ভিত্তি করে শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ হানাফি বলেন।
আল্লাহই ভালো জানেন।
(০২)
আবু হানিফা রহঃ হাদিস বিশারদ ছিলেন।
হাদীস শাস্ত্রেও তিনি অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
মুয়াফফাক আলমক্কী রাহ. (৫৬৪ হি.) ‘মানাকিবু আবী হানীফা’’ গ্রন্থে (খন্ড ২, পৃষ্ঠা : ১৫১-১৫২) আবু ইসমা সা’দ ইবনে মুয়ায রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে উল্লেখ করেছেন। তিনি আবু সুলায়মান জুযাজানী থেকে, তিনি ইমাম মুহাম্মাদ রাহ. থেকে, আর তিনি ইমাম আবু ইউসুফ রাহ. থেকে বর্ণনা করেছেন।

 ইমাম আবু ইউসুফ বলেন-

كنا نكلم أبا حنيفة في باب من أبواب العلم، فإذا قال بقول واتفق عليه أصحابه درت على مشايخ الكوفة هل أجد في تقوية قوله حديثا أو أثرا؟ فربما وجدت الحديثين أو الثلاثة فآتيه بها، فمنها ما يقبله ومنها ما يرده، فيقول : هذا ليس بصحيح أوليس بمعروف، وهو موافق لقوله! فأقول له : وما علمك بذلك؟ فيقول : أنا عالم بعلم الكوفة.

 ‘আমরা আবু হানীফা রাহ.-এর সাথে একটি অধ্যায় নিয়ে আলোচনা করতাম। এরপর যখন তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন এবং তার সঙ্গীরাও একমত হতেন তখন আমি কুফার শায়েখগণের  কাছে যেতাম তার সিদ্ধান্তের সমর্থনে আরো কোনো হাদীস বা আছর পাই কিনা। কখনো দুইটি বা তিনটি হাদীস পেতাম। তাঁর কাছে পেশ করার পর তিনি কোনোটি গ্রহণ করতেন আবার কোনোটি এই বলে বর্জন করতেন যে, এটি সহীহ নয় বা মারুফ নয়। অথচ তা তার সিদ্ধান্তের অনুকূলে। আমি বলতাম, এ সম্পর্কে  আপনার ইলম কীরূপ। তিনি বলতেন, আমি কূফা নগরীর ইলমের ধারক
,
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কতজন সাহাবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন—এ প্রসঙ্গে মতভেদ রয়েছে। আল্লামা ইবনে হাজর মাক্কি (রহ.) বলেছেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) আটজন সাহাবির সাক্ষাৎ লাভ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন আবদুল্লাহ ইবন আবু আওফা (রহ.), আনাস ইবনে মালিক (রা.), সাহল ইবনে সায়াদ, আবুত্তোফাইন (রা.) (আল খাইরাতুল হাসান, পৃষ্ঠা : ২২, আল মানাকেব লিল মাক্কি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২৪)
,
হাফেজ মুহাম্মদ ইউসুফ সালেহি শাফেয়ি (রহ.) বলেন, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) হাদিসের বড় বড় হাফেজ ও শীর্ষদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি যদি হাদিসের প্রতি খুব বেশি মনোযোগী না হতেন ও ব্যুৎপত্তিসম্পন্ন না হতেন, তাহলে ফিকহের মাসআলা-মাসাইল বের করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হতো না। (তাবাকাতুল হুফফাজ, আল হাদিস ওয়াল মুহাদ্দিসুন, পৃষ্ঠা-২৮৪)

মুহাদ্দিস ইয়াহিয়া ইবনে মুঈনকে যখনই ইমাম আবু হানিফা (রহ.) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতো, তখনই তিনি বলতেন তিনি নির্ভরযোগ্য, বিশ্বস্ত, ভুলভ্রান্তিমুক্ত। হাদিসের ব্যাপারে কেউ তাঁকে দুর্বল বা অগ্রহণযোগ্য বলেছেন বলে আমি শুনিনি। (উমদাতুল কারি, দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা : ১২)
,
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহঃ এর পক্ষ থেকে আবু হানিফা রহঃ এর বই না লেখা সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুজে পাইনি।
,
(০৩)
যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে,তাদের অধিকাংশই সালাফি।
সালাফিরা মূলত হাম্বলী মাযহাবের একাংশ যারা ব্যক্তি তাকলীদ করেন না।তবে তারা অন্যদেরকে ভালমন্দ কিছু বলেন না।

আরো জানুনঃ 

যারা নির্দিষ্ট কোনো ইমামের মত অনুসরণ করেনা,তারাও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত। 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
https://ifatwa.info/1936/ ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,   

তাকলীদের দু'টি শাখা রয়েছে।
  1. (ক)তাকলীদে শাখসী
  2. (খ)তাকলীদে গায়রে শাখসী।
যেহেতু সর্বসম্মতভাবে মতলকে তাকলীদ ফরয।এবং তার দু'টি শাখা রয়েছে।তাই কোনো একটাকে মেনে নিলেই ফরয বিধান যে তাকলীদ রয়েছে,সেটা পালন হয়ে যাবে। চায় শাখসীকে পালন করা হোক বা গায়রে শাখসীকে পালন করা হোক।সুতরাং তাকলীদে গায়রে শাখসী করা দ্বারা ঠিক সেভাবেই ফরয দায়িত্ব আদায় হবে,যেভাবে তাকলীদে শাখসী দ্বারা ফরয দায়িত্ব আদায় হয়। কেননা মা'মুর বিহি তথা আদেশকৃত জিনিষ তাকলীদ হচ্ছে, মতলক বা ব্যাপক।তাই তার যে কোনো একটি শাখাকে আদায় করে নিলেই মা'মুর বিহি আদায় হয়ে যায়।যেমন কেউ তার খাদেমকে নির্দেশ দিল একজন ব্যক্তি উপস্থিত করার জন্য। তাহলে এক্ষেত্রে খাদেমের স্বাধীনত থাকবে,সে বকর, উমর যে কাউকে উপস্থিত করতে পারবে। এবং সে যাকেই ঢেকে নিয়ে আসবে,তার দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে। 

সুতরাং যেহেতু কুরআনের ঘোষনা অনুযায়ী তাকলীদ করা ফরয।এবং এই তাকলীদের দু'টি শাখা রয়েছে,যা আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি।সাহাবা তাবেঈনদের যুগে উভয়টির উপরই আ'মল ছিলো। তাদের কেউ কেউ তাকলীদে শাখসী করতেন।আবার কেউ তাকলীদে গায়রে শাখসী তথা অনির্দিষ্ট তাকলীদ করতেন।এক্ষেত্রে কেউ কাউকে ভাল মন্দ কিছুই বলতেন না।এবং কেউ কাউকে অস্বীকার বা তিরস্কার কিছুই করতেন না। মোটকথাঃ দুই প্রকার তাকলীদই সাহাবা তাবেঈনদের জমানায় প্রচলিত ছিলো।কিন্তু যখন হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীতে অনেক মাযহাব ও মুজতাহিদের অাবির্ভাব হওয়া শুরু হল।অনেক কম মাস'আলা ই হালাল-হারামের ইখতেলাফ থেকে অবশিষ্ট থাকল।অন্যদিকে মানুষের সামনে প্রবৃত্তি তার ডানা মেলে দাড়াল।যেজন্য লোকজন রুখসতকে তালাশ করতে শুরু করল।যে ইমামের মাস'আলা নিজের প্রবৃত্তি অনুযায়ী হল, লোকজন সেটাকে অনুসরণ করতে শুরু করল।সাথে সাথে অন্য ইমামের মাযহাব কে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল,এই শ্বাসত দ্বীন একটা প্রবৃত্তির সমষ্টি হয়ে যাচ্ছে।দ্বীন-ইসলামকে অনুসরণ করার স্থলে লোকজন নিজ প্রবৃত্তির পূজা করতে শুরু করে দিল। এহেন পরিস্থিতে সে সময়ের বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম চিন্তা করলেন,যে তাকলীদে গায়রে সাখসী তথা স্বাধীন তাকলীদের ধরুণই যেহেতু এই সমস্যা হচ্ছে এবং ভবিষ্যততে আরো হবে। তাই তারা ভাবলেন, এখনই লোকজনকে স্বাধীন তাকলীদ থেকে বাধা প্রদাণ করতে হবে।এবং সবাইকে তাকলীদে শাখসীর উপর একাট্টা করতে হবে।নতুবা দ্বীন- ইসলাম ধংশ হয়ে যাবে। সুতরাং এই সমস্ত কারণেই তাকলীদে শাখসীর উপরই ইজমা সংঘটিত হয়ে গেলো। 

 নাওয়াব সিদ্দিক হাসান খান আল-ইনসাফ(৯৫) গ্রন্থে লিখেন, হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর পর থেকে মানুষের মধ্যে তাকলীদে শাখসীর সূচনা হয়।এবং এ সময় এটা ওয়াজিব ছিলো। যেহেতু তাকলীদের দু'টি শাখার মধ্যে তাকলীদে গায়রে শাখসী ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।এজন্য এখন কুরআন হাদীসে ঘোষিত ফরয তাকলীদ শুধুমাত্র তাকলীদে শাখসীতেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।এবং সবার জন্য এটা ওয়াজিব হয়ে গেছে।(জাওয়াহিরুল ফিকহ-২/২৪) 

 সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন! 
মুজতাহিদ ফিল মাযহাব তথা বিজ্ঞ আলেম ব্যতীত সবার জন্য তাকলীদে শাখসী করা ওয়াজিব।দৈনন্দিন জীবনের সকল মাস'আলায় কোনো একজন মুজতাহিদ বা মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব। 

মাযহাব সংক্রান্ত আরো জানুনঃ 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...