ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
মুসাল্লির এমন নড়াচড়া যা নামায পরিপন্থী, তা দু-ভাগে বিভক্ত-
(ক)পরিমাণে সামান্য, যাকে শরয়ী পরিভাষায় 'আ'মলে ক্বালীল' বলা হয়ে থাকে।
(খ)পরিমাণে বেশী যাকে শরয়ী পরিভাষায় 'আ'মলে কাসির' বলা হয়ে থাকে।
নামাযরত অবস্থায় মুসাল্লির কোনো প্রকার হারকাত/নড়াচড়া 'আ'মলে কাছির' বলে প্রমাণিত হলে,উক্ত মুসাল্লির নামায সর্বসম্মতিক্রমে ফাসিদ হয়ে যাবে।
আ'মলে কাছির নির্ণয়ে ফুকাহায়ে কেরামের মধ্য যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।যথা-
(১)সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযানী 'আ'মলে কাছির' বলা হয়,এরূপ নড়াচড়া-কে যে, নড়াচড়ায় কর্মরতকে মুসাল্লি সম্পর্কে নামাযের বাহির থেকে অবলোকনকারীর নিশ্চিত ধারণা জন্মে যে,সে এখন আর নামাযে নেই। এ ধরনের কাজ দ্বারা তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু যদি উক্ত মুসাল্লি সম্পর্কে নামাযরত বলে ধারণা করা যায়,তাহলে এমতাবস্থায় সে কাজকে 'আ'মলে কাছীর' বলা যাবে না।বরং একে 'আ'মলে ক্বালিল'-ই বলা হবে, এবং তখন নামায নষ্ট হবে না।
(২)যে সমস্ত কাজে সাধারণত দু'হাত ব্যবহৃত হয়,সেটাকে আ'মলে কাছির বলে,যেমন লুঙ্গী বাঁধা ও পাগড়ী বাঁধা।ঐ সমস্ত কাজ যদি একহাত দ্বারাও করা হয় তবে ও তা আ'মলে কাসির বলে গণ্য হবে।
এবং যেই সমস্ত কাজ সাধারণত একহাত দ্বারা করা হয়,সেই সমস্ত কাজকে যদি তখন দুই হাত দ্বারাও করা হয়, তবে তাকে আ'মলে কাছির বলা যাবে না বরং তাকে আ'মলে ক্বালিল-ই বলা হবে, যতক্ষণ না তা তিন হরকত পরিমাণ হয়।যেমন লুঙ্গী খোলা,ও টুপি পরিধান করা,ইত্যাদি।
(৩) ধারাবাহিক তিনবার হারকাত (নড়াচড়া, চুলকানো,কাপড় বা অঙ্গ নিয়ে খেলায় মত্ত হওয়া) অর্থাৎ এই তিন হারকাত ধারাবাহিক ভাবে কোনো এক রুকুনের মধ্যে না হওয়া।যদি এমন হয় তাহলে এটা 'আ'মলে কাছির'।নতুবা সেটা আ'মলে ক্বালীল।
(৪) কর্তার ইচ্ছাকৃত এমন কাজ যেটাকে সাধারণত কোনো স্বতন্ত্রস্থানে করা হয়।যেমনঃ নামাযের মধ্যে বাচ্ছা কর্তৃক মহিলার দুধ পান করানো,এবং উত্তেজনার সাথে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে চুমু দেওয়া বা স্পর্শ করা।ইত্যাদি।
(৫) নামাযির রায়ের উপর নির্ভরশীল।সে যে কাজকে কাছির মনে করবে,সেটা আ'মলে কাছির,অন্যথায় আ'মলে ক্বালীল।
দ্বিতীয়,তৃতীয়,চতুর্থ প্রকার মূলত প্রথম প্রকারের ব্যখ্যা। এভাবে যে,দ্বিতীয়,তৃতীয় ও চতুর্থ প্রকারগুলির মধ্যে উল্লেখিত কাজের কর্তাকে নামাযের বাহির থেকে অবলোকন কারীর নিশ্চিত ধারণা জন্মিবে যে, সে এখন আর নামাযে নেই।
মুদ্দাকথা:
প্রথম চার প্রকারই 'আ'মলে কাছির' হওয়ার বেলায় গ্রহণযোগ্য।পঞ্চম প্রকার 'আ'মলে কাছির বলে ধর্তব্য হবে না।কেননা সব মানুষের অনুভূতি সমান নয়।কেউ একটা কাজকে 'আ'মলে কাছির' মনে করলে অন্যজন এটাকে 'আ'মলে ক্বালিল' মনে করবে।এক্ষেত্রে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকে যায়।যেমন,এক ইমামের পিছনে একি কাজে জড়িত মুসাল্লিদের মধ্য থেকে ঐ সমস্ত ব্যক্তিবর্গের নামায ফাসিদ হবে,যাদের ধারণা হবে যে,এটা 'আ'মলে কাছির'।আর ঐ সমস্ত মুসাল্লিদের নামায ফাসিদ হবে না যাদের ধারণা হবে যে, এটা 'আ'মলে ক্বালিল'।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আমলে কাসির হলে নামায ফাসিদ হয়ে যাবে। আমলে কাসির না হলে নামায ফাসিদ হবে না।
(২)
কোনো অঙ্গ ধুতে বিলম্ব হলেও আপনার অযু হয়ে গেছে। তবে অযুর ক্ষেত্রে সুন্নত হল, এক অঙ্গ শোকানোর আগেই পরবর্তী অঙ্গ ধৌত করা। তাই বিনা ওজরে এমনটি করা যাবে না। ওজর বশত এমনটি হলে কোনো সমস্যা নেই।(বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
শুধুমাত্র আটার আবরণ ঘষে তুলে হাত ধুয়ে নিলেও হবে, তবে উত্তম হল, আবার অজু করে নেওয়া।
(৩) শিয়াদের মধ্যে যারা যারা আলীকে নবী মানে, এবং বিশ্বাস করে যে, আলী আবার দুনিয়াতে আসবেন, এবং যারা মনে করে যে, কুরআন বত্রিশ পারা ছিল, তারা অবশ্যই কাফির। তারা কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর শিয়াদের মধ্যে যারা আলী রাযি কে নবী হিসেবে মানে না, তবে তারা সম্মান করে, এবং আবু-বকর উমরের উপরে স্থান দেয়, তারা গোমরাহ, তারা একদিন না একদিন জান্নাতে প্রবেশ করবে।
(৪) সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা , আলাহামদুলিল্লাহ বলা, এটাই শুকরিয়া আদায়ের জন্য যথেষ্ট । তাছাড়া আল্লাহর ওয়াস্তে দান খায়রাত করা, শুকরিয়া নামায পড়া, ইত্যাদি সবগুলিই শুকরিয়ার অন্তর্ভুক্ত।