বিসমিহি তা'আলা
নফল সদকা বা দান যে কাউকে করা যায় বা দেওয়া যায়।মুসলিম-অমুসলিম ধনী-গরীব এক্ষেত্রে সবাই সমান, সবাইকে দান করা যায়।তবে ফরজ যাকাত তা শুধুমাত্র গরীব মুসলমানকেই দিতে হবে,অমুসলিমকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হবে না।নফল সদকা যদিও সবাইকে দেওয়া যায়।তথাপি নেককার মুত্তাকি পরহেজগার লোক দেখে দেওয়া উত্তম। হাদিস শরীফে এসেছে...........
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عن ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ : « ﻣﺜﻞ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ، ﻭﻣﺜﻞ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ، ﻛﻤﺜﻞ ﺍﻟﻔﺮﺱ ﻓﻲ ﺁﺧﻴﺘﻪ ﻳﺠﻮﻝ، ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺁﺧﻴﺘﻪ . ﻭﺇﻥ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻳﺴﻬﻮ ﺛﻢ ﻳﺮﺟﻊ ﺇﻟﻰ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ . ﻓﺄﻃﻌﻤﻮﺍ ﺍﻃﻌﺎﻣﻜﻢ ﺍﻻﺗﻘﻴﺎﺀ، ﻭﺃﻭﻟﻮﺍ ﻣﻌﺮﻭﻓﻜﻢ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ »
ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﺑﺴﻨﺪ ﺟﻴﺪ، ﻭﺣﺴﻨﻪ ﺍﻟﺴﻴﻮﻃﻲ
তরজমা- নবী কারীম সাঃ বলেছেনঃ- মু'মিন এবং ঈমানের পরিছয় হচ্ছে,ঐ ঘোড়ার মত যাকে(ঘাস খাওয়ার জন্য)দড়ি দিয়ে বেধে দেয়া হয়েছিল,কিন্তু সে নির্ধারিত সীমানা থেকে দুরে যাওয়ার জন্য লাফালাফী ও ছুটাছুটি করছে, অতঃপর নিরাশ হয়ে আবার সে নির্ধারিত জায়গায় ফিরে আসছে।মু'মিন বান্দার দৃষ্টান্ত হইল সেই বেধে রাখা ঘোড়ার মত অর্থ্যাৎ সে মাঝে-মধ্যে ভুল করে বসে,অবশেষে আবার সে ঈমানের দিকে ফিরে আসে।সুতরাং তোমরা (এই পাপ মোচনস্বরূপ) নেককার লোকদেরকে আহার করাও।এবং মু'মিনদের সাথে তোমাদের দানকে বিষেশায়িত করো।
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায় যে,নেককার পরহেজগারদেরকে দান করা উত্তম।তবে নেককার পরহেজগার না হলেও সওয়াবে কোনো কমতি আসবেনা যা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে বুঝে আসছে।
হযরত আবু হুরইরহ রদিয়াল্লহু আ’নহু হইতে বর্ণিত আছে যে,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻫُﺮَﻳﺮَﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ، ﻋﻦِ ﺍﻟﻨﺒﻲِّ ﺻﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠَّﻢ ; ﺃﻥَّ ﺭﺟُﻠًﺎ ﺗﺼﺪَّﻕَ ﺑﺼﺪﻗﺔٍ ﻓﻮﻗﻌَﺖْ ﻓﻲ ﻳﺪِ ﺳﺎﺭﻕٍ، ﻓﺄﺻْﺒﺢ ﺍﻟﻨﺎﺱُ ﻳَﺘﺤﺪَّﺛﻮﻥ ﺑﺄﻧَّﻪ ﺗُﺼُﺪِّﻕ ﻋﻠﻰ ﺳﺎﺭﻕٍ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢَّ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻋﻠﻰ ﺳﺎﺭﻕٍ، ﻷﺗﺼﺪَّﻗﻦَّ ﺑﺼﺪﻗﺔٍ، ﻓﺘَﺼﺪَّﻕ ﻓﻮﻗﻌﺖْ ﻓﻲ ﻳﺪِ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻓﺄﺻﺒَﺢ ﺍﻟﻨﺎﺱُ ﻳﺘﺤﺪَّﺛﻮﻥ : ﺗُﺼُﺪِّﻕ ﻋﻠﻰ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢَّ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻋﻠﻰ ﺯﺍﻧﻴﺔ، ﻷﺗﺼﺪَّﻗﻦَّ ﺑﺼﺪﻗﺔٍ، ﻓﺨﺮﺝ ﺑﺼﺪﻗﺘِﻪ ﻓﻮﺿَﻌَﻬﺎ ﻓﻲ ﻳﺪِ ﻏﻨﻲٍّ، ﻓﺄﺻﺒﺤﻮﺍ ﻳﺘﺤﺪَّﺛﻮﻥ : ﺗُﺼُﺪِّﻕ ﻋﻠﻰ ﻏﻨﻲٍّ، ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢَّ ﻟﻚ ﺍﻟﺤﻤﺪُ ﻋﻠﻰ ﻏﻨﻲٍّ، ﻓﻘﻴﻞ : ﺃﻣَﺎ ﺻَﺪﻗﺘُﻚ ﻓﻘﺪ ﻗُﺒِﻠﺖ، ﺃﻣَّﺎ ﺍﻟﺰﺍﻧﻴﺔ ﻓﻠﻌﻠَّﻬﺎ ﺗﺴﺘﻌﻒُّ ﻣِﻦ ﺯﻧﺎﻫﺎ، ﻭﻟﻌﻞَّ ﺍﻟﺴﺎﺭﻕَ ﻳﺴﺘﻌﻒُّ ﻋﻦ ﺳﺮﻗﺘﻪ، ﻭﻟﻌﻞَّ ﺍﻟﻐﻨﻲَّ ﺃﻥ ﻳﻌﺘﺒﺮَ ﻓﻴُﻨﻔﻖ ﻣﻤَّﺎ ﺁﺗﺎﻩ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ،
তরজমা-রসুলুল্লহ সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন, (বনী ইসরাইলের) এক ব্যক্তি (মনে মনে) বলিল, আমি আজ (রাতে গোপনে) ছদকা করিব। সুতরাং (রাতে গোপনে সদকার মাল লইয়া বাহির হইল এবং অজ্ঞাতসারে) এক চোরের হাতে দিয়া দিল। সকালে লোকজনের মধ্যে আলোচনা হইল (যে, রাতে) চোরকে সদকা দেওয়া হইয়াছে। সদকা দানকারী বলিল, হে আল্লহ! (চোরকে সদকা দেওয়ার মধ্যেও) আপনার জন্যই প্রশংসা। (কেননা, তাহার অপেক্ষা আরও বেশি খারাপ মানুষকে যদি দেওয়া হইত তবে আমি কি করিতে পারিতাম।) অতঃপর সে দৃঢ় সংকল্প করিল যে, আজ রাত্রে(ও) অবশ্যই আমি সদকা করিব। (কেননা, পূর্বের সদকা তো নষ্ট হইয়া গিয়াছে) সুতরাং রাত্রে সদকার মাল লইয়া বাহির হইল এবং (অজ্ঞাতসারে) সদকা একজন ব্যাভিচারিণী মেয়েলোককে দিয়া দিল। সকালে আলোচনা হইল যে, আজ রাত্রে ব্যাভিচারিণী মেয়েলোককে সদকা দেওয়া হইয়াছে। সে বলিল, হে আল্লহ! ব্যাভিচারিণী মেয়েলোককে সদকা দেওয়ার মধ্যেও আপনার জন্যই প্রশংসা। (কেননা, আমার মাল তো এই উপযুক্তও ছিল না।) অতঃপর (তৃতীয়বার) ইচ্ছা করিল যে, আজ রাত্রে অবশ্যই সদকা করিব। অতএব, রাত্রে সদকার মাল লইয়া বাহির হইল এবং উহা একজন ধনী ব্যক্তির হাতে দিয়া দিল। সকালে আলোচনা হইল যে, রাত্রে একজন ধনী ব্যক্তিকে সদকা দেওয়া হইয়াছে। সদকা দানকারী বলিল, হে আল্লহ! চোর, ব্যাভিচারিণী মেয়েলোক ও ধনী ব্যক্তিকে সদকা দেওয়ার উপর আপনারই প্রশংসা। (কেননা, আমার মাল তো এরূপ লোকদের দেওয়ার উপযুক্তও ছিল না।) স্বপ্নে বলিয়া দেওয়া হইল যে, (তোমার সদকা কবুল হইয়া গিয়াছে।) তোমার সদকা চোরের উপর এইজন্য করানো হইয়াছে যে, হইতে পারে সে চুরির অভ্যাস হইতে তওবা করিয়া লইবে, ব্যাভিচারিণী মেয়েলোকের উপর এইজন্য যে, হইতে পারে সে ব্যাভিচার হইতে তওবা করিয়া লইবে (যখন সে দেখিবে যে, ব্যাভিচার ছাড়াও আল্লহ তায়া’লা দান করেন, তখন তাহার অনুভুতি আসিবে) আর ধনীর উপর এইজন্য, যাহাতে সে শিক্ষা লাভ করে (যে, আল্লহ তায়া’লার বান্দারা কিরূপে গোপনে সদকা করে; এই কারণে) হইতে পারে সেও ঐ সমস্ত মাল হইতে যাহা আল্লহ তায়া’লা তাহাকে দান করিয়াছেন, আল্লহ তায়া’লার পথে খরচ করিতে আরম্ভ করিবে।( মিশকাত১৬৫)
গরীর গুনাহগার হলে সেও তো আল্লাহর বান্দা,বিধায় কোথাও যদি নেককাররা সবাই ধনী থাকে,সেথায় ধনী নেককার মুসলমান ও গুনাহগার গরীর মুসলমান সবাই সমান, যে কাউকে আপনি দান করতে পারবেন।সওয়াবে কোনো সমস্যা হবে না।এমনকি গরীরকে দেয়াই উচিৎ মনে হচ্ছে।
যেমন হাদিস শরীফে এসেছ,
فرض رسول الله صلعم زكاة الفطر طهرة للصيام و طعمة للمساكين
তরজমা- নবী কারীম সাঃ সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব বা নির্ধারণ করেছেন রোজাকে পবিত্র করাও মিসকিনদের খাদ্য স্বরূপ।
উক্ত হাদিসে সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার হেকমত বলা হচ্ছে মিসকিনদের খাবার।মিসকিন সে যে কোনো ধরনেই হোক।
মূলকথাঃ
নেককার দেখে সদকাহ করা উত্তম।যদি প্রকাশ্যে কোন গোনাহগার গরীব থাকে এবং টাকা দিলে সে গুনাহে অংশগ্রহন করবে বলে প্রবল আশংকা থাকে। তাহলে এক্ষেত্রে টাকা না নিয়ে খাদ্য বস্র ইত্যাদি কিনে দেওয়াই উত্তম হবে। অর্থ্যাৎ তার প্রয়োজনকে পূর্ণ করা হবে।যদি কোনো কিছু কিনে দেয়া সম্ভব না হয়,তবে তাকে টাকাই দেয়া যেতে পারে।হয়তো সে টাকা পেয়ে গোনাহ থেকে ফিরে আসবে।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ