বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
- (১) আপনি যে হাদীস বলেছেন তার মূল আরবী পাঠ হল,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪٍ ﺍﻟﺨُﺪْﺭِﻱِّ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋﻨﻪُ - ﻗﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳﻘُﻮﻝ" : ﻣَﻦْ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣُﻨْﻜَﺮًﺍ ﻓَﻠْﻴُﻐَﻴِّﺮْﻩُ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻓَﺒِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻘَﻠْﺒِﻪِ ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺿْﻌَﻒُ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ
"
তরজমাঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত,নবীজী সাঃ বলেনঃ
তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি কোনো
অন্যায় কাজ দেখে,তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে ,না পারলে মুখ দিয়ে এবং না পারলে সে যেন তা অন্তর দিয়ে গৃণা করে।
এবং এটাই তার ঈমানের সর্বনিম্ন স্থর।(সহীহ মুসলিম শরীফ-৭৩)
অন্তর দিয়ে গৃনা করার অর্থ হচ্ছে,হালালকে হালাল জানা এবং তাকে মহব্বত করা।এবং হারামকে হারাম জানা ও গৃনা করা এবং তার থেকে দূরে থাকা।চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে,
٦ - ولا يسقط الإنكار بالقلب عن المكلف باليد أو اللسان أصلا، إذ هو كراهة المعصية، وهو واجب على كل مكلف، فإن عجز المكلف عن الإنكار باللسان وقدر على التعبيس والهجر والنظر شزرا لزمه، ولا يكفيه إنكار القلب، فإن خاف على نفسه أنكر بالقلب واجتنب صاحب المعصية. قال ابن مسعود رضي الله عنه: جاهدوا الكفار بأيديكم فإن لم تستطيعوا إلا أن تكفهروا في وجوههم فافعلوا (١) .
তরজমাঃ
হাত বা জবান দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করলে অন্তরের গৃনা রহিত হবে না,বরং অন্তর দিয়ে অবশ্যই গৃনা করতে হবে।কেননা তাহা তো গুনাহ হওয়ার ধরুণ গৃন্য।এবং গুনাহকে গৃনাহ করা প্রত্যেক জ্ঞানবান প্রাপ্তবয়স্কের উপর ওয়াজিব।
কেউ যদি জবান দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করতে অক্ষম হয়,কিন্তু মনকে চিন্তিত ও ব্যথিত রাখতে এবং উক্ত কাজকে পরিত্যাগ করতে ও তার দিকে হেয়প্রতিপন্নমূলক দৃষ্টি স্থাপন করতে সক্ষম হয়,তাহলে তার জন্য তাই করা অত্যাবশ্যকীয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মনের অপছন্দ যথেষ্ট হবে না।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে যদি কেউ প্রাণনাশের আশঙ্কা করে তাহলে এমতাবস্থায় অন্তর দিয়ে গৃনা করা তার জন্য ওয়াজিব।শুধু তাই নয় বরং সাথে সাথে উক্ত কাজকে পরিত্যাগ করাও তার জন্য ওয়াজিব।
ইবনে মাসউদ রাঃ বলেনঃ তোমরা কাফিরদের সাথে হাত দ্বারা যুদ্ধ করো।যদি তোমাদের চেহারায় গৃনা ও ব্যথিত হওয়ার চাপ প্রকাশ ব্যতীত আর কিছু না পারো তাহলে তোমরা তাই করো।(৬/২৫১)
অন্য একটি হাদীসে হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বিস্তারিত এভাবে বর্ণিত আছে যে,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ": ﻣﺎ ﻣﻦ ﻧﺒﻲ ﺑﻌﺜﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻣﺘﻪ ﻗﺒﻠﻲ ﺇﻻ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻪ ﺣﻮﺍﺭﻳﻮﻥ ﻭ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻳﺄﺧﺬﻭﻥ ﺑﺴﻨﺘﻪ ﻭ ﻳﻘﺘﺪﻭﻥ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﺛﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﺗﺨﻠﻒ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ ﺧﻠﻮﻑ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﻣﺎﻻ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﻣﺎﻻ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﻓﻤﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻴﺪﻩ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭ ﻣﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻠﺴﺎﻧﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭ ﻣﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻘﻠﺒﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭﻟﻴﺲ ﻭ ﺭﺍﺀ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺣﺒﺔ ﺧﺮﺩﻝ ." ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ . [ ( ﺭﻗﻢ ) 50
তরজমাঃ
নবীজী সাঃ বলেনঃ-অতীতে এমন কোনো নবী অতিবাহিত হননি যার কিছু সাহায্যকারী ও সাথী ছিলেন না,যারা সেই নবীর সুন্নাতকে আকড়ে ধরতেন এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতেন।অতঃপর তাদের পরবর্তী এমন কিছু লোক আসল যারা যা বলে তা তারা করে না এবং যা করে তা তারা বলে না।
যে ব্যক্তি (শরীয়ত বিরোধী কাজকে প্রতিহত করতে)হাত দ্বারা চেষ্টা প্রচেষ্টা করবে,সে মু'মিন।এবং যে জবান দ্বারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সেও মু'মিন। এবং যে অন্তর দ্বারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সেও মু'মিন। কিন্তু এর পরবর্তী ঈমানের দানা পরিমানও আর কোনো স্থর নেই।(সহীহ মুসলিম-৫০)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ উক্ত হাদীস সমূহের ব্যখা করতে যেয়ে বলেনঃ
ﻭﻗﻮﻟﻪ : « ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ » ﺃﻱ : ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ، ﻭﻫﻮ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺍﻟﻤﻄﻠﻖ، ﺃﻱ : ﻟﻴﺲ ﻭﺭﺍﺀ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺜﻼﺙ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ، ﻭﻻ ﻗﺪﺭ ﺣﺒﺔ ﺧﺮﺩﻝ . ﻭﺍﻟﻤﻌﻨﻰ : ﻫﺬﺍ ﺁﺧﺮ ﺣﺪﻭﺩ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ، ﻣﺎ ﺑﻘﻰ ﺑﻌﺪ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺷﻲﺀ، ﻟﻴﺲ ﻣﺮﺍﺩﻩ ﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻔﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﻟﻢ ﻳﺒﻖ ﻣﻌﻪ ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺷﻲﺀ، ﺑﻞ ﻟﻔﻆ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺇﻧﻤﺎ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﺍﻷﻭﻝ-
ﻣﺠﻤﻮﻉ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ | ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻟﺴﺎﺑﻊ
ﺗﻔﺴﻴﺮ ﺁﻳﺎﺕ ﻓﻴﻤﺎ ﺃﺣﻞ ﻭﻣﺎ ﺣﺮﻡ ﻣﻦ ﺍﻷﻃﻌﻤﺔ
তরজমাঃ
উপরোক্ত হাদীসে যে ঈমান থাকবে বলা হচ্ছে এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল "কামিল ঈমান" থাকবে না।অর্থাৎ উপরোক্ত ঈমানের তিন স্থর ব্যতীত কামিল ঈমানের আর কোনো স্থর নেই।
"এই তিন স্থর পর ঈমানের আর কোনো স্থর নেই "এ বাক্য দ্বারা এই উদ্দেশ্য নয় যে, অন্তর দ্বারা গৃনা না করলে তার আসল ঈমান অবশিষ্ট থাকবে না।বরং উদ্দেশ্য হল কামিল ঈমান অবশিষ্ট থাকবে না।যদিও তার আসল ঈমান বহাল থাকবে। তবে কিন্তু ফরয তরক করার ধরুন অবশ্যই তার শাস্তি হবে।
- ( ২)উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে বলা যায় যে,পূজা দেখে উপভোগ করার অর্থ যদি এমন হয় যে,এটা আমাদের ধর্ম থেকে উত্তম প্রার্থনা পদ্ধতি, আমিও এমন করতে চাই,বা আমাদের ধর্মে কেন এমন হলনা?তাহলে ঈমান চলে যাবে। আর যদি এমন না হয়, বরং পুজায় সংগঠিত ঘটনা বা তৎসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে উপভোগ করা হয় কিন্তু অন্তরে পুজাকে ঠিকই গৃনা করা হয় বা পুজাকে নিজের জন্য অপছন্দ করা হয়,তাহলে তার আসল(ত্রুতিপূর্ণ) ঈমান অবশ্যই বাকী থাকবে,যদিও তার মধ্যে কামিল ঈমানের লেশমাত্রও বিদ্যমান থাকবে না।