আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
218 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (22 points)
আমার বান্ধবীর স্বামীর প্রশ্ন

মেরিন ইঞ্জিনিয়ার' এই পেশায় যারা আছেন, অধিকাংশ সময় তাদের সমুদ্রেই কাটাতে হয়। প্রায় ৪/৬ মাস তাদের সমুদ্রের রুটেই এক দেশ থেকে এক দেশে ঘুরতে হয়। কখনো গভীরসমুদ্রে আবার কখনো কোন দেশের পোর্টে নোঙর করতে হয়।

এখন প্রশ্ন হলো-

১) উক্ত ব্যক্তির জন্য সালাতের নির্দেশনা কি?

২) তিনি কোন দেশের সময় অনু্যায়ী সালাত আদায় করবেন? ( মাঝে মাঝে এক দেশ হতে অপর দেশে একদিনের ও কম সময়ে যখন পৌছে যায়)

৩) যেহেতু সমদ্রে থাকাকালিন তিনি বিভিন্ন বিদেশী জাহাজে চাকুরী করেন এবং অধিকাংশ জাহাজে মুসলিম কম থাকে, তবে তাদের উপর কি জাম'আতে সালাত আদায় করা তখনো ওয়াজীব থাকবে? ( অন্তত দুইজন/একজন মুসলিম জাহাজে থাকলেও কি তাদের জাম'আতে সালাত আদায় করতে হবে)

উপরোক্ত বিষয়ে মুহতারাম শায়েখগন একটু জবাব দিলে খুবই উপকৃত হতাম।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-
(১)নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক মুসলমানের উপর সালাত আদায় করা ফরজ।তিনি যেই হোন না কেন? যে পরিস্থিতিতেই থাকেননা কেন?

উনার উপর আল্লাহ কর্তৃক ফরজ বিধান হচ্ছে,যথাসম্ভব যথাসময়ে সঠিকভাবে সালাত আদায় করা।

যেমন আল্লাহ তা'আলা ঘোষনা করেন......
 ﺇِﻥَّ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓَ ﻛَﺎﻧَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻛِﺘَﺎﺑًﺎ ﻣَّﻮْﻗُﻮﺗًﺎ
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।(সূরা নিসা-১০৩)

তাই ইসলামী বিধান হল, প্রতিটা মানুষের উপর সঠিক সময়ে সালাত আদায় করা ও তার চেষ্টা করা ফরজ,এতে যদি কোনো জিনিষ এসে বিগ্নতা সৃষ্টি করে তাহলে যথাসম্ভব  তাকে পরিত্যাগ করাও ফরজ।

তাই শরয়ী উজর ব্যতীত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সর্বাবস্থায় সালাত আদায় করতে হবে,এবং তা অর্থাৎ যথা সময়ে সালাত আদায় করা সমস্ত মুসলমানদের উপর ফরজ,এমনকি কাফেরদের সাথে যুদ্ধের সময় ও শরীয়তের বিধান হল সালাতুল খাউফ (ভীতির নামায)পড়া।

(২)
আল্লাহ পাক কিছু ইবাদতের সম্পর্ক রেখেছেন সুর্যের সাথে এবং কিছু ইবাদতের সম্পর্ক রেখেছেন চন্দ্রের সাথে,তন্মধ্যে নামাযকে সম্পর্কিত করেছেন সুর্যের সাথে।সুর্যের গতিবিধির উপর-ই সর্বসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় নির্ণীত হয়ে থাকে। কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের সাথে নামাযের পৃথক কোনো সময়সূচী নেই,বরং সারা বিশ্বে নামাযের একিইসময়সূচী,এবং তা নির্ধারিত হয় সুর্যের গতিবিধির মাধ্যমে ।

যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﺃَﻗِﻢْ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻟِﺪُﻟُﻮﻙِ ﺍﻟﺸَّﻤْﺲِ ﺇِﻟَﻰ ﻏَﺴَﻖِ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﻗُﺮْﺁﻥَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﺇِﻥَّ ﻗُﺮْﺁﻥَ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮِ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﺸْﻬُﻮﺩًﺍ ) ﺍﻹﺳﺮﺍﺀ 78/
তরজমাঃ- সূর্য ঢলে পড়ার সময় থেকে রাত্রির অন্ধকার পর্যন্ত নামায কায়েম করুন এবং ফজরের কোরআন পাঠ ও(কর)। নিশ্চয় ফজরের কোরআন পাঠ মুখোমুখি হয়(মানুষ ও ফেরেস্তাদের মধ্যেকার রহমত হিসেবে)।

পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময়সীমা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,
(১)“জোহরের সময় হলো- যখন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ে তখন থেকে শুরু করে ব্যক্তির ছায়া তাঁর সমপরিমাণ হয়ে আসরের ওয়াক্ত না আসা পর্যন্ত।

(২)আসরের সময় হলো- যতক্ষণ না সূর্য হলুদ বর্ণ ধারণ করে।

(৩)মাগরিবের সময় হলো- যতক্ষণ না পশ্চিমাকাশের লালিমা অদৃশ্য হয়ে যায়।

(৪)ইশার সময় হলো মধ্যরাত্রি পর্যন্ত।

(৫)আর ফজরের সময় হল প্রভাতের আলো বিচ্ছুরিত হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। আর সূর্যোদয়কালীন সময়ে নামাজ থেকে বিরত থাকতে হবে, কেননা সূর্য শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝখানে উদিত হয়।” [মুসলিম ৬১২]

এবং জিবরাঈল আঃ এর ইমামতির হাদীসে নামাযের পূর্ণ সময়সূচীকে আরও সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে,যা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে।

তাই মেরিন ইঞ্জিনিয়া ভাইরা যারা আছেন তারা সুর্যের গতিবিধি লক্ষ্য করে নামাযের সময়সূচী নির্ধারণ করবেন।এবং শরয়ী বিধান হচ্ছে তাই,অর্থাৎ সুর্যের গতিবিধি দেখে নামাযের সময়সূচী নির্ধারণ করা।বিশেষ কোনো অঞ্চল বা এলাকায় ভিন্নতর কোনো সময়সূচী নেই বরং সারা বিশ্বেই এই সুর্যের গতিবিধিকে লক্ষ্য করে নামাযের সময়সূচী নির্ধারণ করা হয়।

সুর্যের গতিবিধিকে সঠিকভাবে নির্ধারণের প্রয়োজনে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্য নেয়া যেতে পারে এতে কোনো সমস্য নেই।

(৩)
দু-জন বা ততোধিক বালেগ মুসলমানের মাধ্যমে জামাত সংগঠিত হবে,কিন্ত একজনের মাধমে জামাত সংগঠিত হবে না,দুই বা ততোধিক হলে জামাতে নামায পড়া লাগবেই, যদিও একা একা নামায আদায় হয়,তবুও জামাতের সাথে নামাযের আলাদা সওয়াব রয়েছে।

জামাতের জন্য সর্বনিম্ন কতজন প্রয়োজন??
এ সম্পর্কে

 চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ
"আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় "বর্ণিত রয়েছে......
 - اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى أَنَّ صَلاَةَ الْجَمَاعَةِ تَنْعَقِدُ بِاثْنَيْنِ: إِمَامٍ وَمَأْمُومٍ. وَذَلِكَ فِي غَيْرِ الْجُمُعَةِ وَالْعِيدَيْنِ. لِحَدِيثِ أَبِي مُوسَى مَرْفُوعًا: اثْنَانِ فَمَا فَوْقَهُمَا جَمَاعَةٌ (٣) .
وَيَشْتَرِطُ جُمْهُورُ الْفُقَهَاءِ لاِنْعِقَادِ الْجَمَاعَةِ فِي الْفُرُوضِ أَنْ يَكُونَ الإِْمَامُ وَالْمَأْمُومُ كِلاَهُمَا بَالِغَيْنِ
তরজমাঃ- সমস্ত ফুকাহাগণ এব্যপারে একমত যে,সর্বনিম্ন দু-জনের মাধ্যমে জামাত সংগঠিত হয়ে যায়,(জুমুআহ ও ঈদের নামায ব্যতীত) কেননা আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত আছে,নবী কারীম সাঃ বলেছেনঃ--দুই বা ততোধিক ব্যক্তি দ্বারা জামাত সংগঠিত হবে।ফুকাহায়ে কেরামগণ ফরয নামাযে জামাত সংগঠিত হওয়ার জন্য উভয়জনকে বালেগ হওয়ার শর্তারোপ করে থাকেন(নফল যেমনঃ- তারাবীহে এই শর্ত নেই)।(১৫/২৮১)

বিধায় আপনারা দুই বা ততোধিক মুসলিম সেখানে থাকলে জামাতে নামায পড়বেন,এবং পুরোপুরি জামাতের সওয়াব পাবেন।অন্যথায় একা পড়বেন,এতে আপনার নামাযে কোনো ত্রুটি হবে না,তবে সঠিক সময়েই নাময পড়বেন বলে আশা রাখব।(ফাতওয়ায়ে রহিমিয়া-৩/৩৯)
আল্লাহ-ভালোই জানেন।

উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...