ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
রোগকে শিফা প্রদানকারী আল্লাহ। আল্লাহ উনাকে শিফা দিয়েছেন। কোনো পীর বা বুজুর্গর এখতিয়ার নাই যে, তারা শিফা প্রদান করবেন। তাছাড়া ফরয ইবাদত কে পরিত্যাগ করে মাজারে গিয়ে নফল ইবাদত করাও কখনো জায়েয হবে না।
কোন পীর, বুজুর্গ এবং কারো নামে মান্নত করা কি জায়েজ? এবং না জেনে মান্নত করে ফেললে কি তা আদায় করতে হবে?
মান্নত মানা একটি ইবাদত। আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত জায়েয নয়। আমাদের হানাফী মাযহাবের মশহুর কিতাব ‘আদ্দুররুল মুখতার’-এ আছে- ﻭﺍﻋﻠﻢ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺬﺭ ﺍﻟﺬﻱ ﻳﻘﻊ ﻟﻸﻣﻮﺍﺕ ﻣﻦ ﺃﻛﺜﺮ ﺍﻟﻌﻮﺍﻡ ﻭﻣﺎ ﻳﺆﺧﺬ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﻭﺍﻟﺸﻤﻊ ﻭﺍﻟﺰﻳﺖ ﻭﻧﺤﻮﻫﺎ ﺇﻟﻰ ﺿﺮﺍﺋﺢ ﺍﻷﻭﻟﻴﺎﺀ ﺍﻟﻜﺮﺍﻡ ﺗﻘﺮﺑﺎ ﺇﻟﻴﻬﻢ ﻓﻬﻮ ﺑﺎﻹﺟﻤﺎﻉ ﺑﺎﻃﻞ ﻭﺣﺮﺍﻡ، … ، ﻭﻗﺪ ﺍﺑﺘﻠﻲ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﺬﻟﻚ، ﻻ ﺳﻴﻤﺎ ﻓﻲ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻋﺼﺎﺭ، ﻭﻗﺪ ﺑﺴﻄﻪ ﺍﻟﻌﻼﻣﺔ ﻗﺎﺳﻢ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺩﺭﺭ ﺍﻟﺒﺤﺎﺭ . ( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ ﻗﺒﻴﻞ ﺑﺎﺏ ﺍﻻﻋﺘﻜﺎﻑ ) অর্থ : জানা থাকা উচিত যে, অনেক আম লোক মৃতদের নামে যেসকল নযর-মান্নত মানে এবং ওলী-বুযুর্গের কবরে তাদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যে টাকা-পয়সা, তেল-বাতি ইত্যাদি পাঠায় তা বিল-ইজমা বাতিল ও হারাম।… অথচ লোকেরা এতে লিপ্ত হয়ে পড়েছে বিশেষত এ যুগে। আল্লামা কাসিম (ইবনে কুতলূবুগা) রাহ. ‘দুরারুল বিহার’-এর ভাষ্যগ্রন্থে এ মাসআলা বিস্তারিত লিখেছেন।”
আল্লামা শামী রাহ. বলেন, এ জাতীয় মান্নত বাতিল ও হারাম হওয়ার কারণ একাধিক। ১) এ মাখলুকের নামে মান্নত। আর মান্নত হচ্ছে ইবাদত। অথচ মাখলুকের ইবাদত হয় না। ২) যার নামে মান্নত মানা হয়েছে তিনি মৃত। আর মৃত ব্যক্তি কোনো কিছুর মালিক হয় না। ৩) মান্নতকারীর যদি এই বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ ছাড়া ঐ মৃত ব্যক্তিও জগৎ-সংসারের নানা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে তাহলে তার এ বিশ্বাস কুফরী [রদ্দুল মুহতার পৃ. ১৩৯]
কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রাহ. বলেন- ﻋﺒﺎﺩﺕ ﻣﺮ ﻏﯿﺮﺧﺪﺍﺭﺍ ﺟﺎﺋﺰ ﻧﻴﺴﺖ۔ ﻭ ﻧﮧ ﻣﺪﺩ ﺧﻮﺍﺳﺘﻦ ﺍﺯ ﻏﯿﺮ ﺧﺪﺍ – ﭘﺲ ﻧﺬﺭ ﮐﺮﺩﻥ ﺑﺮﺍﺋﮯﮰ ﺍﻭﻟﻴﺎﺀ ﺟﺎﺋﺰ ﻧﻴﺴﺖ ﮐﮧ ﻧﺬﺭ ﻋﺒﺎﺩﺕ ﺍﺳﺖ অর্থ : আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত জায়েয নয়। কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনাও না-জায়েয। সুতরাং ওলীদের নামে মান্নত না-জায়েয। কারণ মান্নত একটি ইবাদত [ইরশাদুত তালিবীন পৃ. ১৮]
কেউ এমন মান্নত করে ফেললে
কেউ যদি এমন মান্নত করে ফেলে তা পুরা করা জায়েয নয়। পুরা করলে গোনাহগার হবে। ফাতাওয়া আলমগীরী, আল বাহরুর রাইক ও অন্যান্য ফতোয়ার কিতাবে স্পষ্ট বলা আছে যে, কোনো গুনাহের কাজের মান্নত করলে তা শুদ্ধ হয় না, তা পালন করাও জরুরি নয়; (ফতোয়া আলমগীরী ১/২০৮) বরং তাওবা করা জরুরি। কাযী ছানাউল্লাহ পানিপথী রাহ. বলেন- ﻭ ﺍﮔﺮ ﮐﺴﮯ ﻧﺬﺭ ﮐﺮﺩ ﻭﻓﺎﮰﺋﮯ ﻧﺬﺭ ﻧﮑﻨﺪ ﮐﮧ ﺍﺣﺘﺮﺍﺯ ﺍﺯ ﻣﻌﺼﻴﺖ ﺑﻘﺪﺭ ﺍﻣﮑﺎﻥ ﻭﺍﺟﺐ ﺳﺖ۔ কেউ যদি এ ধরনের নযর করে তাহলে তা পূর্ণ করবে না। কারণ যথাসম্ভব গোনাহ থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব [ইরশাদুত ত্বালিবীন পৃ. ১৮]
অর্থাৎ, এমন মান্নত মানাই তো গোনাহ। এখন তা পুরা করলে আরেক গোনাহ করা হবে। সুতরাং প্রথম গোনাহ থেকে তওবা করবে আর দ্বিতীয় গোনাহ থেকে বিরত থাকবে।
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রাহ. ‘মাকতুবাতে’ (দফতর সুওম, মাকতুবাত ৪১) লেখেন – ﺣﯿﻮﺍﻧﺎﺕ ﺭﺍ ﺍﺯ ﻣﺸﺎﺋﺦ ﻣﯽ ﮐﻨﻨﺪ ﻭﺑﺮﺳﺮ ﻗﺒﺮﮨﺎﮮ ﺍﯾﺸﺎﻥ ﺭﻓﺘﮧ ﺁﮞ ﺣﯿﻮﺍﻧﺎﺕ ﺭﺍ ﺫﺑﺢ ﻣﯽ ﻧﻤﺎﯾﻨﺪ، ﺩﺭ ﺭﻭﺍﯾﺎﺕ ﻓﻘﮩﯿﮧ ﺍﻳﮟ ﺍﻣﺮ ﺭﺍﻧﯿﺰ ﺩﺍﺧﻞ ﺷﺮﮎ ﺳﺎﺧﺘﮧ ﺍﻧﺪ – ﻭﺩﺭﻳﮟ ﻣﺒﺎﻟﻐﮧ ﻧﻤﻮﺩﮦ ﻭﺍﯾﮟ ﺫﺑﺢ ﺭﺍ ﺍﺯ ﺟﻨﺲ ﺫﺑﺎﺋﺢ ﺟﻦ ﺍﻧﮕﺎﺷﺘﮧ ﺍﻧﺪ ﮐﮧ ﻣﻤﻨﻮﻉ ﺷﺮﻋﯽ ﺍﺳﺖ ﻭ ﺩﺍﺧﻞ ﺩﺍﺋﺮﮦ ﺷﺮﮎ . পীর-মাশায়েখের নামে যে গরু-ছাগল দেওয়া হয় এবং তাদের কবরের কাছে গিয়ে তা যবেহ করা হয় ফিকহী বর্ণনাসমূহে একেও শিরকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এ সকল কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার খুব তাকীদ করা হয়েছে। এই যবীহাকে ঐসব যবীহার শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে যা জিন্নাতের নামে যবেহ করা হয়, যা শরীয়তের বিধানে নিষিদ্ধ ও শিরকের অন্তুর্ভুক্ত।
মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রাহ. -এর যে বক্তব্য উপরে উদ্ধৃত হয়েছে তাতে আরো আছে- ﺍﺯﯾﮟ ﻋﻤﻞ ﻧﯿﺰ ﺍﺟﺘﻨﺎﺏ ﺑﺎﯾﺪ ﻧﻤﻮﺩ ﮐﮧ ﺷﺎﺋﺒﮧ ﺷﺮﮎ ﺩﺍﺭﺩ۔ ﻭﺟﻮﮦ ﻧﺬﺭ ﺑﺴﯿﺎﺭ ﺍﺳﺖ ﭼﮧ ﺩﺭﮐﺎﺭﺳﺖ ﮐﮧ ﻧﺬﺭ ﺫﺑﺢ ﺣﯿﻮﺍﻧﮯ ﮐﻨﻨﺪ ﻭﺍﺭﺗﮑﺎﺏ ﺫﺑﺢ ﺁﮞ ﻧﻤﺎﯾﻨﺪ ﻭﺑﺬﺑﺢ ﺟﻦ ﻣﻠﺤﻖ ﺳﺎﺯﻧﺪ ﻭﺗﺸﺒﮧ ﺑﻌﺒﺪۂ ﺟﻦ ﭘﯿﺪﺍ ﮐﻨﻨﺪ . এ কাজ থেকেও পরহেয করা চাই। কারণ এতে শিরকের ‘গন্ধ’ আছে। আল্লাহ তাআলার নামে মান্নতের বিভিন্ন ছুরত হতে পারে। তাহলে কী কারণে প্রাণী যবেহ করারই মান্নত করতে হবে আর জিন্নাতের নামে যবেহকৃত পশুর সাথে ও জিনের উপাসকদের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি করতে হবে? (মাকতুবাত ৪১; দফতরে সুওম)
বাস্তবে কোনো কাজ হওয়া না হওয়ায় নযর-মান্নতের কোনো প্রভাব নেই এবং এর দ্বারা তাকদীরের লেখাও পরিবর্তন হয় না। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মশহুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে- ﻻ ﺗﻨﺬﺭﻭﺍ، ﻓﺈﻧﻪ ﺍﻟﻨﺬﺭ ﻻ ﻳﻐﻨﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺪﺭ ﺷﻴﺌﺎ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﺴﺘﺨﺮﺝ ﺑﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺒﺨﻴﻞ . মান্নত করো না। কারণ তাকদীরের লিখনে মান্নত কোনো কাজেই আসে না। এর দ্বারা তো শুধু বখীলের কাছ থেকে (সম্পদ) বের করা হয় [মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৯৭]
শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘মান্নত মানার নিষিদ্ধতা এই বিশ্বাসের কারণে যে, তা তাকদীরের কোনো লিখন খণ্ডন করে। কারণ মানুষের রীতি ছিল, তারা তাদের হাজত পূরণ ও বিপদমুক্তির জন্য মান্নত করত। আর এ হচ্ছে কৃপণ লোকদের স্বভাব। এ কারণে এতে বাধা দেওয়া হয়েছে। দানশীল মানুষ তো সরাসরি সদকা করে থাকে। সুতরাং উদ্দেশ্যে হচ্ছে মান্নত মানা যেতে পারে তবে ঐভাবে নয়, ইখলাসের সাথে। (হাশিয়া মিশকাত) (সংগৃহিত)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
তাদের আকিদা বিশ্বাস যদি হয়, এমন যে পীর সাহেব উনাকে সুস্থ করেছেন, উনার কাছে সুস্থ করার ক্ষমতা রয়েছে, তাহলে এজন্য উনার ঈমান চলে যাবে। আর যদি তাদের আকিদা বিশ্বাস এমনটা না হয়, তাহলে তাদের ঈমানে কোনো সমস্যা হবে না।