জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
آَمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آَمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
তরজমা: রাসূল ঈমান আনয়ন করেছেন ঐ সকল বস্তু সম্পর্কে যা তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও। সবাই ঈমান রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর নবীগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর নবীগণের মাঝে কোন পার্থক্য করি না এবং তারা আরো বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি। আমরা আপনার নিকট ক্ষমা চাই, ওহে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সকলেই আপনারা দিকে প্রত্যাবর্তন করি। [সূত্র : সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৫।]
وَمَنْ يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
“যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের ওপর এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর ও কিয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে”। [সূত্র: সূরা নিসা, আয়াত ১৩৬।
হাদীসে জিবরাঈলে উল্লেখ আছে, হযরত জিবরাঈল আ. আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে এসে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
اَنْ تُؤ مِنَ بِا للّهِ وَمَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه والْيَؤمِ الاَخِرِ وَتُؤْمِنُ بِا لْقَدْرِ خَيْرِه وَ شَرِّه
ঈমানের হাকীকত হলো, তুমি মনে-প্রাণে বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তা‘আলার ওপর, তাঁর ফেরেশতাগণের ওপর, আসমানী কিতাবসমূহের ওপর, আল্লাহ তা‘আলার নবী-রাসূলগণের উপর, কিয়ামত দিবসের ওপর এবং তাকদীরের ভালো-মন্দ সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হওয়ার ওপর। [সূত্র: বুখারী খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১২ ও মুসলিম। মিশকাত শরীফ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-১১]
উল্লেখিত আয়াত ও অত্যন্ত প্রসিদ্ধ এ হাদীসটি ‘ঈমানে মুফাসসাল’-এর ভিত্তি। ঈমানে মুফাসসালের মাধ্যমে এ কথাগুলোরই স্বীকৃতি জানানো হয় এবং মনে-প্রাণে বদ্ধমূল বিশ্বাসের ঘোষণা করা হয় যে,
أَ مَنْتُ باِ للهِ وَ مَلأَئِكَتِه وَ كُتُبِهِ وَرُسُلِه وَالْيَوْ مِ الأخِرِ وَالقَدْرِ خَيْرِه وَشَرِّه مِنَ ا للهِ تَعَالي والْبَعْثِ بَعْدَا لْمَوْتِ
আমি ঈমান আনলাম বা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বিশ্বাস করলাম-১. আল্লাহ তা‘আলাকে, ২. তাঁর ফেরেশতাগণকে, ৩। তাঁর প্রেরিত সকল আসমানী কিতাবকে, ৪. তাঁর প্রেরিত সকল নবী-রাসূলকে, ৫. কিয়ামত দিবসকে অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বজগত একদিন শেষ হবে, তাও বিশ্বাস করি, ৬। তাকদীরকে বিশ্বাস করি অর্থাৎ জগতে ভালো-মন্দ যা কিছু হয়, সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট, তাঁরই পক্ষ হতে নির্ধারিত এবং মৃত্যুর পর কিয়ামতের দিন পুনর্বার জীবিত হতে হবে, তাও অটলভাবে বিশ্বাস করি।
★সুতরাং আওয়ামদের উপর আকীদার এ ০৬ টি মুল বিষয় জানা ফরজ।
,
আকিদা সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
,
(০২)
তাওহীদুল্ আসমা ওয়াস্ সিফাতের অর্থ হল, আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত নামে নামকরণ করেছেন এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণান্বিত করেছেন ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে যে সমস্ত সুন্দর নামে এবং সুউচ্চ গুণে গুণান্বিত করেছেন, তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা।
তার ধরণ বর্ণনা করা ব্যতীত যেভাবে বর্ণিত হয়েছে ঠিক সেভাবেই আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করা। আল্লাহ তা’আলা তাঁর কিতাবের অনেক স্থানে কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা করা ব্যতীত স্বীয় গুণাবলী উল্লেখ করেছেন।
যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا
‘‘তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না’’। (সূরা তোহাঃ ১১০)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
‘‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ (সূরা শুরাঃ ১১)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
لاَ تُدْرِكُهُ الأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الأَبْصَارَ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
‘‘তাকে তো কারও দৃষ্টি পরিবেষ্টন করতে পারে না। আর তিনি সকল দৃষ্টি পরিবেষ্টনকারী। তিনি অতি সুক্ষ্মদর্শী, সুবিজ্ঞ’’। (সূরা আন-আমঃ ১০৩) তিরমিযী শরীফে উবাই বিন কা’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ আমাদের সামনে আপনার রবের বংশ পরিচয় বর্ণনা করুন।
তখন আল্লাহ তা’আলা এই সূরাটি নাযিল করেনঃ
قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (1) اللَّهُ الصَّمَدُ (2) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ (3) وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ (4)
‘‘বলুনঃ তিনি আল্লাহ্ একক। আল্লাহ্ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’’। ‘সামাদ’ হচ্ছে যিনি কাউকে জন্ম দেন নি বা যাকে কেউ জন্ম দেয়নি। কারণ জন্মগ্রহণকারী সকল বস্ত্তই মরণশীল। আর মরণশীল প্রতিটি বস্ত্তই উত্তরাধিকারী রেখে যায়। আর আল্লাহ তা’আলা মরণশীল নন, তিনি কাউকে উত্তরাধিকারী নির্ধারণকারী নন। ‘আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই’ অর্থাৎ কেউ তাঁর সমকক্ষ, সমান মর্যাদা সম্পন্ন এবং কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয় ।
,
এ আকীদার ক্ষেত্রে শুধু এতটুকু বিশ্বাস রাখা জরুরি যে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক মহান আল্লাহ তায়ালার অনেক গুনবাচক নাম আছে।
,
(০৩)
এ সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ
(০৪)
হ্যাঁ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হায়াতুন্নাবি, তিনি কবরেও জীবিত আছেন।
,
বিস্তারিত জানুনঃ
(০৫)
আওয়াম না জানলে কোনো সমস্যা নেই।
তবে ভ্রান্তু মূলক কোনো আকীদা পোষন করা যাবেনা।
,
(০৬)
আমরা কুরআনে বর্ণিত গভীর জ্ঞানীদের কাতারে শামিল হতে চাই।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ
هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}
তাই আমরা মনে করি যে আল্লাহর সত্ত্বার আকার নিরাকার নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ বিষয়। কারণ এসব মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভূক্ত। যার সঠিক অবস্থান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।
আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করি না। মন্তব্য করি না।