আমরা ছিলাম পথহারা, দিশেহারা। হেদায়াত ও সফলতার পথ সম্পর্কে ছিলাম অজ্ঞ। অতপর মহান রাব্বুল আলামীন হেদায়েতের বার্তা দিয়ে প্রেরণ করলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি এসে আমাদেরকে সত্য-মিথ্যা চিনিয়েছেন। আমাদের নিকট সত্য দ্বীন নিয়ে এসেছেন। নাজাতের পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের পন্থা শিখিয়েছেন। এ ছিল আমাদের প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে মাজীদে এভাবে এসেছে
لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ وَ اِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ.
আল্লাহ মুমিনদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন; তিনি তাদেরই নিজেদের মধ্য হতে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেন, যদিও তারা এর আগে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৪
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমনিভাবে নবীগণের সর্দার তেমনিভাবে মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেও তিনি সকলের চেয়ে মহান। তিনি এমন এক উৎকৃষ্ট সমাজ রেখে গেছেন, যার নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে নেই। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তীরাও উৎকর্ষের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে।
সেই সমস্ত ছাহাবাদেরকেও মুসলমানদের ভালো ভালোবাসতে হবে।
তাদেরকে গালি গালাজ করা যাবেনা।
,
তাদের শানে কুরআনে অনেক আয়াত নাযিল হয়েছেঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ مَعَہٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡکُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَہُمۡ تَرٰىہُمۡ رُکَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاہُمۡ فِیۡ وُجُوۡہِہِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِکَ مَثَلُہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَ مَثَلُہُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ کَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔہٗ فَاٰزَرَہٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِہٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِہِمُ الۡکُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡہُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۲۹﴾
মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, তাদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাবে পরিস্ফুট; এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইঞ্জীলে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এমন একটি চারাগাছ, যা থেকে নিৰ্গত হয় কচিপাতা, তারপর তা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে যা চাষীর জন্য আনন্দদায়ক। এভাবে আল্লাহ অন্তর্জলা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের।
(সুরা আল ফাতহ ২৯)
সুরা তাওবার ১০০ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ﴿۱۰۰﴾
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।
ইমাম বুখারীর বর্ণনায় উক্ত সহীহ বুখারীর মধ্যেই كتاب فضائل الصحابة নামক অধ্যায়ের ৩৬৬৫ নং হাদীসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে,
عن أبي سعيد الخدري (رض) قال قال النبي صلى الله عليه وسلم لا تسبوا أصحابي
তোমরা (পরবর্তীকালে) আমার সহাবীদেরকে গালি-গালাজ করো না।
.
কোনো ছাহাবার প্রতি বিদ্বেষ ভাব না রেখে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত তথা কোনো এক ছাহাবির প্রতি অধিক ভালবাসা পোষণ করতে পারবেন।