জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
কোন মানুষের সব কিছুই ভাল লাগবে এমন নয়।
এ কারণেই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً، إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে শত্রু মনে না করে। কেননা, যদি সে তার এক কাজকে নাপছন্দ করে, তার অপর কাজকে পছন্দ করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৩৬৩}
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪}
কোন মানুষের সব কিছুই ভাল লাগবে এমন নয়।
এমনও হতে পারে,যে বিবাহের পর উক্ত ছেলেকে বা উক্ত মেয়েকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেনা।
কোনোভাবেই তার মতের সাথে পড়েনা।
তাহলে সব রকমের চেষ্টার পরেও যদি তাকে নিয়ে ঘর সংসার করা মারাত্মক কষ্টকর হয়ে যায়,তাহলে স্বামী এক তালাক দিতে পারে।
বিবাহ একটি পবিত্রতম সম্পর্ক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক বড় নেয়ামত। সামান্য রাগের বশে এভাবে এ সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করা কিছুতেই উচিত নয়। স্ত্রীর উপর যেমন স্বামীর হক আছে, তেমনি স্বামীর উপরও স্ত্রীর হক আছে। যে মেয়েটি নিজের পরিবার পরিজন, মা-বাবা সবাইকে ছেড়ে দিয়ে একজন পুরুষের কাছে নিজের সব কিছুকে বিলীন করে দিল, তার সাথে দুব্যবহার করা কিছুতেই উচিত নয়। আর স্ত্রীরও স্বামীর হকের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। কারণ স্বামীর অসন্তুষ্টি নিয়ে যে স্ত্রী ইন্তেকাল করে তার প্রতি আল্লাহর রাগ আপতিত হয় মর্মে হাদীসে হুশিয়ারী উচ্চারিত হয়েছে।
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তালাক পতিত হবেনা।
কেননা স্ত্রী তালাক প্রদানের অধিকার পেলেও স্বামীকে তালাক দিতে পারেনা।
এতে তালাক হবেনা।
তালাক নিজেক নিজে দিতে হবে।
,
যেমন এই ভাবে বলবে যে আমি স্বামীর দেওয়া ক্ষমতাবলে নিজ নফসকে বা নিজেকে নিজে তালাক প্রদান করিলাম।
তাহলে এক তালাক পতিত হবে।
নতুবা নয়।
,
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তালাক পতিত হবেনা।
(০২)
হ্যাঁ এক্ষেত্রে নিকাহ নামায় যেহেতু স্বাক্ষর দিতেই হবে,তাই সেখানে এমন কিছু লিখে স্বাক্ষর দেওয়া উচিত,যেগুলো আসলে পাওয়া যাবেনা।
আর পাওয়া যেহেতু যাবেনা,স্ত্রীও তালাকের অধিকার পাবেনা।
,
কাবিন নামায় সাইন করার সময় অবশ্যই ১৮ ও ১৯ নং ধারাটি পড়ে নেয়া উচিত। সেই সাথে তাতে লিখবে-
নমুনা স্বরূপ-
যদি স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর উপর শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন করা হয়, বা স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে যায়, কিংবা স্ত্রীর ভরণপোষণ না দেয়, এবং এ বিষয়টি স্বামী পক্ষের তিনজন মুরুব্বী এবং স্ত্রী পক্ষের তিনজন মুরুব্বী সত্যায়ন করে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর এক তালাক পতিত করার অধিকার পাবে”।
এরকমভাবে লিখে স্ত্রীকে এক তালাকের অধিকার প্রদান করবে। তিন তালাক কখনোই নয়। কারণ তিন তালাক প্রদান ইসলামী পদ্ধতি নয়। এবং একসাথে তিন তালাক প্রদানকে রাসূল সাঃ বিদআত বলে অভিহিত করেছেন। তবে এটি নাজায়েজ হলেও তিন তালাক দিলে তিন তালাক পতিত হয়ে যায়।
এ কারণে তালাক স্বামী দেয়ার সময়ও এক তালাকের উর্দ্ধে দেয়া যেমন উচিত নয়, তেমনি স্ত্রীকে অধিকার দেয়ার সময়ও এক তালাকের অধিকার দেয়া উচিত নয়। আর একের অধিক তালাক দেয়ার যেমন কোন প্রয়োজন নেই, তেমনি স্ত্রীকে অধিকার দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ এক তালাকের মাধ্যমেওতো স্বামী থেকে স্ত্রী পৃথক হয়ে যায়। তাহলে সেখানে অযথা দু ইবা তিন তালাক কেন দেয়া হবে? যেখানে এক আঘাতে কোন কিছু ধ্বংস করা যায়, সেখানে যেমন একাধিক আঘাত করা অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কাজ তেমনি যেখানে এক তালাকের মাধ্যইে পৃথক হয়ে যাচ্ছে, সেখানে দুই বা তিন তালাক দেয়াও অযথা ও অপ্রয়োজনীয় কাজ। তাই এ ব্যাপারে স্বামী স্ত্রী উভয়েরই সতর্ক থাকা উচিত।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
كُلُّ كِتَابٍ لَمْ يَكْتُبْهُ بِخَطِّهِ وَلَمْ يُمِلَّهُ بِنَفْسِهِ لَا يَقَعُ بِهِ الطَّلَاقُ إذَا لَمْ يُقِرَّ أَنَّهُ كِتَابُهُ كَذَا فِي الْمُحِيطِ (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
সারমর্মঃ
প্রত্যেক ঐ লেখা,যেটা নিজ হাত দিয়ে লিখেনি,নিজের মন সেদিকে ঝুকেওনি,তাহলে তালাক পতিত হবেনা।
যদি সে এটা স্বীকার না করে যে এটার তারই লেখা।
رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
সারমর্মঃ-
কোনো ব্যাক্তি যদি কাউকে দিয়ে নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়ার কথা লেখে,এবং তাহা যদি সেই স্বামীর সম্মুখে পড়া হয়,তারপর সেই কাগজ ধরে, ভাজ করে,মোহর অঙ্কন করে,,,এবং স্ত্রীর নিকট পাঠায়,স্ত্রীর নিকট পত্রটি আসে,আর স্বামী এই কর্মে স্বীকারোক্তি দেয় যে এটি তারই লিখিত কাগজ, তাহলে তালাক হয়ে যাবে।
★হ্যাঁ, তবে যদি স্বামীর দস্তখত করার সময় জানা থাকে যে, কাজী স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দিয়েছে মর্মে উপরে লিখে দিয়েছে, একথা জানার পরও যদি স্বামী উক্ত কাগজের নিচে সাইন করে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে তালাক দেয়ার অধিকার দেয়া হয়েছে বলে সাব্যস্ত হবে। সেই হিসেবে স্ত্রী যদি পরবর্তীতে নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে যায়।