ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
তাকি উসমানি রাহ বাল্যবিবাহ এবং ইসলাম শীর্ষক একটি লিখায় বলেন,
কিন্তু এটা এসব অনিষ্টতার সঠিক সমাধান নয় যে, কম বয়সের বিয়েগুলোকে গোড়া থেকেই নিষিদ্ধ বলে অবিহিত করে দেয়া হবে। কেননা, একজন ব্যক্তি অনেক সময় বিভিন্ন কারণে তার কম বয়সী ছেলে-মেয়েকে দ্রুত বিয়ে করিয়ে দিতে বাধ্য হয়ে যায়। (যে যে কারণে বাধ্য হতে হয়, তার বিস্তারিত বিবরণ সামনে আসছে। -লেখক) এই মুসলেহাতের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ইসলামী শরীয়ত কম বয়সের বিয়েকে যেমন নিষিদ্ধ গণ্য করেনি, তেমনি এর উপর বেশি গুরুত্বও দেয়নি।
কম বয়সের বিবাহ জায়েয ও বৈধ হবার ব্যপারটি পবিত্র কুরআনের নিম্নক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত-
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ
“আর তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ‘হায়েয’ হতে বিরাশ হয়ে গেছে, তোমাদের যদি সন্দেহ সৃষ্টি হয়, তাহলে তাদের ইদ্দতকাল হল তিন মাস। আর এই ইদ্দতকাল ওইসকল মেয়েদের জন্যেও, যাদের (এখনও) হায়েয আসেনি। [সূরা তালাক ৪]
এই আয়াতে (প্রাপ্তবয়ষ্কা নারীদের পাশাপাশি) ওইসকল মেয়েদের ‘ইদ্দত’ সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যাদের এখনও পর্যন্ত হায়েয আসেনি। বলাবাহুল্য, ইদ্দতের প্রশ্নই তো আসে তখন, যেক্ষেত্রে প্রথমে বিয়ে, রুখসতী এবং তালাক সংঘটিত হয়ে যায়। এ থেকে বোঝা গেল, কুরআন কারিমের দৃষ্টিতে বালেগ/বালেগা ( তথা প্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে / প্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে) হবার আগেও বিয়ে সম্পাদিত হতে পারে এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে তা গ্রহনযোগ্য। অথচ এর বিপরীতে অর্ডিনেন্সের উপরোক্ত দফাটি প্রাপ্ত-বয়সের (ছেলে-মেয়ের বিয়েকেই) শুধু নয়, বরং প্রাপ্ত বয়সের ৩-৪ বৎসর পরের সম্পাদিত বিয়েকেও গ্রহনযোগ্য বলে মনে করে না!
হাদীসে বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত ঘটনাবলী
আর এ কারণেই নববী-যুগে কম বয়সে সম্পাদিত বিয়ের বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।
(১) খোদ রাসুলুল্লাহ ﷺ হযরত আয়েশা রা.-কে বিয়ে করেছিলেন ওই সময়ে, যখন হযরত আয়েশার বয়স ছিল কতক বর্ণনা মতে ৮ কিংবা ৯ বছর। [সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৮৯৪ ; সহীহ মুসলীম, হাদীস ১৪২২]
(২) ইমাম আবু বকর জাসসাস রাযী রহ. (মৃ: ৩৭০ হি:) ‘আহকামুল কুরআন’-এ হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের সূত্রে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ হযরত উম্মে সালামাহ’র পুত্র হযরত সালামাহ’কে হযরত হামযা’র ছোট্ট মেয়ের সাথে খুব কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। বর্ণনাটি এই- فزوجه رسول الله ﷺ بنت حمزة و هما صبيان صغيران فلم يجتمعا حتى ماتا الخ – ‘‘রাসুলুল্লাহ ﷺ হযরত হামযা’র মেয়ের সাথে তার (তথা হযরত সালামাহ’র) বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তারা দুজনেই ছিল ছোট্ট বাচ্চা। পরে তারা দুজনে একত্রিত হতে পারেন নি, এমন কি দুজনই (শিশু বয়সে) মাড়া যান। [আহকামুল কুরআন, ইমাম জাসসাস- ২/৬২]
উপরোক্ত বর্ণনায় আপনারা দেখতে পেলেন যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ নিজেই হযরত সালামাহ রা. এবং বিনতে হামযা রা.-এর বিয়ে তাদের অপ্রাপ্ত বয়সে করিয়ে দিয়েছিলেন। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://muftiemdadhaque.blogspot.com/2021/04/blog-post_30.html
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ইসলামে বিয়ের আলাদা কোনো বয়স নাই। নিয়মতান্ত্রিক এর কোনো বয়স নাই। বরং যে কোনো বয়সে বিয়ে করা যাবে। হ্যা সাবালক হওয়ার পর, বুঝদ্বার হওয়ার পরই বিয়ে করা ভালো। বিয়ের বয়সকে কোনো নিয়মের আলোকে বেধে রাখা যাবে না। বরং এগুলো অভিভাবকদের উপরই শরীয়ত ন্যাস্ত করেছে।