বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
الحمد لله والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه ومن والاه، أما بعد:
জন্মদিন উপলক্ষ্যে জন্মের সেই তারিখে রোযা রাখার কোনো নযির শরীয়তে নেই।রাসূলুল্লাহ সাঃ সোমবারে জন্মদিন উপলক্ষ্যে রোযা রেখেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই।
কোনো কোনো রেওয়াতে সোমবারে রোযা রাখার হেকমত সম্পর্কে যে জন্মদিনের কথা যে উল্লেখ রয়েছে,সেখানে মূলত কয়েকটি হেকমতের একটি হেকমত হিসেবে জন্মদিনের কথা উল্লেখ করে সোমবারের ফযিলতকে বুঝানো হয়েছে।কেননা সোমবারে রোযা রাখার হেকমত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস সমূহে জন্মতারিখের হেকমত ছাড়া ভিন্ন ভিন্ন হেকমতের আলোচনাও এসেছে।
যেমন হযরত আবু কাতাদাহ রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الِاثْنَيْنِ فَقَالَ : ( فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ কে সোমবারের রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো(কেননা রাসূলুল্লাহ এ দিন প্রায় রোযা রাখতেন)রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রতিউত্তরে বললেন,কেননা এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি,এবং এই দিনে আমার উপর অহী নাযিল করা হয়েছে।(সহীহ মুসলিম-১১৬২)
রাসূলুল্লাহ সাঃ সোমবারে রোযা রাখতেন,কেননা এ দিন আল্লাহর সামনে আ'মল পেশ হয়ে থাকে।যেমন,হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ( تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ )
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,সোমবার এবং বৃহস্পতিবার আল্লাহ তা'আলার নিকট আ'মল পেশ করা হয়ে থাকে।সুতরাং আমি চাই আল্লাহর নিকট আমার আ'মল এমন অবস্থায় পেশ করা হউক যে, আমি রোযাদার। (সুনানু তিরমিযি-৭৪৭)
সোমবারে রাসূলুল্লাহ সাঃ এ জন্য রাখতেন যে,সেদিন মাগফিরাতের দিন।যেমন হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
من حديث أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَصُومُ الاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ، فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؛ إِنَّكَ تَصُومُ الإِثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ، فَقَالَ إِنَّ يَوْمَ الاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسَ يَغْفِرُ اللَّهُ فِيهِمَا لِكُلِّ مُسْلِمٍ إِلَّا مُهْتَجِرَيْنِ، يَقُولُ دَعْهُمَا حَتَّى يَصْطَلِحَا.
রাসূলুল্লাহ সাঃ সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোযা রাখতেন।রাসূলুল্লাহ সাঃ কে ঐ দিনগুলোতে রোযা রাখার হেকমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন,আল্লাহ তা'আলা সোমবার এবং বৃহস্পতিবার প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করে দেন।শুধুমাত্র ঝগড়াটে ব্যক্তি ছাড়া যতক্ষণ না তারা আপসে সংশোধন করছে।(সুনানু ইবনি মা'জা-১৭৪০)
রাসূলুল্লাহ সাঃ এর হাদীসের অংশ
( فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ )
'এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি,এবং এই দিনে আমার উপর অহী নাযিল করা হয়েছে।বিধায় আমি এ দিন রোযা রাখি।'
এ হাদীস দ্বারা জন্ম তারিখে রোযা রাখার উপর প্রমাণ পেশ কর যাবেনা।কেননা এ হাদীস রোযা রাখার উপর প্রমাণ করে না, বরং এখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর জন্মের কারণে সোমবার দিনের ফযিলতকে বর্ণনা করা হচ্ছে।যদি বাস্তবেই জন্মতারিখে রোযা রাখার কোনো নিয়ম থাকতো, তাহলে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাঃ সেটাকে পরিস্কার করে বর্ণনা করে দিতেন।এবং সাহাবায়ে কেরাম সেটাকে আ'মলে নিয়ে আসতেন।কেননা সাহেবায়ে কেরামগনের চেয়ে নেকির প্রতি বেশী অগ্রসরমান আর কেউ হতে পারে না।তারা অবশ্যই আ'মলে নিয়ে আসতেন।
কিন্তু যেহেতু হাদীসে বর্ণিত কয়েকটি হেকমতের একটি হেকমত হলো জন্মতারিখ, তাই কেউ যদি সে তারিখে এই হেকমতের সাথে অন্য কোনো হেকমতকে মিলিয়ে রোযা রেখে নেয়,তাহলে সেটা অনুমোদনযোগ্য হতে পারে।যেমন,আইয়্যামের বীযের রোযার নিয়তকে সামনে রেখে রোযা রাখা।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।