ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
ইসলামে কুফুর, কাফের ও কাউকে কাফের বলে ঘোষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সমকালে বিষয়টি জনপরিসরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র এই রচনাটিতে এ সংক্রান্ত সূক্ষ্ম ও জটিল আলোচনায় না গিয়ে এর সাধারণ ও প্রাথমিক কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে।
পরিভাষার সাথে শব্দমূলের একটা গভীর যোগাযোগ থাকে। সেটা ধরতে পারলে পরিভাষাটিকে গভীর থেকে বুঝা সহজ হয়। এ জন্য পারিভাষিক অর্থে যাওয়ার আগে শাব্দিক অর্থের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। আরবি ‘কুফরুন’ শব্দের মধ্যে ঢেকে দেওয়া, অকৃতজ্ঞতা করা ও আল্লাহকে অস্বীকার করার অর্থগুলো পাওয়া যায়।
পারিভাষিকভাবে কুফুরকে পরিচয় করাতে গিয়ে নানাজন নানা শব্দে একে উল্লেখ করেছেন। শব্দ ভিন্ন হলেও একটু গভীরভাবে দেখলে বুঝা যাবে মর্মগতভাবে সবগুলো আসলে একই অর্থ ধারণ করছে। যেমন, আল্লামা ইবনে হাজম রহ. বলেছেন : আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করা, কুরআনুল কারীমে যে সকল নবীর নুওয়াত প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কোন একজনের নবী হওয়াকে অস্বীকার করা, কিংবা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল বিষয় নিয়ে এসেছেন, সেগুলো থেকে এই অস্বীকারকারীর নিকট যেগুলো বিরাট দলের বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, তার কোন কিছুকে অস্বীকার করা; অথবা, এমন কোন কাজ করা, যার কুফুরী হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—এমন সব কিছুর জন্য আল্লাহ তাআলা ‘কুফরুন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। (আল ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়াননিহাল, ৩:১১৮)
এখানে অস্বীকার করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বীকার না করা। সুতরাং যদি এমন হয়, একজন লোক এগুলোকে অস্বীকার করে না, আবার স্বীকারও করে না; হয়তো সে বিশ্বাস করে না, বা তার সন্দেহ আছে; তাই সে চুপ থাকে ও এড়িয়ে চলে, তাহলে সেও কাফের বলে বিবেচিত হবে। ইবনে তাইমিয়া রহ. এর সংজ্ঞার মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। (মাজমুউল ফাতওয়া, ১৩:৩৩৫)
অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে কাফের বলা যাবে না
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি (অন্যায়ভাবে) তার মুসলমান ভাইকে ‘কাফির’ বলে, নিঃসন্দেহে তাদের যেকোনো একজনের প্রতি কুফরি আপতিত হবে। তার কথায় বাস্তবতা না থাকলে কুফরি তার নিজের দিকেই বর্তাবে।’ (বুখারি : ২/৯০১, মুসলিম : হাদিস ১১১)
এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে ‘কাফির’ বলা হারাম। এমনকি অজ্ঞতাবশত কেউ শরিয়তের কোনো বিধান অস্বীকার বা বিরোধিতা করলেও তার বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। (মুখতাসারু ফতোয়া মিসরিয়া : ৫৭২; আল আওয়াসেম : ৪/১৭৪)
আল্লামা শামি (রহ.) লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি রসিকতা করে কিংবা খেলতামাশাচ্ছলে কুফরি শব্দ উচ্চারণ করে, সব আলেমের ঐকমত্যে সে কাফির হয়ে যাবে।’ (ফতোয়ায়ে শামি : ৪/২২৪)
ফতোয়ায়ে আলমগিরিতে বিষয়টি আরো সুন্দরভাবে এসেছে—‘ব্যঙ্গবিদ্রুপকারী যদি শরিয়তের কোনো বিধানকে হালকা মনে করে উপহাস করে এবং কুফরি শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে, যদিও আন্তরিক বিশ্বাস এর বিপরীত হয়।’ (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ২/৩৭৬)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে আমরা বলবো যে, সতর্কতামূলক আপনার বোনের ঈমান নবায়ন করে নেয়া জরুরী।