আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
759 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (14 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সম্মানিত মুফতী সাহেব!
আমাদের দেশের ঈদ বা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে কিছু কিছু মার্কেটে পণ্য কিনার পর একটি টুকন দেওয়া হওয়া হয়।পরবর্তীতে লটারী করে একজনকে কার,মোটর সাইকেল পুরুস্কার দেয়া হয়।এটা কি জায়েয? জানাবেন শায়েখ।

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)

ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ
পণ্য ক্রেতাদেরকে পরবর্তীততে লটারীর মাধ্যমে পুরুস্কার বিতরণের আয়োজন কয়েক রকমের হতে পারে। 
  • (প্রথমত) হয়তো পুরুস্কারের আয়োজক একক মালিকানাধীন ব্যবস্যা প্রতিষ্টান হবে।যেখানে দোকানের সব কিছুর মালিকানা এক ব্যক্তির হবে অথবা কয়েকজনের অংশীদারিত্বে কোন ব্যসায়িক প্রতিষ্টান হবে। 
  • (দ্বিতীয়ত) কোন এক মার্কেটের পক্ষ্য থেকে পুরস্কারের আয়োজন করা হবে।যেখানে ভিন্ন ভিন্ন মালিক তাদের পৃথক পৃথক ব্যবসা কার্য পরিচালনা করবে। 

 সু-প্রিয় পাঠকবর্গ! 
যদি পুরুস্কারের আয়োজক প্রথম প্রকারের হয়।তাহলে স্বাভাবিক অবস্থায় নাজায়েয বলেই গণ্য হবে। কেননা এতে ক্বেমার(জুয়ার) হালকা সাদৃশ্যতা বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু যেহেতু তাতে সহীহ ক্রয়-বিক্রয়ের সাদৃশ্যতাও বিদ্যমান রয়েছে,তাই তাকে বৈধতার আওতাভুক্ত ও করা যাবে তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে। 

উক্ত পদ্ধতি জায়েয হতে হলে নিম্নোক্ত শর্ত সমূহ অবশ্যই তাতে উপস্থিত থাকতে হবে। 
  1. প্রথম শর্ত মূল্যর সাথে সম্পর্কিত। 
  2. দ্বিতীয় শর্ত ক্রেতার সাথে সম্পর্কিত। 
  3. তৃতীয় শর্ত বিক্রতার সাথে সম্পর্কিত। 

(১)প্রথম শর্তঃ মালের মূল্য বাজারদর থেকে বর্ধিত হতে পারবে না।বরং সমান সমান থাকতে হবে।উক্ত পুরুস্কার ঘোষনার পূর্বে ও পুরুস্কারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মালের দর যত, তখন ততই থাকতে হবে। 
(২)দ্বিতীয় শর্তঃ ক্রেতা প্রয়োজন ব্যতীত শুধুমাত্র পুরুস্কার অর্জনের উদ্দেশ্যে উক্ত মালকে ক্ররিদ করতে পারবে না।কেননা অপচয় করা বৈধ নাজায়েয । শুনুন আল্লাহ তা'আলার শ্বাশ্বত বানী,
 ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻤُﺒَﺬِّﺭِﻳﻦَ ﻛَﺎﻧُﻮﺍْ ﺇِﺧْﻮَﺍﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴَﺎﻃِﻴﻦِ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻟِﺮَﺑِّﻪِ ﻛَﻔُﻮﺭًﺍ নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।(সূরাঃ বনী-ইসরাঈল-২৭)
(৩)তৃতীয় শর্তঃ বিক্রেতার উক্ত পুরুস্কারের ঘোষনা অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে করতে পারবে না। বরং তার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র নিজ মালকে প্রচলন করা ও বিক্রি করা হতে হবে। উপরোক্ত তিন শর্ত পাওয়া গেলে পুরুস্কার বৈধ হবে। কেননা উক্ত পদ্ধতিতে বিষয়টা আসলে এমন হচ্ছে যে বিক্রেতার পক্ষ থেকে পূর্বে বিক্রিত মালে অতিরিক্ত বোনাস দেওয়া হচ্ছে।যা ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত। কিন্তু বোনাস দিতে গিয়ে কয়েক জনের মধ্য থেকে একজনকে লটারীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। 

প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে কি লটারী বৈধ ?
উত্তরে বলা হবে, ক্ষেত্র বিশেষে লটারী বৈধ রয়েছে।সব রকম লটারী হারামের অন্তর্ভুক্ত না।বরং ঐ সমস্ত লটারী-ই হারাম যা দ্বারা কোনো হক্ব বা যোগ্যতা অথবা মালিকানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি পূর্ব থেকেই হক্ব বা অধিকার প্রতিষ্টিত থাকে।কিন্তু উভয় সমান সমান হওয়ার ধরুণ কাউকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাচ্ছেনা।এমতাবস্তায় একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লটারির মাধ্যমে তাকে নির্ধারণ করা হচ্ছে।এ প্রকার লটারী বৈধ রয়েছে। যা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।যেমনঃ- আল্লাহ তা'আলার বানী,
 َ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳُﻠْﻘُﻮﻥ ﺃَﻗْﻼَﻣَﻬُﻢْ ﺃَﻳُّﻬُﻢْ ﻳَﻜْﻔُﻞُ ﻣَﺮْﻳَﻢَ ﻭَﻣَﺎ ﻛُﻨﺖَ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ ﺇِﺫْ ﻳَﺨْﺘَﺼِﻤُﻮﻥَ 
 "আপনি তখন তাদের কাছে উপস্থিত ছিলেন না। যখন তারা লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে মারইয়ামকে প্রতিপালন করবে। এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা এ নিয়ে ঝগড়া করছিলো।" সূরা-আলে ইমরান,৪৪। 

মারয়ামের পিতা না থাকার ধরুণ সবাই মারয়ামকে লালন-পালনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো।তাদের মধ্য থেকে একেকজন একেক আঙ্গিকে নিজেকে লালনপালনের অগ্রাধিকারী ধাবী করছিলো। যেহেতু তাদের সবার মধ্যে লালন-পালনের যোগ্যতা ও অধিকার প্রায় সামন সমান ছিলো।তাই লটারীর মাধ্যমে যাকারিয়া (আঃ)কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিলো। এখানে লালন-পালনের হক্বকে প্রমাণিত করা হচ্ছেনা।বরং লটারির মাধ্যমে ঝগড়াকে নিরসন করা হচ্ছিলো। হাদীস শরীফে এসেছে, হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত,
 عَنْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ( ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺳَﻔَﺮًﺍ ﺃَﻗْﺮَﻉَ ﺑَﻴْﻦَ ﻧِﺴَﺎﺋِﻪِ ، ﻓَﺄَﻳَّﺘُﻬُﻦَّ ﺧَﺮَﺝَ ﺳَﻬْﻤُﻬَﺎ ﺧَﺮَﺝَ ﺑِﻬَﺎ ﻣَﻌَﻪُ 
নবীজী সাঃ যখনই সফরের ইচ্ছা করতেন,তখন সমস্ত বিবিগণের মধ্যে লটারী দিতেন, লটারীতে যার নাম উঠে আসত,তাকে নিয়েই সফরে বের হতেন।(সহীহ বুখারী -২৪৫৪। সহীহ মুসলীম-২৭৭০) 
এখানেও নবীজী সাঃ এর সাথে সফরের অধিকার নিয়ে লটারী হচ্ছিল না। কেননা স্বামী সফরকালীন সময়ে স্ত্রীদের কোনো অধিকার নেই।যে কেউ যেতে পারবে। এখন লটারীর মাধ্যমে একজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এরকম লটারী ইসলামী শরীয়তে বৈধ রয়েছে।

ইমাম নববী রাহ বলেন
  ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻹﻗﺮﺍﻉ ﻋﻨﺪﻧﺎ ﻭﺍﺟﺐ   
 এরকম স্থানে লটারী আমাদের দৃষ্টিতে ওয়াজিব।( আল-মিনহাজ-১৫/২১০)

 ★সু-প্রিয় পাঠকবৃন্দ! 
 উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম,লটারী সর্বক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়,বরং ক্ষেত্র বিশেষে বৈধও রয়েছে। এখন যদি বোনাসই মূল উদ্দেশ্য হয়ে থাকে,তাহলে উক্ত পদ্ধতি ক্বেমারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে নাজায়েয হবে। কেননা ফিকহের মূলনীতি হচ্ছে الأمور بمقاصدها প্রতিটা বিষয় তার উদ্দেশ্যর উপর নির্ভরশীল। {আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর১/২৩} {কিতাবুল ফাতাওয়া, ১৮৪১-নং প্রশ্ন-উত্তর ।খ৫/পৃ২৪৭।} 
আয়োজক যদি দ্বিতীয় প্রকারের হয় তথা পুরুস্কার বিতরণের আয়োজন যদি কোন মার্কেটের পক্ষ্য থেকে হয়।যেখানে পৃথক পৃথক অনেক মালিক থাকে। এবং সবাই মিলে চাদা করে পুরুস্কার দেয়।তাহলে উক্ত পদ্ধতি ও উপরোক্ত শর্ত সমূহের ভিত্ততে হাদিয়া হিসেবে বৈধ হবে। কিছু সংখ্যক উলামায়ে কেরাম যেমন বিন বায রাহ, সহ আরও অনেকে উক্ত পুরুস্কারকে সর্বাবস্থায় ক্বেমারের অন্তর্ভুক্ত করে নাজায়েয ঘোষনা করে থাকেন। তারা উক্ত পুরুস্কার পদ্ধতির উপর কিছু আপত্তি তুলে ধরেণ।কিন্তু উক্ত আপত্তিসমূহের সুস্পষ্ট জবাব বৈধতাদানকারী গণের কাছে বিদ্যমান রয়েছে। সর্বাবস্থায় পরিত্যাগ করাই তাকওয়ার দাবী। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু "লটারির মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে পুরুস্কার বিতরন" অফারে শরয়ী নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করা হয়, তাই বিশেষ করে দ্বিতীয় প্রকার নিম্নোক্ত আয়াতে বর্ণিত জুয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে সুস্পষ্টরূপে হারাম হবে। এতে বৈধতার কোনো সুযোগই থাকবে না।
 ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺨَﻤْﺮُ ﻭَﺍﻟْﻤَﻴْﺴِﺮُ ﻭَﺍﻷَﻧﺼَﺎﺏُ ﻭَﺍﻷَﺯْﻻَﻡُ ﺭِﺟْﺲٌ ﻣِّﻦْ ﻋَﻤَﻞِ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﻓَﺎﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﻩُ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ 
 হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।(সূরা-মায়েদা-৯০)
 هذا ما خطر بالبال والله أعلم بحقيقة الحال


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...