আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
654 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (18 points)
আস সালামু আলাইকুমা।আমি একট আগেই আমার স্ত্রীকে মেসেঞ্জার এ বলেছি "এক তালাক দিলাম"। সে বরাবর ঈ যুক্তির বাইরে আর আমার বিরুদ্ধে চলে।স্বামী হিসেবে কোন মূল্যায়ন আমি পাইনি।অহেতুক ঝামেলা করে নামাকে আমার বৃদ্ধ বাবা মা থেকে দূরে থাতে বলে।অথচ আমার বাবা মা কে দেখাশুনা করার মত আমার আর ভাই নেই।আমার বর্তমানে কোন ইনকাম সোর্স ও নাই।এমতাবস্থায় বলেছিলাম ঈদের পর আমি ঢাকা যাব।টিউশনি করাবো।তখন তাকে আমি ঢাকা নিতে পারব।যেহেতু সামনে ঈদ।তাই বিয়ের পর ১ম ঈদ বলে তাকে আমার বাড়িতে আনার জন্য গত ৩ মাস যাবত চেষ্টা করছি।আজ তার বাবা কে বিষয় টা জানালে সে বলেছে তার মেয়ে জব না পাওয়া পর্যন্ত তার বাসায় থাকব। যেহেতু আমার ইনকম সোর্স নাই।তাই অল্প কিছু দিনের জন্য আমার বাসা থেকে ঘুরে যেতে বলেছিলাম যেন আমার বাবা মা খুশি হয়।যাই হো।তারা মেয়ে কেপাঠাবে না।আমি গেলেও না।তাই বলেছ আমি তাহলে কেন যাব? উল্লেখ্য স্ত্রী কারনে অকারনে বিভিন্ন গালি দেয় তা আজ আমার শশুর কে বিচার দিলে তিনি বললেন এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ঊনি কিছু বলবেন না।আমি জবাবে বলি এটা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিছু বলবেন না আবার আমার বউকে আমার বাসায় আনার বিষয়ে তাহলে নাক গলাচ্ছেন কেন? এতে তার বিরাট অপমান হয়েছে তাই স্ত্রী ও অনেক কথা শুনালে আমি মেসেঞ্জার এ এক তালাকের কথা বলি।এই তালাক কি পতিত হয়েছে?এখন আমার কি করনীয়? এর মাসায়েল জানতে চাই

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


ইসলামের মূল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক তালাক দেওয়ার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে। 
 
সূরা আন নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا (34)

"পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক। কারণ, আল্লাহ তাদের একের ওপর অপরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং পুরুষেরা নিজের ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা অনুগত এবং বিনম্র। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তারা তাঁর অধিকার ও গোপন বিষয় রক্ষা করে। আল্লাহই গোপনীয় বিষয় গোপন রাখেন।যদি স্ত্রীদের অবাধ্যতার আশংকা কর তবে প্রথমে তাদের সৎ উপদেশ দাও। এরপর তাদের শয্যা থেকে পৃথক কর এবং তারপরও অনুগত না হলে তাদেরকে শাসন কর৷ এরপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়, তবে তাদের সাথে কর্কশ আচরণ করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমু্ন্নত-মহীয়ান।" (৪:৩৪)
,
সুরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آَتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229)

"এ তালাক দু'বার, অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিসম্মতভাবে রাখবে অথবা সদয়ভাবে বিদায় দেবে। আর স্ত্রীকে দেয়া কোন কিছু ফেরৎ নেয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। তবে যদি তাদের উভয়ের আশংকা হয় যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না, তবে (সে অবস্থায়) স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে (স্বামী থেকে) নিষ্কৃতি পেতে চাইলে তাতে (স্বামী-স্ত্রীর) কারো কোনো পাপ নেই। এসব আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই তা লংঘন কর না। যারা আল্লাহর (নির্দিষ্ট) সীমারেখা লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।" (২:২২৯)
,
তালাক রাগের মাথায় দেওয়া হোক,বা হেসে হেসেই দেওয়া হোক,সব ছুরতেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন  
 ثلث جدهن جد هزلـهن جد النكاح والطلاق والرجعة 

অর্থ : তিনটি বিষয় এমন রয়েছে যা গোস্বায় হোক বা হাসি ঠাট্টায় হোক সর্বাবস্থায় কার্যকরী হয়ে থাকে। বিবাহ্, তালাক ও রজয়াত।” (তিরমিযী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ/২৮৪) 

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছেঃ  

رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)
যার সারমর্ম হলো কেহ যদি কাহারো দ্বারা তালাক লিখে নিজ স্ত্রীর কাছে পত্র পাঠায়,এবং স্ত্রীর কাছে পৌছে,স্ত্রী বুঝে যে এটা তাহারই পত্র। 
তাহলে তালাক পতিত হয়ে যাবে।       

,    
এক তালাক বা দুই তালাক দেয়ার পর স্বামীর অধিকার থাকে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। 

কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ নয়। (ফাতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ-৯/৪৪১,২৪৫)

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়েছে।
,
এক্ষেত্রে স্বামীর অধিকার আছে যে, স্ত্রীকে ইদ্দত তথা তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে রাজআত করা (মৌখিক ভাবে বা স্বামীসুলভ আচরনের মাধ্যমে) তথা স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ফিরিয়ে আনা। এতে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই। 
,
তাই যদি ইদ্দত কাল শেষ না হয়ে থাকে,তাহলে স্বামী এক্ষেত্রে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারবে। 
,
কিন্তু যদি তিন হায়েজ অতিক্রান্ত হওয়ার আগে স্ত্রীকে ফিরিয়ে না আনা হয়, তাহলে স্ত্রীকে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহর ধার্য করে বিবাহ করা আবশ্যক। নতুবা স্বামী স্ত্রী হিসেবে উভয়ের বসবাস করা জায়েজ হবেনা।
,
এক তালাকের পর ফিরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুনঃ 
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এক তালাকে রজয়ী পতিত হয়ে গেছে। 
আপনি যদি ইদ্দতের মধ্যেই উক্ত স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চান,তাহলে উল্লেখিত পদ্ধতি অবলম্বন করে ফিরিয়ে নিতে হবে।
,
ইদ্দত কাল যদি অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ফিরিয়ে নেন,তাহলে নতুন করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...