ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
মুজতাহিদ নয় এমন সবার জন্য মাযহাব মানা ফরয।বিস্তারিত জানতে দেখুন!জাস্টিস আল্লামা তাক্বী উসমানী রচিত"মাযহাব কি ও কেন?"
মাযহাব অর্থ হল,কুরআন-হাদীসের ব্যাখা জানতে কারো সাহায্য গ্রহণ করা।অর্থাৎ যারা নিজে সরাসরি কুরআনের আয়াত বা হাদীসে রাসূল এর মর্মার্থ বুঝতে পারেন না, তারা অন্যর সাহায্য নিয়ে কুরআন-হাদীস এর মর্মার্থ বুঝবেন,এবং সে অনুযায়ী আ'মল করবেন।
সুতরাং কোনো এক অালেম বা মৌলিক মূলনীতি এক এমন একদল আলেমের কুরাআন-সুন্নাহ অনুসৃত মত ও পন্থাকে অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব।এক্ষেত্রে সকল মাস'আলায় শুধুমাত্র একজনকেই অনুসরণ করতে হবে।নতুবা একেকজনকে একেক মাস'আলা অনুসরণ মূলত প্রবৃত্তির অনুসরণ হবে,।এজন্য এমন কোনো এক আলেম বা মূলনীতি এক এমন একদল আলেমকে অনুসরণ করতে হবে যাদের প্রায় সকল বিষয়ে ইজতেহাদ রয়েছে।এই হল মাযহাব এর তাৎপর্য। সুতরাং এ দৃষ্টিকোনে নবীজী সাঃ কোনো মাযহাবের অনুসারী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
হ্যা কুরআন হাদীসে মাযহাবের কথা রয়েছে।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﺇِﻻَّ ﺭِﺟَﺎﻻً ﻧُّﻮﺣِﻲ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﺍْ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻻَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে। (সূরা নাহল-৪৩)
এই জিজ্ঞাসা এবং সে অনুযায়ী আ'মল করা এর নামই মাযহাব।
হাদীসে মাযহাবের অনুমোদন
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺣﻔﺺ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻋﻦ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﻮﻥ ﻋﻦ
ﺍﻟﺤﺎﺭﺙ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﺍﺑﻦ ﺃﺧﻲ ﺍﻟﻤﻐﻴﺮﺓ ﺑﻦ ﺷﻌﺒﺔ ﻋﻦ ﺃﻧﺎﺱ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺣﻤﺺ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻣﻌﺎﺫ ﺑﻦ ﺟﺒﻞ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺒﻌﺚ ﻣﻌﺎﺫﺍ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻴﻤﻦ ﻗﺎﻝ ﻛﻴﻒ ﺗﻘﻀﻲ ﺇﺫﺍ ﻋﺮﺽ ﻟﻚ ﻗﻀﺎﺀ ﻗﺎﻝ ﺃﻗﻀﻲ ﺑﻜﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺠﺪ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﻓﺒﺴﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﻓﺈﻥ ﻟﻢ ﺗﺠﺪ ﻓﻲ ﺳﻨﺔ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺃﺟﺘﻬﺪ ﺭﺃﻳﻲ ﻭﻻ ﺁﻟﻮ ﻓﻀﺮﺏ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﺪﺭﻩ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﻭﻓﻖ ﺭﺳﻮﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻤﺎ ﻳﺮﺿﻲ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ
ﺑﺎﺏ ﺍﺟﺘﻬﺎﺩ ﺍﻟﺮﺃﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﻀﺎﺀ
রাসূলুল্লাহ সাঃ যখন মু'আয রাযি.কে ইয়ামন প্রেরণের ইচ্ছা করলেন,তখন তাকে বললেন,তুমি কিভাবে বিচার পরিচালনা করবে? যখন তোমার সামনে বিচারকার্য উপস্থিত হবে।তখন মু'আয রাযি উত্তরে বললেন,আমি কিতাবুল্লাহ দ্বারা বিচার কার্য পরিচালনা করব।রাসূলুল্লাহ আবার জিজ্ঞাসা করলেন,যদি তুমি কিতাবুল্লাহে সেই বিষয়কে খুঁজে না পাও তখন কি করবে?মু'আয রাযি বললেন,তখন সুন্নাতে রাসূল দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনা করব।রাসূলুল্লাহ সাঃ আবার বললেন,যদি তুমি কিতাবুল্লাহ বা সুন্নাতে রাসূলে খুঁজে না পাও তবে কি করবে?মু'আয রাযি বললেন,তাহলে নিজে ইজতেহাদ করে বিচার কার্য করব,এবং এতে কোনোপ্রকার ত্রুতি থাকবে না।একথা শুনে খুশিতে রাসূলুল্লাহ সাঃ মু'আয রাযি এর সিনায় হাত বুলিয়ে বললেন,'সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি উনার রাসূলের দূতকে এমন জিনিষ এর তাওফিক দিয়েছেন যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ খুশি ও আনন্দিত। (সুনানে আবু-দাউদ- ৩৫৯২)
দেখুন!
মু'আয রাযি.কুরআন-হাদীসকে সামনে রেখে তার আলোকে ইজতেহাদ করার কথা বলছেন,আর রাসূলুল্লাহ সাঃও এ কথা শুনে খুশি হলেন।
আর বিষয়ে কুরআন-হাদীসের সরাসরি কোনো নস নেই তাতে ইজতেহাদ করার নামই হল মাযহাব।আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনি হানাফি ঘরে জন্ম নিছেন, এজন্য যে আপনাকে হানাফি হতেই হবে, বিষটা মূলত এমন নয়, বরং আপনি জেনে বুঝে যে কোনো মাযহাব কে ফলো করতে পারেন। আবার কিছূ কোনো মাযহাবের উপর আ’মল করার পর ভিন্ন মাযহাব আপনার নিকট কুরআন সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী মনে হলে আপনি সেই মাযহাবকেও ফলো করতে পারেন। এতে শরীয়তের পক্ষ্য থেকে কোনো বিধি-নিষেধ নাই। তবে প্রবৃত্তির অনুসরণ না হওয়াই কাম্য ।নিজের সুযোগ সুবিধা দেখে কোনো মাযহাবকে গ্রহণ করা যাবে না। বরং কুরআন সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তীতা দেখেই মাযহাব অনুসরণ করতে হবে। আপনি যদি সকল মাসআলায় হানাফি ফিকহকে অনুসরণ করে থাকেন,তাহলে আপনাকে নামাযেও হানাফি ফিকহকে অনুসরণ করতে পারেন। হানাফি ফিকহ অনুসরণ করার পরও বিশেষ অসুবিধার কারণে আপনি পুরুষের মত সিজদা দিতে পারবেন।এতে কোনো অসুবিধে নাই।
আর যদি আপনি কোনো মাসআলাই হানাফি ফিকহকে অনুসরণ না করে থাকেন, তাহলে এজন্য আপনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত থেকে বের হবেন না। কেননা শা’ফেয়ী, মালিকি, হাম্বলী এবং সালাফি বা আহলে হাদীস সবাই আহলে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।