ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সন্তুষ্টিতে পুরাতন স্বর্ণকে কম বেশ করে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয় হবে। তবে পুরাতন স্বর্ণকে নতুন স্বর্ণের দ্বারা কমবেশ করে এক্সেঞ্জ করা বা বদলানো কখনো জায়েয হবে না। বরং এটা সুদ হয়ে যাবে।
সূদের পরিচয় ও প্রকার :
‘রিবা’ অর্থ সূদ। ‘রিবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত, বর্ধিত। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সূদ বলে। মোটকথা বাকীতে কিংবা নগদে সমজাতীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয়, তাকে ইসলামী শরী‘আতে সূদ বলা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الآخِذُ وَالْمُعْطِى فِيْهِ سَوَاءٌ-
‘স্বর্ণের বদলে স্বর্ণ, রৌপ্যের বদলে রৌপ্য, গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, খেজুরের বদলে খেজুর, লবণের বদলে লবণ সমান সমান হাতে হাতে নিবে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাতে বেশী দিল বা বেশী চাইল, সে সূদে পতিত হ’ল। গ্রহীতা ও দাতা উভয়ে সমান’( মুসলিম হা/১৫৮৪, মিশকাত হা/২৮০৯)
সূদ দুই প্রকার। যথা- রিবা আল-ফাযল ও রিবা আন-নাসীআহ। নগদে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আল-ফাযল। আর বাকীতে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আন-নাসীআহ। দু’টিই সূদ এবং দু’টিই নিষিদ্ধ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الرِّبَا فِى النَّسِيئَةِ ‘সূদ হ’ল বাকীতে’।(মুসলিম হা/১৫৯৬; মিশকাত হা/২৮২৪, ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।) তবে নগদে হ’লে সেটা সূদ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ رِبًا فِيْمَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ ‘হাতে হাতে নগদ লেনদেনে কোন সূদ নেই’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৮২৪) আবার বিনিময়ের ক্ষেত্রে পণ্যের ভিন্নতা থাকলেও সেটা সূদ হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,…فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ. ‘যখন দ্রব্য ভিন্ন হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশী ক্রয়-বিক্রয় কর, যখন তা হাতে হাতে নগদে হবে’। ( মুসলিম হা/১৫৮৭।)
একই জাতীয় পণ্য বিনিময়ে কম-বেশী যেহেতু বৈধ নয়, সেহেতু কেউ নিজের কাছে থাকা নিম্ন মানের জিনিস পরিবর্তন করে উন্নত মানের জিনিস নিতে চাইলে কি করবে এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বার এলাকায় এক ব্যক্তিকে চাকুরী দিলেন। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বেশ ভালো খেজুর নিয়ে আসল। রাসূল (ছাঃ) তা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এমন ভালো হয়? ঐ ব্যক্তি বলল, জি না, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এক ছা‘ এরূপ খেজুর দুই ছা‘ (খারাপ) খেজুরের বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। অথবা ভালো দুই ছা‘ খারাপ তিন ছা‘র বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এভাবে বিনিময় করো না। বরং খারাপ খেজুর (দুই বা তিন ছা‘) মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ঐ মুদ্রা দিয়ে ভালো খেজুর কিনে নাও’। (মুসলিম হা/১৫৯৪, ‘সমপরিমাণ খাদ্য বিনিময় সংক্রান্ত’ অধ্যায়।) (সংগৃহিত)