আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
970 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (31 points)
আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের দেশে প্রচলিত সোনার ব্যবসার একটি নিয়ম হলো, সাধারণ মানুষ স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছে স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে প্রচলিত বাজারদরের ১০ বা ২০ পার্সেন্ট মূল্য কম দেওয়া হয়।

 অথবা সঞ্চিত স্বর্ণের বিনিময়ে নতুন স্বর্ণের গয়না কিনতে চাইলে, সমমূল্যের স্বর্ণ দেওয়া হয় না। বরং ১০% বা ২০% স্বর্ণ পরিমানে কম দেওয়া হয়।

যে দোকান থেকে কয়েকবছর আগে ১০ গ্রাম স্বর্ণের গয়না কিনা হয়েছে, সেই একই দোকান থেকে ১০ গ্রাম গয়না চেঞ্জ করলে, তারা ৯ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিবে। ১০ গ্রাম দিবে না।

এইরূপ লেনদেন কি হালাল?

স্বর্ণ বিক্রয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে কি এই নিয়মে আমরা সোনার দোকানে গয়না বিক্রি করে টাকা নিতে পারবো? এই বিক্রয় বৈধ হবে?
অথবা যদি শখের বশে কেউ গয়নার ডিজাইন পরিবর্তন করতে চেয়ে বেশি ওজনের স্বর্ণের বিনিময়ে কম ওজনের স্বর্ণের গয়না ক্রয় করে, তবে কি তা হালাল হবে?

1 Answer

0 votes
by (592,110 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের সন্তুষ্টিতে পুরাতন স্বর্ণকে কম বেশ করে ক্রয়-বিক্রয় জায়েয় হবে। তবে পুরাতন স্বর্ণকে নতুন স্বর্ণের দ্বারা কমবেশ করে এক্সেঞ্জ করা বা বদলানো কখনো জায়েয হবে না। বরং এটা সুদ হয়ে যাবে। 

সূদের পরিচয় ও প্রকার :
‘রিবা’ অর্থ সূদ। ‘রিবা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ অতিরিক্ত, বর্ধিত। মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাকে সূদ বলে। মোটকথা বাকীতে কিংবা নগদে সমজাতীয় পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে মূল পণ্যের অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করা হয়, তাকে ইসলামী শরী‘আতে সূদ বলা হয়। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
اَلذَّهَبُ بِالذَّهَبِ وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ وَالشَّعِيْرُ بِالشَّعِيْرِ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مِثْلاً بِمِثْلٍ يَدًا بِيَدٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ اسْتَزَادَ فَقَدْ أَرْبَى الآخِذُ وَالْمُعْطِى فِيْهِ سَوَاءٌ- 
‘স্বর্ণের বদলে স্বর্ণ, রৌপ্যের বদলে রৌপ্য, গমের বদলে গম, যবের বদলে যব, খেজুরের বদলে খেজুর, লবণের বদলে লবণ সমান সমান হাতে হাতে নিবে। অতঃপর যে ব্যক্তি তাতে বেশী দিল বা বেশী চাইল, সে সূদে পতিত হ’ল। গ্রহীতা ও দাতা উভয়ে সমান’( মুসলিম হা/১৫৮৪, মিশকাত হা/২৮০৯)
সূদ দুই প্রকার। যথা- রিবা আল-ফাযল ও রিবা আন-নাসীআহ। নগদে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আল-ফাযল। আর বাকীতে বেশী নিলে সেটা হবে রিবা আন-নাসীআহ। দু’টিই সূদ এবং দু’টিই নিষিদ্ধ। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, الرِّبَا فِى النَّسِيئَةِ ‘সূদ হ’ল বাকীতে’।(মুসলিম হা/১৫৯৬; মিশকাত হা/২৮২৪, ‘সূদ’ অনুচ্ছেদ।) তবে নগদে হ’লে সেটা সূদ হবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,لاَ رِبًا فِيْمَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ ‘হাতে হাতে নগদ লেনদেনে কোন সূদ নেই’। (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৮২৪) আবার বিনিময়ের ক্ষেত্রে পণ্যের ভিন্নতা থাকলেও সেটা সূদ হবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,…فَإِذَا اخْتَلَفَتْ هَذِهِ الأَصْنَافُ فَبِيْعُوْا كَيْفَ شِئْتُمْ إِذَا كَانَ يَدًا بِيَدٍ. ‘যখন দ্রব্য ভিন্ন হবে, তখন তোমরা যেভাবে খুশী ক্রয়-বিক্রয় কর, যখন তা হাতে হাতে নগদে হবে’। ( মুসলিম হা/১৫৮৭।)
একই জাতীয় পণ্য বিনিময়ে কম-বেশী যেহেতু বৈধ নয়, সেহেতু কেউ নিজের কাছে থাকা নিম্ন মানের জিনিস পরিবর্তন করে উন্নত মানের জিনিস নিতে চাইলে কি করবে এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ সাঈদ ও আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খায়বার এলাকায় এক ব্যক্তিকে চাকুরী দিলেন। ঐ ব্যক্তি সেখান থেকে বেশ ভালো খেজুর নিয়ে আসল। রাসূল (ছাঃ) তা দেখে জিজ্ঞেস করলেন, খায়বারের সব খেজুরই কি এমন ভালো হয়? ঐ ব্যক্তি বলল, জি না, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এক ছা‘ এরূপ খেজুর দুই ছা‘ (খারাপ) খেজুরের বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। অথবা ভালো দুই ছা‘ খারাপ তিন ছা‘র বিনিময়ে গ্রহণ করে থাকি। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এভাবে বিনিময় করো না। বরং খারাপ খেজুর (দুই বা তিন ছা‘) মুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে ঐ মুদ্রা দিয়ে ভালো খেজুর কিনে নাও’। (মুসলিম হা/১৫৯৪, ‘সমপরিমাণ খাদ্য বিনিময় সংক্রান্ত’ অধ্যায়।) (সংগৃহিত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...