আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,018 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (10 points)
আসসালামুআ'লাইকুম।

আল্লাহ   নিজ হাতে আদম ( আ:) কে সৃষ্টি করেছেন।

এই ধারনা কি ঠিক আছে যে, আল্লাহ নিজ হাতে অন্য সকল মানুষ/ জ্বীন/ ফিরিস্তা কেও সৃষ্টি করেছেন?

কিছু জায়গায় এমন ইনফরমেনশন দেওয়া যে,, আল্লাহ আরশ, জান্নাত, আদম( আ:) কে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন।

বাকি সব কিছু কে বলেছেন " হও" তা হয়ে গেছে।

একটু দয়া করে ব্যাখ্যা করবেন।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


আল্লাহ্ তাআলা আদম (আঃ) কে খাসভাবে নিজহাতে সৃষ্টি করেছেন যেমনটি তিনি জানিয়েছেন। আদম (আঃ) ছাড়া অন্য কোন জীবকে তিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেননি। 

আল্লাহ্ তাআলা বলেন: 

قَالَ یٰۤاِبۡلِیۡسُ مَا مَنَعَکَ اَنۡ تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِیَدَیَّ ؕ اَسۡتَکۡبَرۡتَ اَمۡ کُنۡتَ مِنَ الۡعَالِیۡنَ ﴿۷۵﴾

আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’ 

(হে ইবলীস! আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সেজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে; নাকি আগে থেকেই তুমি অহংকারী ছিলে?)"[সূরা সা'দ, আয়াত: ৭৫]

অন্য হাদীসে তাওরাত লেখার কথাও এসেছে। [বুখারী: ৬৬১৪] 

তাছাড়া তিনি জান্নাতও নিজ হাতে তৈরী করেছেন। [মুসলিম: ১৮৯] 

অনুরূপভাবে তিনি নিজ হাতে একটি কিতাব লিখে তাঁর কাছে রেখে দিয়েছেন যাতে লিখা আছে যে, তাঁর রহমত তার ক্রোধের উপর প্রাধান্য পাবে। [ইবন মাজাহ: ১৮৯]

 হাদিস শরিফে  এসেছে: 

"আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। তোমরা কি জান; আল্লাহ কিভাবে একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহ্বানকারীর আহ্বান সবার নিকট পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে: তোমরা কি দেখছ না, তোমরা কী অবস্থায় আছ এবং কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ। তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে: তোমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) আছেন। তখন সকলে তাঁর নিকট যাবে এবং বলবে: হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর রূহ থেকে আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়ায় তারা সকলে আপনাকে সিজদা করেছে। তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী অবস্থায় আছি এবং কী কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি। তখন তিনি বলবেন: আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি; আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে বৃক্ষটি হতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর অবাধ্য হয়েছি। আমার আত্মা, আমার আত্মা। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে যাও।..."[সহিহ বুখারী (৩৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (১৯৪)]

পূর্ণ হাদীসটি হলোঃ

حَدَّثَنِيْ إِسْحَاقُ بْنُ نَصْرٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عُبَيْدٍ حَدَّثَنَا أَبُوْ حَيَّانَ عَنْ أَبِيْ زُرْعَةَ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيْ دَعْوَةٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَسَ مِنْهَا نَهْسَةً وَقَالَ أَنَا سَيِّدُ الْقَوْمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ هَلْ تَدْرُوْنَ بِمَ يَجْمَعُ اللهُ الأَوَّلِيْنَ وَالْآخِرِيْنَ فِيْ صَعِيْدٍ وَاحِدٍ فَيُبْصِرُهُمْ النَّاظِرُ وَيُسْمِعُهُمْ الدَّاعِيْ وَتَدْنُوْ مِنْهُمْ الشَّمْسُ فَيَقُوْلُ بَعْضُ النَّاسِ أَلَا تَرَوْنَ إِلَى مَا أَنْتُمْ فِيْهِ إِلَى مَا بَلَغَكُمْ أَلَا تَنْظُرُوْنَ إِلَى مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ فَيَقُوْلُ بَعْضُ النَّاسِ أَبُوكُمْ آدَمُ فَيَأْتُوْنَهُ فَيَقُوْلُوْنَ يَا آدَمُ أَنْتَ أَبُوْ الْبَشَرِ خَلَقَكَ اللهُ بِيَدِهِ وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوْحِهِ وَأَمَرَ الْمَلَائِكَةَ فَسَجَدُوْا لَكَ وَأَسْكَنَكَ الْجَنَّةَ أَلَا تَشْفَعُ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلَا تَرَى مَا نَحْنُ فِيْهِ وَمَا بَلَغَنَا فَيَقُوْلُ رَبِّيْ غَضِبَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَا يَغْضَبُ بَعْدَهُ مِثْلَهُ وَنَهَانِيْ عَنْ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ نَفْسِيْ نَفْسِيْ اذْهَبُوْا إِلَى غَيْرِيْ اذْهَبُوْا إِلَى نُوْحٍ فَيَأْتُوْنَ نُوْحًا فَيَقُوْلُوْنَ يَا نُوْحُ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ وَسَمَّاكَ اللهُ عَبْدًا شَكُوْرًا أَمَا تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيْهِ أَلَا تَرَى إِلَى مَا بَلَغَنَا أَلَا تَشْفَعُ لَنَا إِلَى رَبِّكَ فَيَقُوْلُ رَبِّيْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ وَلَا يَغْضَبُ بَعْدَهُ مِثْلَهُ نَفْسِيْ نَفْسِيْ ائْتُوْا النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَيَأْتُوْنِيْ فَأَسْجُدُ تَحْتَ الْعَرْشِ فَيُقَالُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক খানার দা’ওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁর সামনে (রান্না করা) ছাগলের বাহু আনা হল, এটা তাঁর নিকট পছন্দনীয় ছিল। তিনি সেখান হতে এক খন্ড খেলেন এবং বললেন, আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হব। তোমরা কি জান? আল্লাহ কিভাবে (কিয়ামতের দিন) একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্র করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহবানকারীর আহবান সবার নিকট পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে, তোমরা কি লক্ষ্য করনি, তোমরা কী অবস্থায় আছ এবং কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছ। তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) আছেন। তখন সকলে তাঁর নিকট যাবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার পক্ষ হতে রূহ আপনার মধ্যে ফুঁকেছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে (আপনার সম্মানের) নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সকলে আপনাকে সিজদাও করেছেন এবং তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি দেখেন না, আমরা কী অবস্থায় আছি এবং কী কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি। তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর তিনি আমাকে বৃক্ষটি হতে নিষেধ করেছিলেন। তখন আমি ভুল করেছি। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা আমাকে ছাড়া অন্যের নিকট যাও। তোমরা নূহের নিকট চলে যাও। তখন তারা নূহ (আঃ)-এর নিকট আসবে এবং বলবে, হে নূহ! পৃথিবীবাসীদের নিকট আপনিই প্রথম রাসূল এবং আল্লাহ আপনার নাম রেখেছেন কৃতজ্ঞ বান্দা। আপনি কি লক্ষ্য করছেন না, আমরা কী ভয়াবহ অবস্থায় পড়ে আছি? আপনি দেখছেন না আমরা কতই না দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয়ে আছি? আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়ে আছেন, যা ইতোপূর্বে হন নাই এবং এমন রাগান্বিত পরেও হবেন না। এখন আমি নিজের চিন্তায়ই ব্যস্ত। তোমরা নবী [মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট চলে যাও। তখন তারা আমার নিকট আসবে আর আমি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে যাব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার মাথা উঠান এবং সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে আর আপনি যা চান, আপনাকে তাই দেয়া হবে। মুহাম্মাদ ইবনু ‘উবাইদ (রহ.) বলেন, হাদীসের সকল অংশ মুখস্থ করতে পারিনি। 

(বুখারী শরীফ ৩৩৬১, ৪৭১২) (মুসলিম ১/৮৪ হাঃ ১৯৪ আহমাদ ৯২২৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০১)


ইমাম দারেমী (রহঃ) বলেন: "আল্লাহ্ নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোন জীবকে তাঁর হস্তদ্বয় দিয়ে সৃষ্টি করেননি। এ কারণে আদম (আঃ) কে বিশেষিত করেছেন, মর্যাদা দিয়েছেন এবং এটাকে উল্লেখ করে আদমকে সম্মানিত করেছেন।"[নাকযুদ দারিম আলাল মির্রিসি, পৃষ্ঠা-৬৪)]

দারেমী, লালাকায়ি ও আজুর্রি এবং অন্যান্য আলেম সহিহ সনদে ইবনে উমর (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন: "আল্লাহ্ চারটি জিনিসকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন: আরশ, কলম, আদন (জান্নাত) ও আদম (আঃ)। এরপর অন্যসব সৃষ্টিকে লক্ষ্য করেন বলেন: হও; তখন তারা হয়ে যায়।"

দারেমী হাসান সনদে কিন্দা গোত্রের মাওলা সালেহ এর পিতা মায়সারা নামক তাবেয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনটি ছাড়া তার অন্য কোন সৃষ্টিকে স্পর্শ করেননি: তিনি আদমকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তাওরাত নিজ হাতে লিখেছেন। জান্নাতে আদন নিজ হাতে লাগিয়েছেন।[নাকযুদ দারেমী, পৃষ্ঠা-৯৯] 

এই হল চারটি জিনিস যেগুলোকে আল্লাহ্ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন: আরশ, কলম, আদন জান্নাত ও আদম (আঃ)। আর অবশিষ্ট সকল সৃষ্টি (মানুষ, জীন ফেরেশতা সহ সকলে)  "কুন" শব্দ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...