ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
কমোড ধৌত করার ব্রাশের পিঠের দিকে 'শাহজালাল প্লাস্টিক' লিখাটা কখনো উচিৎ হয়নি।কেননা শাহজালাল একজন সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। তাই এই অসম্মান জনক কাজের জন্য উনার নাম ব্যবহার করা ঠিক হবে না। তবে এখানে উনাকে অসম্মান করার জন্য উনার নাম লিখা হয়নি। বরং এখানে কম্পানির প্রডাক্ট হিসেবে, প্রডাক্টের নাম, লিখা হয়েছে। এই ব্রাশ ব্যবহার করা উচিৎ হবে না। তবে কেউ যদি ব্যবহার করে নেয়, তাইলে ঈমান চলে যাবে না। কেননা এই নাম কুরআন হাদীস নয়।
ইসলামে কুফুর, কাফের ও কাউকে কাফের বলে ঘোষণা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি বিষয়। সমকালে বিষয়টি জনপরিসরে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ক্ষুদ্র এই রচনাটিতে এ সংক্রান্ত সূক্ষ্ম ও জটিল আলোচনায় না গিয়ে এর সাধারণ ও প্রাথমিক কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা হবে।
পরিভাষার সাথে শব্দমূলের একটা গভীর যোগাযোগ থাকে। সেটা ধরতে পারলে পরিভাষাটিকে গভীর থেকে বুঝা সহজ হয়। এ জন্য পারিভাষিক অর্থে যাওয়ার আগে শাব্দিক অর্থের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। আরবি ‘কুফরুন’ শব্দের মধ্যে ঢেকে দেওয়া, অকৃতজ্ঞতা করা ও আল্লাহকে অস্বীকার করার অর্থগুলো পাওয়া যায়।
পারিভাষিকভাবে কুফুরকে পরিচয় করাতে গিয়ে নানাজন নানা শব্দে একে উল্লেখ করেছেন। শব্দ ভিন্ন হলেও একটু গভীরভাবে দেখলে বুঝা যাবে মর্মগতভাবে সবগুলো আসলে একই অর্থ ধারণ করছে। যেমন, আল্লামা ইবনে হাজম রহ. বলেছেন : আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাতকে অস্বীকার করা, কুরআনুল কারীমে যে সকল নবীর নুওয়াত প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কোন একজনের নবী হওয়াকে অস্বীকার করা, কিংবা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল বিষয় নিয়ে এসেছেন, সেগুলো থেকে এই অস্বীকারকারীর নিকট যেগুলো বিরাট দলের বর্ণনার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, তার কোন কিছুকে অস্বীকার করা; অথবা, এমন কোন কাজ করা, যার কুফুরী হওয়ার ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—এমন সব কিছুর জন্য আল্লাহ তাআলা ‘কুফরুন’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। (আল ফাসল ফিল মিলাল ওয়াল আহওয়া ওয়াননিহাল, ৩:১১৮)
এখানে অস্বীকার করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো স্বীকার না করা। সুতরাং যদি এমন হয়, একজন লোক এগুলোকে অস্বীকার করে না, আবার স্বীকারও করে না; হয়তো সে বিশ্বাস করে না, বা তার সন্দেহ আছে; তাই সে চুপ থাকে ও এড়িয়ে চলে, তাহলে সেও কাফের বলে বিবেচিত হবে। ইবনে তাইমিয়া রহ. এর সংজ্ঞার মধ্যে এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। (মাজমুউল ফাতওয়া, ১৩:৩৩৫)
ইবনে হাজমের সংজ্ঞার শেষ অংশটুকু পরিস্কার হওয়ার জন্য আমরা আরেকটি সংজ্ঞার দিকে দৃষ্টিপাত করি। ইমাম ইবনুল ওয়াজির বলেন : কুফুরের মূল কথা হলো—আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ জ্ঞাত কিতাব সমূহের কোন অংশকে স্বেচ্ছায় মিথ্যা বলা, কোন রাসূলকে অস্বীকার করা, অথবা তারা যা যা নিয়ে এসেছেন, তার মধ্য থেকে যেগুলোর ব্যাপারে স্বভাবত আবশ্যকীয়ভাবে মুসলমানমাত্রই জ্ঞাত থাকে, সে রকম কোন অংশকে অস্বীকার করা (ইসারুল হক: ৩৭৬)। আরেক জায়গায় তিনি কুফুরের যে সংজ্ঞা দিয়েছেন, সেখানে এসব বিষয়কে অস্বীকার করার পাশাপাশি এগুলোর প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত অর্থের বাইরে অপব্যাখ্যা করাকেও কুফুর বলে আখ্যায়িত করেছেন (ইসারুল হক: ২২৩)। ধরা যাক, পরকালে জান্নাত মানে কী এটা স্বভাবত আবশ্যকীয় জ্ঞাত একটি বিষয়। এখন কেউ যদি জান্নাতের ব্যাখ্যা দিয়ে বলে, এর মানে হলো দুনিয়ার জীবনে স্বাচ্ছন্দপূর্ণ জীবনযাপন—এই অপব্যাখ্যা কুফুরি হবে।
“স্বভাবত আবশ্যকীয়ভাবে মুসলমানমাত্রই জ্ঞাত”—এর ব্যাখ্যায় আল্লামা কাশ্মিরী রহ. বলেন : এসব বিষয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : দীনের সেইসব অকাট্য ও সুনিশ্চিত বিষয়সমূহ যেগুলোর দীনের অংশ হওয়ার ব্যাপারটি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং তা প্রজন্ম পরম্পরা ও প্রশিদ্ধি লাভ করেছে। এমন যে সাধারণ মুসলমানগণও এসবের ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। যেমন তাওহিদ, নবুওয়াত, খতমে নবুওয়াত, পুনরুত্থান, শাস্তি ও প্রতিদান, নামাজ ও জাকাত ওয়াজিব হওয়া, মদ হারাম হওয়া ইত্যাদি।
একটা প্রশ্ন হতে পারে—এমন গাফেল মুসলমানও তো আছে, যে এমন সাধরণ বিষয়গুলোর কোন কিছু না জানতে পারে। তার ক্ষেত্রে কী হবে? এবং দীনের কোনো বিষয় এ পর্যায়ে পোঁছার মানদণ্ড কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে আল্লামা কাশ্মিরী রহ. বলেছেন : এমন ব্যাপক প্রশিদ্ধির মানদণ্ড হলো : সাধারণ মুসলমানের সকল স্তরে এ সবের সংবাদটি পোঁছে যাওয়া। এখন, প্রত্যেকেই জানতে হবে—এমনটি জরুরী নয়। এমনিভাবে সাধারণ মুসলমানের যে স্তর দীনের ব্যাপারে আগ্রহ রাখে না, তাদের মধ্যে পোঁছাও জরুরী নয়। বরং, যে স্তরগুলো দীনের ব্যাপারে আগ্রহ রাখে, তেমন স্তরগুলোতে পোঁছে গেলেই বিষয়গুলো “স্বভাবত আবশ্যকীয়ভাবে মুসলমানমাত্রই জ্ঞাত” বলে প্রমাণিত হবে (ইকফারুল মুলহিদীন : ২,৩)। এমন কোন কিছুকে স্বীকার না করলে সে ব্যক্তি কাফের হবে, এবং তাকে কাফের বলার কাজটিকে তাকফীরকরণ বলা হয়।
কুফরের এই সংজ্ঞা ও সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণ থেকে বুঝা যায় ‘তাকফীর’ বা কাউকে কাফের বলার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সতর্কতা-আবশ্যক একটি বিষয়। সে আলোচনায় যাওয়ার আগে কুফরের প্রকার নিয়ে কিছু আলোচনা করা সঙ্গত হবে।
কুফরের প্রকার :