বিসমিহি তা'আলা
জবাবঃ-
আল্লাহ তা'আলা কুরআন অধ্যায়ন সম্পর্কে বলেন,
ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﺬِﻛْﺮَﻯ ﻟِﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﻗَﻠْﺐٌ ﺃَﻭْ ﺃَﻟْﻘَﻰ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊَ ﻭَﻫُﻮَ ﺷَﻬِﻴﺪٌ
এতে উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে।(সূরা ক্বাফ-৩৭)
উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায় যে,কোনো কিতাব অধ্যায়ন বা কোনো বায়ান শুনার জন্য অপরিহার্য বিষয় হলো,অন্তরকে উপস্থিত রেখে দিলের কর্ণ দ্বারা তা শ্রবণ করা।
অন্তরকে উপস্থিত রেখে দিলের কর্ণ দ্বারা কিছু শ্রবণ করলে বা অধ্যায়ন করলে তবেই কিছুটা ফায়দা হবে।এটাই কিতাব অধ্যায়ন বা নসিহত শ্রবণের মূলনীতি।
বয়ানকে যেকোনো ভাবে শ্রবণ করা যাবে।দাড়িয়ে, বসে,শুয়ে যেকেনোভাবে বয়ানকে শ্রবণ করা যাবে।
তবে বক্তা উপস্থিত থাকলে,বক্তার চেহাররার দিকে তাকিয়ে বক্তার সম্মুখে বসে বয়ান শ্রবণ করাতে অনেক ফায়দা নিহিত রয়েছে।
ছাত্র-শিক্ষকের পরস্পর সম্পর্ক কেমন হওয়া চাই,সে সম্পর্কে একটি হাদীসে এভাবে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে,
হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ الخ
একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তার পরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তার মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাকে চিনেও না।
অবশেষে সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে বসলো। সে তার হাটুদ্বয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলো এবং দুই হাতের তালু তার (অথবা নিজের) উরুর উপর রাখলো এবং বলল, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই– তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মাবূদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী উমর (রাযিঃ) বলেন, আমরা তার কথা শুনে আশ্চর্যাম্বিত হলাম। কেননা সে (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করছে আর (বিজ্ঞের ন্যায়) সমর্থন করছে।
এরপর সে বললো, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তার ফেরেশতাকুল, তার কিতাবসমূহ, তার প্রেরিত নাবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। সে বললো, আপনি সত্যই বলেছেন।
এবার সে বললো, আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ইহসান এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করবে যেন তাকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে।
এবার সে জিজ্ঞেস করলো। আমাকে কিয়ামাত সম্বন্ধে বলুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। অতঃপর সে বলল, তাহলে আমাকে এর কিছু নির্দশন বলুন। তিনি বললেন, দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে এবং (এককালের) নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গৰ্ব-অহংকারে মত্ত দেখতে পাবে
বর্ণনাকারী উমর (রাযিঃ) বলেন, এরপর লোকটি চলে গেলো। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমার! তুমি জান, এ প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক জ্ঞাত আছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল। তোমাদের কাছে তিনি তোমাদের দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।(সহীহ মুসলিম-১)
দেখুন উক্ত হাদীসে জিবরাঈল আঃ কি পদ্ধতিতে ছাত্রর বেশ ধরেছিলেন।এজন্য উলামায়ে কেরাম বলেন,উস্তাদের সামনে নতজানু হয়ে বসাই শিক্ষাগ্রহণের আদব।এবং ফায়দা দায়ক ইলম অর্জনের উত্তম ত্বরিকা।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
ওয়াজ নসিহত শুয়ে শুয়ে শ্রবণ করাও জায়েয।তবে বক্তা সামনে থাকলে অবশ্যই বক্তাকে সম্মান প্রদর্শন করা অত্যন্ত জরুরী।সর্বোপরি মনোযোগের সাথে ওয়াজ-নসিহত শ্রবণই কাম্য এবং উপকারী ইলম অর্জনের জন্য একান্ত জরুরী।
পরামর্শ প্রদাণে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.