ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
শরয়ী প্রয়োজনে কবর থেকে লাশ বের করা ও হস্তান্তর করা জায়েয।
ইমাম বোখারী একটি অধ্যায় রচনা করেন যে, মৃত ব্যক্তিকে কি কবর থেকে কোনো কারণে বের করা যাবে? এবং সে অধ্যায়ে তিনি কিছু হাদীস নিয়ে আসেন।
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত।
وروى عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: " لَمَّا حَضَرَ أُحُدٌ دَعَانِي أَبِي مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ: مَا أُرَانِي إِلاَّ مَقْتُولاً فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ، غَيْرَ نَفْسِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِنَّ عَلَيَّ دَيْنًا، فَاقْضِ، وَاسْتَوْصِ بِأَخَوَاتِكَ خَيْرًا ، فَأَصْبَحْنَا، فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ ، وَدُفِنَ مَعَهُ آخَرُ فِي قَبْرٍ، ثُمَّ لَمْ تَطِبْ نَفْسِي أَنْ أَتْرُكَهُ مَعَ الآخَرِ، فَاسْتَخْرَجْتُهُ بَعْدَ سِتَّةِ أَشْهُرٍ، فَإِذَا هُوَ كَيَوْمِ وَضَعْتُهُ هُنَيَّةً ، غَيْرَ أُذُنِهِ " رواه البخاري (1351) .
১৩৫১. তিনি বলেন, যখন উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হল, তখন রাতের বেলা আমার পিতা আমাকে ডেকে বললেন, আমার মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সাহাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথমে শহীদ হবেন, আমি তাঁদের মধ্যে একজন হব। আর আমি আমার (মৃত্যুর) পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত তোমার চেয়ে অধিকতর প্রিয় কাউকে রেখে যাচ্ছি না। আমার যিম্মায় করয রয়েছে। তুমি তা পরিশোধ করবে। তোমার বোনদের ব্যাপারে সদুপদেশ গ্রহণ করবে। জাবির (রাঃ) বলেন, পরদিন সকাল হলে (আমরা দেখলাম যে) তিনিই প্রথম শহীদ। তাঁর কবরে আর একজন সাহাবীকে তাঁর সাথে দাফন করা হয়েছিল। কিন্তু পরে অন্য একজনের সাথে (একই) কবরে তাঁকে রাখা আমার মনে ভাল লাগল না। তাই ছয় মাস পর আমি তাঁকে (কবর হতে) বের করলাম এবং দেখলাম যে, তাঁর কানে সামান্য চিহ্ন ব্যতীত তিনি সেই দিনের মতই (অক্ষত ও অবিকৃত) রয়েছেন, যে দিন তাঁকে (কবরে) রেখেছিলাম। (১৩৫২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১২৬৯)
ইবনে হাজার আসকালানী রাহ বলেন,
وفي حديث جابر دلالة على جواز الإخراج لأمر يتعلق بالحي
এই হাদীস থেকে বুঝা গেল যে, জীবিতদের প্রয়োজনে মৃত ব্যক্তিকে কবর থেকে বের করা যাবে। জায়েয রয়েছে। ( ফাতহুল বারী-৩/২১৫)
আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ(৩২/২৫২-২৫৩) এ বর্ণিত রয়েছে যে,
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى مَنْعِ نَبْشِ الْقَبْرِ إلَاّ لِعُذْرٍ وَغَرَضٍ صَحِيحٍ، وَاتَّفَقُوا عَلَى أَنَّ مِنَ الأَْعْذَارِ الَّتِي تُجِيزُ نَبْشَ الْقَبْرِ كَوْنَ الأَْرْضِ مَغْصُوبَةً أَوِ الْكَفَنِ مَغْصُوبًا أَوْ سَقَطَ مَالٌ فِي الْقَبْرِ، وَعِنْدَهُمْ تَفْصِيلٌ فِي هَذِهِ الأَْعْذَارِ.
وَاخْتَلَفُوا فِيمَا يُعَدُّ عُذْرًا وَغَرَضًا صَحِيحًا سِوَى هَذِهِ الأَْعْذَارِ، وَتَفْصِيل ذَلِكَ فِيمَا يَلِي:
فَمِنَ الْعُذْرِ عِنْدَ الْحَنَفِيَّةِ تَعَلُّقُ حَقِّ الآْدَمِيِّ بِهِ كَأَنْ تَكُونَ الأَْرْضُ مَغْصُوبَةً أَوْ أُخِذَتْ بِشُفْعَةٍ أَوْ سَقَطَ فِي الْقَبْرِ مَتَاعٌ أَوْ كَفَنٌ بِثَوْبٍ مَغْصُوبٍ، أَوْ دُفِنَ مَعَهُ مَالٌ، قَالُوا: وَلَوْ كَانَ الْمَال دِرْهَمًا، أَمَّا لَوْ تَعَلَّقَ بِهِ حَقُّ اللَّهِ تَعَالَى كَمَا إذَا دُفِنَ بِلَا غُسْلٍ أَوْ صَلَاةٍ أَوْ وُضِعَ عَلَى غَيْرِ يَمِينِهِ أَوْ إلَى غَيْرِ الْقِبْلَةِ فَإِنَّهُ لَا يُنْبَشُ بَعْدَ إهَالَةِ التُّرَابِ .
ফুকাহায়ে কেরাম একমত যে, জরুরত ব্যতীত কবর খুদাই/ লাশ স্থানাস্তর করা যাবে না। কবর খুদাই/ লাশ স্থানাস্তর করার কিছু উযর সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের ঐক্যমত রয়েছে।যেমন, দাফনকৃত স্থান বা কাপনের কাপড় আত্মসাৎ কৃত হলে, বা কোনো মাল কবরে পড়ে গেলে, উপরোক্ত হালতে সমস্ত ফুকাহায়ে কেরাম একমত যে, কবর খুদাই বা লাশ স্থানান্তর জায়েয রয়েছে। এছাড়া ভিন্ন কিছূ উযর সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়। হানাফি ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, যদি মানুষের হক সম্পর্কিত কোনো কারণ হয়, তাহলে কবরকে খনন করা জায়েয রয়েছে। যেমন দাফনকৃত স্থান জোরদখল হলে, অথবা দাফনকৃত স্থানকে কেউ শুফার মা্ধ্যমে নিয়ে নিলে, অথবা কবরে কোনো জিনিষ পড়ে গেলে, অথবা আত্মসাৎকৃত কাপড়ে দাফন করা হলে, অথবা মৃত ব্যক্তির সাথে মালকে দাফন করা হলে, যদি সে মাল এক দিরহামই হোক না কেন? উপরোক্ত অবস্থায় কবর খুদাই করা বা লাশ হস্তান্তর করা জায়েয রয়েছে। আর যদি আল্লাহর হক সম্পর্কিত কোনো কারণ থাকে, যেমন, বিনা গোসল বা বিনা নামাযে কাউকে দাফন করা হলে, অথবা কিবলা ব্যতীত ভিন্ন দিকে দাফন করা হলে, তখন কবর খুদাই করে লাশ হস্তান্তর করা জায়েয হবে না।