আমি ফেসবুকে একজনের লেখা দেখলাম। আমি জানতে চাচ্ছি পোস্ট টির সত্যতা আছে কিনা
"কোরান অবমাননা একটা আপেক্ষিক বিষয়"। এই কথাটা আমাকে বলেছিলেন একজন মুফতি। তার কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপেক্ষিক মানে? তখন তিনি যা বলেছিলেন তা এখনো আমার মস্তিষ্কে ঘুরে।
তিনি বলেছিলেন, আমি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করেছি, মুফতি হয়েছি এবং পরবর্তীতে মাদ্রাসারই প্রিন্সিপাল হয়েছি। কোরানের সাথে আমার ডিরেক্ট সম্পর্ক প্রায় ৩০ বছরের উপরে। তো আমি প্রথমবার যেবার হজে গেলাম, সেবার সৌদি আরবের বিভিন্ন ছোট বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলাম ভিজিট করতে। সেখানে গিয়ে দেখেছি তারা পায়ের উপরে কোরান রেখে ঢুলে ঢুলে সুর করে কোরান পাঠ করে।
আমি চমকালাম, জিগ্যেস করলাম- পায়ের উপরে মানে?
তিনি বললেন- পায়ের উপরে মানে, আমরা যেভাবে রেহালের উপরে কোরান রেখে পড়ি ওরা সেভাবে পা শটান করে ৯০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ফ্লোরে বসে পায়ের উপরে কোরান রেখে সুর করে কোরান পড়ে।
আমি বললাম- বলেন কি? এতে কোরান অবমাননা হয় না?
তিনি বললেন, আমাদের দেশে হলে অবমাননা হতো, ওদের দেশে অবমাননা হয় না।
- কেন?
- কারন আমাদের দেশে আমরা কোরান মানে বুঝি 'ত্রিশ পারা গ্রন্থ/বই' । ওরা কোরান মানে বোঝে আল্লাহর বানী।
আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। আমি যে তার কথা বুঝিনি তিনি ধরে ফেললেন। তখন তিনি আরও বিস্তারিত আলাপে গেলেন।
- কোরান নাজিল হয়েছে কবে? প্রায় ১৪০০ বছর আগে? তখন কি বই আকারে ছিলো? না। কিন্তু কোরান ছিলো। তখন কোরান ছিলো মুখে মুখে সাহাবীদের মুখস্থ। এরপর খেজুর পাতায় লেখা হয়েছে, পাথরে লেখা হয়েছে, মাটির টেরাকোটায় লেখা হয়ে অবশেষে কাগজের বইয়ে রুপান্তরিত হয়েছে। এখন থেকে ৪০০-৫০০ বছর আগেই পুস্তক আকারে কোরান ছিলো না, কিন্তু কোরান কিন্তু কোন না কোন ফর্মে ছিলোই। তাই ফর্ম যাই হোক কোরান একটা সার্বজনীন বিষয়। কোরান মানে বই না, পাথর না, পোড়া মাটি না, খেজুর পাতাও না। কোরান মানে আল্লাহর বানী। যেটা যে কোন ভাবেই থাকতে পারে। এখন ২০১৫ সালে এসে কোরানের আয়াত লেখা কোন পাথরের টুকরা কেউ ভাঙলে আপনার কি মনে হবে কোরান অবমাননা হয়েছে? সম্ভবত না। কিন্তু পুস্তক আকারের কোন কোরানের কোন পৃষ্ঠা ছেড়া হলে নিশ্চয় আপনার গায়ে আগুন ধরে যাবে?
- তা তো যাবেই।
তিনি আরও বললেন, আমি সৌদি আরবে দেখেছি বাচ্চারা কোরান পড়তে পড়তে খুলে রেখেই চলে যাচ্ছে। আমাদের দেশে হলে বলতো, "কোরানশরিফ খুলে রাখলে শয়তানে পড়ে"। কোরানশরিফ শয়তানে পড়া তো ভালো কথা। শয়তান তাহলে ইমানদার হয়ে যেতো কোরান পড়ে। এই বলে তিনি নিজের জোক্সে নিজেই কিছুক্ষণ হাসলেন।
সেখানে কোরান মসজিদের ফ্লোরে পরে থাকে, কেউ কোরান মাথায় দিয়ে ফ্লোরে ঘুমিয়ে থাকে, কেউ কোরান শরীফের পাতা ছিড়ে পকেটে করে নিয়ে যায় পরে পড়বে বলে। আরও অনেক কিছু করে। এসব বললে আপনার হজম করতে কষ্ট হবে। অতএব সৌদিতে পিচ্চি পোলাপাইন কোরানশরিফের সাথে যা যা করে তা যদি বাংলাদেশে করা হয় দাঙ্গা লেগে যাবে।
আমি বুঝলাম না, তাকে কি বলবো। তিনি আবার বললেন,
আল্লাহ নিজে প্রতিজ্ঞা করেছেন- "নিঃসন্দেহে আমি কোরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি তা সংরক্ষণকারী।" অতএব কোরান অবমাননা করা সম্ভব না। আপনি যাই করেন না কেন কোরানের অবমাননা হবে না। কোরান বিষয়টা অত্যন্ত ব্যপক। যেমন: একজন বাঙ্গালীর কাছে কোরান যাহ, একজন আরবের কাছে তা না। একজন কোরান পাঠ করতে পারে এরকম সাবালকের কাছে যা, একজন শিশু যে পাঠ করতে পারে না তার কাছে তা নয়। একজন পাগলের কাছে কোরান যা, একজন সুস্থ্য মানুষের কাছে তা না। একজন মুসলিমের কাছে কোরান যা, একজন অমুসলিমের কাছে তা না। কোরান একটা ব্যপক জিনিস। আল্লাহ সবার উপরে কোরান নাজিল করেছেন। কিন্তু সবার কাছে কোরানের অর্থ একই ভাবে ধরা দেবে না। কারন কোরানকে সবাই একই ভাবে অনুধাবন করতে পারবে না। তাই একই কাজ একজন সুস্থ্য মানুষ করলে যাহ, একজন অসুস্থ্য মানুষ করলে তা নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে ভিন্ন।
কোরান মানে বানী। আপনি বানীকে অসম্মান করতে পারবেন না। কোরানের মতো আরেকটা আয়াত লিখতে পারবেন না। অতএব কোরান, অবমাননাকর কিছু নাই। কেউ যদি কোরান না পড়ে, না শেখে এটা তার ক্ষতি। কোরানের নয়। কোরান এতোটাই উদারপন্থী গ্রন্থ যে আপনাকে সর্বোচ্চ ফ্রিডম দিয়ে রেখেছে এটা ব্যবহারের। এর বাইরে আমরা নামাজ, কালাম, কোরান, ধর্ম নিয়ে যে কনজার্ভেটিভ ফাইট করি এটা নিতান্তই কোরান সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার ফল। এর সাথে আল্লাহর কোন সম্পর্ক নেই।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে:
১। পোস্টের তথ্য গুলো কি ইসলামি শরীয়ত সম্মত?
২। কুরান কি সত্যিই অবমাননা করা যায়না?
৩। কুরান অবমাননার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
৪। পায়ের উপর কুরান রেখে পড়া, কুরান এর উপর ঘুমানো এগুলো কি জায়েজ?