নারীদের সরকারি প্রাইমারি স্কুলে চাকরি

Question

আসসালামু আলাইকুম,
আমি কালকে ১টা প্রশ্ন করেছিলাম যেটার উত্তর দিয়েছেন মুফতি ওলি উল্লাহ। শায়েখ, আমার আরও কিছু জানার ছিল  এই চাকরির ব্যাপারে যেহেতু আমি দিধায় ভুগছি। প্রাইমারি তে তো সরকার বেশির ভাগই মহিলা teacher নিয়োগ দেয়। কিন্তু সেখানে পুরুষ teacher ও থাকবে। আমার জন্য তাদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা তো উচিত হবে না। আর ক্লাসে  তো সব নাবালক ছাত্র ছাত্রী থাকবে। আমাকে কি তাদের সামনেও মুখে নেকাব পড়ে থাকতে হবে। দয়া করে উত্তরটা দিলে ভালো হয়। আপনি কালকে আমার অবস্থা বিবেচনায় বলেছিন আমি ইচ্ছে করলে প্রাইমারি স্কুলে চাকরি করতে পারি। এই চাকরিটা করতে আমার পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করাচ্ছে। আব্বু আম্মুর প্রেশার আর মুখ ভার করে থাকা চাকরি করবো না বলে মেনে নিতে কসট হচ্ছে। আপনাকে আগেই বলেছিলাম এই চাকরিটা হলেই আমি পরিপূর্ণ পর্দা maintain করতে পারবো। আমার সাধীনতা থাকবে কিছু করার জন্য। ভালো নেককার কোন ব্যক্তিকে হয়তো আল্লাহ তায়ালা পাইয়েও দিতে পারেন। যাতে আমাকে আর চাকরি করতে না হয় family কে support করার জন্য। আপনার কি মনে হয় আমার সিদ্ধান্ত সৎ। আমাকে আমার এক আপু বলেছেন খাদিজা রাঃ তো ব্যবসায়ি ছিলেন। সেই কারণেই তো তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যাপারে জানতে পেরেছিলেন। আর এখন যে যুগ এসেছে তাতে তো ভালো ছেলে পাওয়াই মুসকিল। তিনি আমাকে বলেছেন তুমি পর্দা করে ঠিকভাবে চলো। আল্লাহ তো দেখছেনই তোমার মনের কি অবস্থা। আব্বু আম্মুকে কসট দিও না। তোমারও তো বয়স হচ্ছে। পরে তুমি কি করবা। আল্লাহর কাছে চাও তিনি তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করবেন। আপু আমাকে বলতেছে শিক্ষাকতা তো ভালো পেশা। বাচ্চাদের কে ভালো কিছু শেখাতে পারবা।উনি কি ঠিক বলছেন। উনি আমাকে এগুলা বলছেন কারণ তিনি জানেন যে আমি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ১টা মেয়ে আবার আমার বিয়েও হচ্ছে না। আবার আমি এখন এমন ব্যক্তিকে চাইছি যাকে খুজে পাওয়া কঠিন। এখনকার যুগে বেশির ভাগ পরিবারেই তো আত্নীয়দের সামনে পর্দা করেনা। বলে আরে এটা তো বাসুর, দেবর, চাচা শশুড়, বাসুরের ছেলে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন family পড়লে তো আমি শেষ। আমার পাপ তো আর এরা কেউ বহন করবে না। আমাকেই বহন করতে হবে। তার উপর আবার বলবে General line এ পড়ে  একেবারে হুজুরনি হয়ে গেছে। আপনার কি মনে হয়। আমার জন্য এই চাকরিটা কি আসলেই করা উচিত। আমি আপনাকে আগেই বলেছি আমার আব্বুরও বয়স হচ্ছে। মেয়ে হিসেবে কি আমার তাদেরকে দেখভালের দায়িতব আছে । ছোট ভাই থেকেও যদি ঠিকমত দায়িতব নিতে না চায়। কারণ আমার ছোট ভাইয়ের mentalityও অনেকটা সেরকম। আজকালকার ছেলেদের যা হয় আরকি।

Answer 1

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

https://www.ifatwa.info/12605 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,

আল্লাহ তা'আলা পুরুষ এবং নারী দু'টি ভিন্ন জাতিকে তৈরী করেছেন।এবং তাদের কাজকেও বন্টন করে দিয়েছেন।এভাবে যে, সাধারণত পুরুষ বাহিরে কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং নারীরা ঘরের ভিতর সামাল দিবে।এবং সন্তানসন্ততি কে শিক্ষাদীক্ষা দেয়ার মত মহান কাজ আঞ্জাম দিবে।

নারীশ্রম কে ইসলাম নিরোৎসাহিত করেছে।তবে শরয়ী জরুরুতে অনুমোদনও দিয়েছে।

নারীশ্রমের শরয়ী বিধান জানতে ভিজিট করুন করুন-https://www.ifatwa.info/632

ফিৎনার আশংকা না থাকলে নারীদের জন্য একদিন একরাত (পায়ে হেটে)সফর পরিমাণ দূরত্ব তথা (৭৭÷৩=২৫.৬)২৫.৬ কিলোমিটার বা তার চেয়ে কম পরিমাণ জায়গা সফর করা মাহরাম ব্যতীত জায়েয আছে।তবে ফিৎনার আশংকা থাকলে জায়েয হবে না।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/212

পর্দা করা ফরয।পর্দার তিনটি স্থর রয়েছে পর্যায়ক্রমে।প্রথম স্থর হল,ঘরে বসে পর্দা করা।বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/572

মানবিক প্রয়োজন,যার জন্য বের না হলেই নয়।যেমন মাহরাম না থাকাবস্থায় খাবার দাবার ও পোষাক ইত্যাদি ক্রয় বা চিকিৎসা কিংবা মাহরাম আত্মীয় স্বজনকে দেখা ইত্যাদির জন্য বাহিরে যাওয়া।সুতরাং বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাহিরে না যাওয়াতে ফরয বিধান পালন হবে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন,

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে। হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।(সূরা আহযাব-৩৩)বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-৩২৪৭

ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ ব্যতীত পর্দা সম্মত হালাল যেকোনো চাকুরী করতে পারবে।তবে অবশ্যই পিতা বা স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষ্যে।বিনা প্রয়োজনে চাকুরীতে না যাওয়াই উত্তম।যদি ফ্রি মিক্সিং চাকুরী করা ব্যতীত খোরাকীর অন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকে,তাহলে ইস্তেগফারের সাথে রুখসত হবে।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/3503

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনি মহিলা কলেজে চাকুরী নিতে পারেন, যদি তাতে পুরুষ সহকর্মী না থাকে। তাছাড়া আপনার পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বদা চক্ষুকে অবনত করার শর্তে আপনার জন্য সহশিক্ষা ব্যবস্থায়ও চাকুরীর অনুমোদন হতে পারে।

এখন আপনাকে আবার বলছি,

আপনি যে পরিস্থিতিতে রয়েছেন, সেই পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা বলবো, আপনি প্রথমে পর্দা সম্মত বা  মহিলা কলেজ চাকুরী খুজবেন, যদি পেয়ে যান, তাহলে এটাই আপনার জন্য সর্বোত্তম হবে। যদি আপনি পর্দা সম্মত সরকারী চাকুরী বা কোনো মহিলা কলেজে চাকুরীর ব্যবস্থা করতে না পারেন, তাহলে আপনি ভালো ফ্যমিলিতে বিয়ে হওয়ার পর উক্ত সহশিক্ষা ব্যবস্থার চাকুরী ছেড়ে দিবেন, এবং চক্ষুকে সর্বদা সহকর্মীদের থেকে হেফাজতে রাখবেন, ঐ শর্তে আপনি প্রাইমারি ইস্কুলে জব নিতে পারবেন।