আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই অনেক লম্বা প্রশ্নের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আল্লাহ আপনাকে অনেক নেকি দান করুন আমীন।
১. আমার স্বামী আমাকে কিছুদিন আগে বলেছে যে তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিয়ে নিতে হবে। একজন হুজুরের কাছ থেকে উনি শুনেছেন যে বাচ্চা নিতে দেরি করলে দ্বীনদার বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এটা সত্যি নাকি জানতে চাই তবে আমি ব্যাপারটাতে অ্যাপ্রিশিয়েট করি এবং কখনোই এটার বিরোধিতা করি না। কিন্তু কিছু কারণে আমার স্বামী বিয়ে ঠিক পর পর বাচ্চা নেওয়া থেকে কিছুদিন বিরত থাকার কথা বলেছিলেন এবং ওইসব কারণে এবং সবমিলিয়ে আমি চেয়েছিলাম যে আমরা আর দুই একটা মাস দেরি করি। আমি নিজে সব পরিস্থিতি বিস্তারিত বলছি, প্লিজ আমাকে জানাবেন আমার গুনাহ হচ্ছে কিনা।
আমার বিয়ে হয়েছে সাত মাস হল। আমরা মোটামুটি দীন পালন করার চেষ্টা করছি আলহামদুলিল্লাহ। একই প্রতিষ্ঠানে পড়ার দরুন আমাদের পরিচয় হয় এবং যেহেতু ফোনে কথাবার্তা চলছিল তাই গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য আমরা পরিবারকে মানিয়ে বিয়ে করি। আমার হাজবেন্ডের স্থায়ী কোন চাকরি বা ইনকামের ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থায়ই আমাদের বিয়ে হয়েছে। এখনো ওরকমই চলছে। তার ইনকাম কম এবং আমি ছাত্রী পড়িয়ে মোটামুটি ইনকাম করি আলহামদুলিল্লাহ এবং এটা এজন্য করি যেন আমার স্বামীকে কারো কাছ থেকে সাহায্য না নিতে হয়। এই ব্যাপারটা আমার পরিবারেও জানে। আমি না বললেও ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে। যেহেতু আমার স্বামীর এখন আলাদা বাসা নেয়ার সামর্থ্য নেই সেহেতু বিয়ের পর থেকে আমি আমার বাবার বাড়িতে থাকছি এবং উনি মাঝে মাঝে আসা-যাওয়া করেন। কথা ছিল ওনার পার্মানেন্ট একটা চাকরি হয়ে গেলে এবং উনার বড় ভাইয়ের বিয়ে হলে এরপর আমাদের ওয়ালিমা হবে এবং উনি বাসা নিলে তখন আমি বাসায় উঠবো। এদিকে সাত মাস হয়ে যাওয়ায় এবং আমার স্বামীর কোন পার্মানেন্ট চাকুরী না হওয়ায় আমার পরিবারেও অসন্তোষ বাড়ছে এবং আশেপাশের মানুষের অনেক কথাও শুনতে হচ্ছে যে আমি কেন এখনো এখানে!
উনার বাবা বড় ছেলের আগে ছোট ছেলের বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না এবং চাকরি হওয়ার আগে বিয়ে দিতে আরো রাজি ছিলেন না। এমনকি বিয়ের পর তিনি আমার হাজব্যান্ডকে যেই টাকা পয়সা দিতেন সেটাও বন্ধ করে দিলেন। তবে আল্লাহ আমাদের রিজিকের ব্যবস্থা করেই দিচ্ছেন আলহামদুলিল্লাহ। যেহেতু আমার স্বামী আমার ভরণ পোষণ এর দায়িত্ব নিতে পারবে না সেহেতু আমি এখন পর্যন্ত শ্বশুর বাড়ি যাইনি এই ভেবে যে আমার শ্বশুর ঠিকই সবকিছু দায়িত্ব নেবে কিন্তু পরে আবার কথা শোনাবে। উল্লেখ্য যে আমার শ্বশুরবাড়ির অন্য বিভাগে। ওখানে যেয়ে থাকলে এমনিতেও আমার হাজবেন্ডের সাথে থাকা হবে না কারণ আমার হাজব্যান্ড আমি যে বিভাগে থাকি সেই বিভাগের থেকে কাজ করেন। আমি সব সময় উনার আসে পাশে থাকতে চাই। এক্ষেত্রে আমি প্রেগন্যান্ট হলে আমার স্বামী আমাকে অন্য বিভাগে যেয়ে আমার শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে আসতে চায়। দীর্ঘদিন দূরে থাকতে হবে বলে আমি এটা চাই না। আমি আমার স্বামীকে একটা সমাধান বলেছিলাম, ছিলাম যে আপাতত আমি যে ইনকাম করছি সেটা দিয়ে একটা ছোট বাসা নিতে। কিন্তু তিনি সেটাতেও রাজি হননি। বিয়ের পরপরই আমার স্বামী বলেছে যে তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমরা বাচ্চা নিলে ভালো হয়। আমিও একটা ফতোয়াতে দেখেছিলাম যে স্বামী স্ত্রী সবকিছু গুছিয়ে ওঠার জন্য যদি একটু টাইম চায় এক্ষেত্রে অস্থায়ী পদ্ধতিতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা জায়েজ আছে?
এই অবস্থায় যদি আমি আমার বাবার বাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রেগনেন্ট হই তাহলে দেখা যাবে আমার নিজেরপরিবার এবং আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হবে এবং অপমানিত হতে হবে এটা আমার এবং আমার বাচ্চার মানসিকতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এটা বলছি কারণ নানা জনের নানান কথা, পরিবারের কথায় এবং স্বামীর খারাপ ব্যবহারে আমি অলরেডি অনেকটা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। আমার স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক এখন ঠিক নেই। উনি অনেক বেশি বদমেজাজী এবং এই সমস্যাটা ওনার পরিবারের প্রায় সবারই আছে। তার সাথে যোগ হয়েছে উনার একটা চাকরির না পাওয়া। মানসিকভাবে উনি এমন বিপর্যস্ত এবং উনার ব্যাবহার এখন এত খারাপ হয়ে গেছে যে আমি নরমাল কথা বললেও উনি আমার সাথে ঝগড়া লেগে যায়, গালাগালি রেগুলারলি করে এমনকি একবার মেরেছেও । তার কাজের ক্ষেত্রে অথবা যেকোনো ক্ষেত্রে যদি মেজাজ খারাপ হয় সেটার রাগ সে আমার উপর ঝাড়ে। তার কোন খারাপ কাজে ভুল ধরলে সে রেগে যায়। কোন উপদেশ দেওয়া যায় না। রাগের মাথায় সে আমাকে বেশ কয়েকবার ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি পর্যন্ত নিয়েছে। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আমল করার চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু আমার সাথে তার ব্যবহার অতিরিক্ত খারাপ। তার পরিবারের সাথে কথা বলে জানতে পারি যে তার বাবা এর চেয়েও খারাপ ছিল। এবং পরিবারের সাথেও মতের মিল না হলে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন। এমতাবস্থায় আমি সন্দিহান যে প্রেগনেন্ট হলে তখন তিনি আমার আর আমার বাচ্চার সাথে কি করবে। এই ভয়ে উপরোক্ত সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি আরো অপেক্ষা করতে চাচ্ছি যে উনার যদি একটা চাকরি হয়ে যেত কয়েক মাসের মধ্যে তাহলে আলাদা বাসা নিয়ে তখন আমরা বাচ্চার কথা চিন্তা করতাম। অবশ্যই সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাই হয়। এখানে উল্লেখ যে আমি কখনোই কি খাওয়াবো এটা ভেবে দেরি করতে চাইনি আস্তাগফিরুল্লাহ। আমি মানুষের কাছ থেকে অপমানের ভয় পেয়েছি এবং আমার স্বামীর কাছে পাওওয়া মানসিক অত্যাচার ও খারাপ ব্যবহার দেখে ভয় পেয়েছি। তবে খুব বেশি দেরিও করতে চাইনা ইন শা আল্লাহ।
২. আমি খুবই দোয়া করছি যেন আমার বাচ্চারা তার বাবার এই খারাপ রূপ না দেখে। হুজুর আপনার কাছেও দোয়া চাই প্লিজ দোয়া করবেন যেন আমার বাচ্চারা পরিপূর্ণ দীনদার হয় এবং তাদের মধ্যে দুই ফ্যামিলির কোন খারাপ গুনাগুন যেন না থাকে। তাদের উপর যেন এরকম বদমেজাজি মানুষগুলোর কোন প্রভাব না পড়ে। এজন্য কি আমল করা যেতে পারে সেটাও জানতে চাই।