আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
14 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (5 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ, উস্তাদ। আমার ছেলের বয়স ৮ বছর, ৯ মাস। সে হিফজখানায় বোডিং এ থেকে পড়াশোনা করে। আড়াই বছর যাবৎ সে এই মাদ্রাসায় পড়ছে। তার মধ্যে প্রথম  বছর নূরানী+নাজেরা পড়ার সময় বাসা থেকে যাওয়া আসা করে পড়তো, এরপর যখন হিফজ শুরু করে তখন তাকে আবাসিকে দিতে হয়। মাদ্রাসা আমার বাসা থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে। সে তখন ছোট ছিল, আমরা আবাসিকে দিতে চাই নি কিন্তু মাদ্রাসার নিয়মের জন্য দিতে হয়েছে।  আবাসিকে থাকলেও খাবার বাসা থেকেই পাঠাতাম তিনবেলা। তারপর সেটাও হুজুররা নিয়ম করে বন্ধ করে দিলেন। কোন ছাত্র বাসা থেকে খাবার আনতে পারবে না। আমরাও মেনে নিয়েছিলাম।  কিন্তু আমাদের বাচ্চা সকাল দুপুরের খাবার খেতে পারলেও রাতের খাবার খেতে পারতো না। দিনের পর দিন সে রাতে না খেয়ে থাকতো কিংবা শুধু ডাল দিয়ে অল্প ভাত খেতো। এতে সে অসুস্হ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বড় হুজুরের অনুমতি নিয়ে তাকে রাতের খাবার বাসা থেকে দেওয়ার ব্যবস্হা করা হয়।
গত দুই মাস যাবৎ তার ঘন ঘন পেটে সমস্যা হচ্ছিল, সে বমি করতো,  খাবারের পর পরেই এমন হতো। ডাক্তার দেখানো হলে জানতে পারি তার ফুড পয়জনিং হয়েছে। এমনিতে তার খাবার দাবার আমরা খুব সচেতনতার সাথে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক পরে তার কাছে শুনলাম, সে মাদ্রাসায় যে খাবার খেতো সেখানে ভাতে পোকা পাওয়া যেতো, তরকারির মাছ, মাংস পচা পচা গন্ধ করতো। এই খাবার গুলো সে এতদিন খুব নাক সিটকে খেয়েছে। এরপর থেকে তাকে তিনবেলা আমরা বাসা থেকে খাবার পাঠাই। তবে এক্ষেত্রে আমরা মাদ্রাসার হুজুরের থেকে খাবার পাঠানোর জন্য কোন অনুমতি নেই নি।  তিনবেলা খাবার পাঠানে হচ্ছে এটা জানার পরও   বড় হুজুর কোন রকম নিষেধ করেন নি। তাই আমরা ও আর এ নিয়ে কোন রকম টেনশন করি নি। তাকে খাবার পাঠাচ্ছি ১৫-২০ দিন হবে এমন। গত কয়েকদিন আগে তার বড় হুজুর কয়েকজন ছাত্র সহ তাদেরকে একটা আলোচনায় ডাকেন।  আলোচনার শেষ পর্যায়ে, তিনি আমার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, " মাদ্রাসার আরও অনেক ছাত্র তিনবেলা খাবার বাসা থেকে আনার অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু তাদের কাউকে অনুমতি দেই নি। সেখানে তুমি তিনবেলা খাবার বাসা থেকে খাচ্ছো।  বাকি যেই ছাত্রগুলা খাবার না আনার কষ্ট পাচ্ছে তাদের সব গুলো কষ্ট তোমার হোক। "
উনার এই কথার পর আমার বাচ্চাটা খুব মর্মাহত হয়েছে। আমরা শোনার পরও আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ও খুব বেশি অসুস্হ থাকে। জ্বর সর্দি লেগেই থাকে। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাতে ঘুমানের আগ পর্যন্ত মাথা ব্যাথা করে। তার ঘুম কম হলে, পেট ক্ষুদা থাকলে, আর প্রেসারে থাকলেই ব্যাথা হয়। এগুলো দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি।  চোখে সামান্য পাওয়ার কম আছে যার জন্য চশমা ব্যবহার করতে হয়। গত দেড় বছর যাবৎ চুলকানিতে আক্রান্ত, যেটা মাদ্রাসার বোডিং থেকেই ছড়িয়েছে। এতদিন যাবৎ তার চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু এখন, ডাক্তারের পরামর্শ হলো, এত বেশি চুলকানির জন্য ঔষধ খেলে সেটা তার জন্য ভবিষ্যতে খারাপ হবে, এবং কিডনিতেও সমস্যা হতে পারে। চুলকানি ছড়াতে পারে এমন জায়গা থেকে দূরে থাকতে বলেছে ডাক্তার। এমনটা করতে হলে তো তাকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এটা করলে তার হিফজ বন্ধ হয়ে যাবে। তার চুলকানি যাতে খুব বেশি বৃদ্ধি না পায় তাই বড় হুজুরকে বলে আমরা সকালের ঘুমের সময়টাতে ওকে বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্হা করি। সকাল ৯-১২ টা এই সময়ে সে বাসায় এসে সকালের খাবার খায়, ঘুমায়, তারপর ঘুম থেকে উঠে গোসল করে আবার মাদ্রাসায় চলে যায়। এতে করে   তাকে খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে দিতে পারছি। এর ফলে চুলকানি কিছুটা কম থাকে।

আমার প্রশ্ন হলো,
(১) মাদ্রাসার নিয়মের বাইরে গিয়ে যদিও  হুজুরদের সম্মতিতে তাকে বাসা থেকে খাবার দিচ্ছি, সকাল বেলা বাসায় নিয়ে আসছি,  এতে কি আমরা ভুল করছি?  অন্য ছাত্ররা তো এই সুবিধা পাচ্ছে না।  তাদের সাথে কি আমরা অন্যায় করছি? আমাদের দ্বারা কি অন্য বাচ্চাদের কোন হক নষ্ট হচ্ছে?
মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, এই পরিবেশে আরও ১০০ বাচ্চা থাকছে, খাচ্ছে। ওরা যদি পারে তাহলে আমার সন্তান কেন পারবে না? আবার নিজেই উত্তর দেই, সব বাচ্চা এক রকম হয় না। অন্যরা পারছে, তুমি কেন পারবে না, এমনটা বললে কিংবা বাচ্চার উপর এডজাস্ট করার জন্য চাপ দিলে তখন নিজের বাচ্চার উপর জুলুম করছি মনে হয়৷
(২) যদি  নিজেদের সন্তানকে এই সুযোগটুকু পাওয়ার ব্যবস্হা করে দেওয়া  আমাদের ভুল হয়, গুণাহের কারণ হয় তাহলে আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্হা বিবেচনায় আমাদের কি করা উচিত, উস্তাদ?

আমাকে একটু পরামর্শ দিবেন উস্তাদ।  আমি খুব অস্বস্তিতে আছি, বিশেষ করে বড় হুজুরের কথা শোনা পর থেকে। অন্যদিকে বাচ্চার অসুস্হতা, ওর কষ্টও এটা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে।

1 Answer

0 votes
ago by (672,450 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

ওয়াবিসা ইবনে মা'বাদ রাযি থেকে বর্ণিত,

ﻭﻋﻦ ﻭﺍﺑﺼﺔَ ﺑﻦِ ﻣَﻌْﺒِﺪٍ  ﻗَﺎﻝَ : ﺃَﺗَﻴْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪ ﷺ ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺟِﺌْﺖَ ﺗﺴﺄَﻝُ ﻋﻦِ ﺍﻟﺒِﺮِّ؟ » ﻗُﻠْﺖُ : ﻧَﻌَﻢْ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : « ﺍﺳْﺘَﻔْﺖِ ﻗَﻠْﺒَﻚَ، ﺍﻟﺒِﺮُّ : ﻣَﺎ ﺍﻃْﻤَﺄَﻧَّﺖْ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲُ، ﻭﺍﻃْﻤَﺄَﻥَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﻘَﻠْﺐُ، ﻭﺍﻹِﺛﻢُ : ﻣَﺎ ﺣﺎﻙَ ﻓﻲ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ، ﻭﺗَﺮَﺩَّﺩَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪْﺭِ، ﻭﺇِﻥْ ﺃَﻓْﺘَﺎﻙَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﻭَﺃَﻓْﺘَﻮﻙَ » ﺣﺪﻳﺚٌ ﺣﺴﻦٌ، ﺭﻭﺍﻩُ ﺃﺣﻤﺪُ ﻭﺍﻟﺪَّﺍﺭﻣِﻲُّ ﻓﻲ " ﻣُﺴْﻨَﺪَﻳْﻬِﻤﺎ ."

তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর নিকট গেলাম।রাসূলুল্লাহ সাঃ আমাকে বললেন,তুমি কি নেকীর কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্য এসেছ?আমি বললাম জ্বী হ্যা, ইয়া রাসূলাল্লাহ!

তখন তিনি আমাকে বললেন,তুমি তোমার অন্তরের নিকট ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করো।নেকি হল সেটা যার উপর অন্তর প্রশান্তিবোধ করে,এবং যে জিনিষের উপর অন্তর শান্ত থাকে।আর গোনাহ হল সেটা,যা অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি করে নাড়িয়ে দেয়,এবং অন্তরকে দ্বিধান্বিত করে ফেলে।যদিও উক্ত কাজ সম্পর্কে মুফতিগণ বৈধতার ফাতাওয়া প্রদাণ করুক না কেন।(মুসনাদে আহমদ-১৭৫৪৫)

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ الزُّبَيْرِ أَبِي عَبْدِ السَّلَامِ عَنْ أَيُّوبَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مِكْرَزٍ الْفِهْرِيِّ عَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ الْأَسَدِيِّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِوَابِصَةَ جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ وَالْإِثْمِ قَالَ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَجَمَعَ أَصَابِعَهُ فَضَرَبَ بِهَا صَدْرَهُ وَقَالَ اسْتَفْتِ نَفْسَكَ اسْتَفْتِ قَلْبَكَ يَا وَابِصَةُ ثَلَاثًا الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إِلَيْهِ النَّفْسُ وَاطْمَأَنَّ إِلَيْهِ الْقَلْبُ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتَوْكَ 

ওয়াবিসা ইবনু মা’বাদ আল আসাদী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়াবিসাকে বলেন, “তুমি আমাকে পাপ ও পুণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ?” তিনি বলেন, হাঁ। তিনি বলেন, তখন তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মুষ্টিবদ্ধ করে তা দ্বারা তার বুকে আঘাত করে বললেন: “হে ওয়াবিসা! তুমি তোমার নাফসকে জিজ্ঞেস কর, তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস কর।”- একথা তিনি তিনবার বললেন। “তোমার নাফস বা মন যে বিষয়ে প্রশান্তি বা নিশ্চিন্ততা লাভ করে, তোমার অন্তর যে বিষয়ের প্রতি প্রশান্ত- নিশ্চিন্ত হয়-তা-ই হলো পূণ্য। আর তোমার মন যে বিষয়ে চিন্তিত হয়, তোমার অন্তরে যা ইতস্ততবোধ বা দ্বিধা সঞ্চার করে-তা-ই হলো পাপ। লোকেরা যদি তোমাকে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তবে তুমি তা গ্রহণ করবে।”

(সুনানে আদ দারেমী ২৫৭১)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে আপনাদের দ্বারা অন্য বাচ্চাদের কোন হক নষ্ট হচ্ছেনা।
আপনারা তাদের সাথে কোনো অন্যায় করেননি। 

(০২)
এক্ষেত্রে মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব এর সাথে আলোচনা করে আপনার সন্তানের অসুস্থতার বিষয় বিবেচনা করে তিন বেলার খাবার বাসা থেকে সরবরাহ এর সিদ্ধান্ত নিবেন।

যদি এই মাদ্রাসার মুহতামিম সাহেব এটা কোনক্রমে মেনে না নেন, সেক্ষেত্রে মাদ্রাসা পরিবর্তন করতে পারেন।  যেই মাদ্রাসা আপনাদের এই সুযোগ দিবে, সেই মাদ্রাসায় আপনার সন্তানকে ভর্তির করে দিতে পারেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...