আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ, উস্তাদ। আমার ছেলের বয়স ৮ বছর, ৯ মাস। সে হিফজখানায় বোডিং এ থেকে পড়াশোনা করে। আড়াই বছর যাবৎ সে এই মাদ্রাসায় পড়ছে। তার মধ্যে প্রথম বছর নূরানী+নাজেরা পড়ার সময় বাসা থেকে যাওয়া আসা করে পড়তো, এরপর যখন হিফজ শুরু করে তখন তাকে আবাসিকে দিতে হয়। মাদ্রাসা আমার বাসা থেকে আধা কিলোমিটারের মধ্যে। সে তখন ছোট ছিল, আমরা আবাসিকে দিতে চাই নি কিন্তু মাদ্রাসার নিয়মের জন্য দিতে হয়েছে। আবাসিকে থাকলেও খাবার বাসা থেকেই পাঠাতাম তিনবেলা। তারপর সেটাও হুজুররা নিয়ম করে বন্ধ করে দিলেন। কোন ছাত্র বাসা থেকে খাবার আনতে পারবে না। আমরাও মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের বাচ্চা সকাল দুপুরের খাবার খেতে পারলেও রাতের খাবার খেতে পারতো না। দিনের পর দিন সে রাতে না খেয়ে থাকতো কিংবা শুধু ডাল দিয়ে অল্প ভাত খেতো। এতে সে অসুস্হ হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে বড় হুজুরের অনুমতি নিয়ে তাকে রাতের খাবার বাসা থেকে দেওয়ার ব্যবস্হা করা হয়।
গত দুই মাস যাবৎ তার ঘন ঘন পেটে সমস্যা হচ্ছিল, সে বমি করতো, খাবারের পর পরেই এমন হতো। ডাক্তার দেখানো হলে জানতে পারি তার ফুড পয়জনিং হয়েছে। এমনিতে তার খাবার দাবার আমরা খুব সচেতনতার সাথে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু অনেক পরে তার কাছে শুনলাম, সে মাদ্রাসায় যে খাবার খেতো সেখানে ভাতে পোকা পাওয়া যেতো, তরকারির মাছ, মাংস পচা পচা গন্ধ করতো। এই খাবার গুলো সে এতদিন খুব নাক সিটকে খেয়েছে। এরপর থেকে তাকে তিনবেলা আমরা বাসা থেকে খাবার পাঠাই। তবে এক্ষেত্রে আমরা মাদ্রাসার হুজুরের থেকে খাবার পাঠানোর জন্য কোন অনুমতি নেই নি। তিনবেলা খাবার পাঠানে হচ্ছে এটা জানার পরও বড় হুজুর কোন রকম নিষেধ করেন নি। তাই আমরা ও আর এ নিয়ে কোন রকম টেনশন করি নি। তাকে খাবার পাঠাচ্ছি ১৫-২০ দিন হবে এমন। গত কয়েকদিন আগে তার বড় হুজুর কয়েকজন ছাত্র সহ তাদেরকে একটা আলোচনায় ডাকেন। আলোচনার শেষ পর্যায়ে, তিনি আমার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, " মাদ্রাসার আরও অনেক ছাত্র তিনবেলা খাবার বাসা থেকে আনার অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু তাদের কাউকে অনুমতি দেই নি। সেখানে তুমি তিনবেলা খাবার বাসা থেকে খাচ্ছো। বাকি যেই ছাত্রগুলা খাবার না আনার কষ্ট পাচ্ছে তাদের সব গুলো কষ্ট তোমার হোক। "
উনার এই কথার পর আমার বাচ্চাটা খুব মর্মাহত হয়েছে। আমরা শোনার পরও আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, ও খুব বেশি অসুস্হ থাকে। জ্বর সর্দি লেগেই থাকে। মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাতে ঘুমানের আগ পর্যন্ত মাথা ব্যাথা করে। তার ঘুম কম হলে, পেট ক্ষুদা থাকলে, আর প্রেসারে থাকলেই ব্যাথা হয়। এগুলো দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে আমরা বুঝতে পেরেছি। চোখে সামান্য পাওয়ার কম আছে যার জন্য চশমা ব্যবহার করতে হয়। গত দেড় বছর যাবৎ চুলকানিতে আক্রান্ত, যেটা মাদ্রাসার বোডিং থেকেই ছড়িয়েছে। এতদিন যাবৎ তার চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু এখন, ডাক্তারের পরামর্শ হলো, এত বেশি চুলকানির জন্য ঔষধ খেলে সেটা তার জন্য ভবিষ্যতে খারাপ হবে, এবং কিডনিতেও সমস্যা হতে পারে। চুলকানি ছড়াতে পারে এমন জায়গা থেকে দূরে থাকতে বলেছে ডাক্তার। এমনটা করতে হলে তো তাকে মাদ্রাসা থেকে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু এটা করলে তার হিফজ বন্ধ হয়ে যাবে। তার চুলকানি যাতে খুব বেশি বৃদ্ধি না পায় তাই বড় হুজুরকে বলে আমরা সকালের ঘুমের সময়টাতে ওকে বাসায় নিয়ে আসার ব্যবস্হা করি। সকাল ৯-১২ টা এই সময়ে সে বাসায় এসে সকালের খাবার খায়, ঘুমায়, তারপর ঘুম থেকে উঠে গোসল করে আবার মাদ্রাসায় চলে যায়। এতে করে তাকে খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করে গোসল করিয়ে দিতে পারছি। এর ফলে চুলকানি কিছুটা কম থাকে।
আমার প্রশ্ন হলো,
(১) মাদ্রাসার নিয়মের বাইরে গিয়ে যদিও হুজুরদের সম্মতিতে তাকে বাসা থেকে খাবার দিচ্ছি, সকাল বেলা বাসায় নিয়ে আসছি, এতে কি আমরা ভুল করছি? অন্য ছাত্ররা তো এই সুবিধা পাচ্ছে না। তাদের সাথে কি আমরা অন্যায় করছি? আমাদের দ্বারা কি অন্য বাচ্চাদের কোন হক নষ্ট হচ্ছে?
মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, এই পরিবেশে আরও ১০০ বাচ্চা থাকছে, খাচ্ছে। ওরা যদি পারে তাহলে আমার সন্তান কেন পারবে না? আবার নিজেই উত্তর দেই, সব বাচ্চা এক রকম হয় না। অন্যরা পারছে, তুমি কেন পারবে না, এমনটা বললে কিংবা বাচ্চার উপর এডজাস্ট করার জন্য চাপ দিলে তখন নিজের বাচ্চার উপর জুলুম করছি মনে হয়৷
(২) যদি নিজেদের সন্তানকে এই সুযোগটুকু পাওয়ার ব্যবস্হা করে দেওয়া আমাদের ভুল হয়, গুণাহের কারণ হয় তাহলে আমার বাচ্চার শারীরিক অবস্হা বিবেচনায় আমাদের কি করা উচিত, উস্তাদ?
আমাকে একটু পরামর্শ দিবেন উস্তাদ। আমি খুব অস্বস্তিতে আছি, বিশেষ করে বড় হুজুরের কথা শোনা পর থেকে। অন্যদিকে বাচ্চার অসুস্হতা, ওর কষ্টও এটা আমাদের কষ্ট দিচ্ছে।