وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো,জামাতের সাথে নামাজ আদায় কালে কাতারের স্তরবিন্যাস বিন্যাস হলোঃ
প্রথমে পুরুষেরা দাড়াবে,(এখানে গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের কোনো অগ্রাধিকার নেই,সকল পুরুষই এক্ষেত্রে সমান অধিকার রাখে।)
পুরুষদের কাতারের পর শিশুদের কাতার হবে,(তবে শিশুদের সংখ্যা যদি কম হয়,তাহলে তাদেরকে পুরুষদের কাতারের মাঝে মাঝে দাড় করাবে।)
তারপর হিজরাদের কাতার হবে,তারপর মহিলাদের কাতার হবে।
(ফাতাওয়ায়ে হিকমত ১/১২৮)
হাদীস শরীফে এসেছে
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, পুরুষ লোকের কাতারসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার এবং সর্বনিকৃষ্ট কাতার হল শেষ কাতার, আর স্ত্রীলোকের কাতারসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল শেষ কাতার এবং নিকৃষ্ট কাতার হল প্রথম কাতার (মুসলিম, মিশকাত হা/১০৯২)।
আরো জানুনঃ-
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা: সালাতে পুরুষদের কাতারসমূহের মাঝে প্রথম কাতারের অবস্থানকারীদের সাওয়াব, মর্যাদা বেশি। কারণ মসজিদে আগে উপস্থিত হওয়ার যে কথা বলা হয়েছে তা স্বভাবত প্রথম কাতারে অবস্থানকারীগণ সংরক্ষণ করে, তারা ইমামের কাছাকাছি থাকে। ইমামের অবস্থাসমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করে। ইমামের ক্বিরাআত (কিরআত) শোনে। মহিলাদের থেকে দূরে থাকে। পক্ষান্তরে শেষ কাতারের উপস্থিত হওয়া কম সাওয়াব অর্জনের কথা বলা হয়েছে কারণ প্রথম কাতারে অবস্থানকারী মুসল্লীর যে গুণসমূহ অর্জন হয় শেষ কাতারে তা অর্জন হয় না, মুসল্লী ইমাম থেকে দূরে থাকে, মহিলাদের কাছাকাছি থাকে। মহিলাদের জন্য শেষ কাতারে দাঁড়ানো সাওয়াব বেশি। পুরষদের সাথে উঠা-বসা থেকে তাদের দূরে থাকার কারণে, পুরুষদের উঠা-বসার সময় তাদের প্রতি অন্তর ধাবমান হওয়া ও তাদের কথা শ্রবণ থেকে দূরে থাকার কারণে। অনুরূপভাবে মহিলাদের জন্য প্রথম কাতারে দাঁড়ানো শেষ কাতারে দাঁড়ানোর বিপরীত। হাদীসে পুরুষদের প্রথম ও শেষ কাতারে দাঁড়ানোর যে সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে যা বুঝা যাচ্ছে সেভাবেই প্রযোজ্য।
পক্ষান্তরে মহিলাদের কাতারসমূহের যে বিবরণ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে তা মূলত পুরুষদের সাথে মহিলাদের উঠা-বসার সময় প্রযোজ্য। ইমাম নাবাবী বলেন, পুরুষদের কাতারসমূহের যে বর্ণনা হাদীসে দেয়া হয়েছে তা স্বাভাবিকভাবে প্রযোজ্য তথা পুরুষদের জন্য প্রথম কাতার সর্বদাই উত্তম এবং শেষ কাতার সর্বদাই কম সাওয়াব অর্জনের কারণ। পক্ষান্তরে নারীদের কাতারসমূহের যে বিবরণ হাদীসে এসেছে তা মূলত ঐ সকল নারীদের কাতার যারা পুরুষদের সাথে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করে।
পক্ষান্তরে যদি তারা পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করে তাহলে তাদের জন্যও প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা বেশি সাওয়াবের কারণ আর শেষ কাতারে সালাত আদায় করা সাওয়াব কম হওয়ার কারণ। কেউ বলেন মহিলাদের কাতারও স্বাভাবিকভাবে প্রথম কাতারই শ্রেষ্ঠ হতে পারে যদি পর্দার মাধ্যমে পুরুষদের থেকে মহিলাদেরকে আলাদা করে দেয়া হয়। মাসআলাটি গবেষণার।
হাদীসটিতে প্রমাণ রয়েছে মহিলা কাতারবন্দী হয়ে পুরুষদের সাথে তাদের অবস্থানের মাঝে কোন কিছুর ব্যবধান ছাড়াই অথবা আলাদা একাকীভাবে সালাত আদায় করা জায়িয। জানা উচিত, মতবিরোধ করা হয়েছে ঐ ব্যাপারে যে, মসজিদে প্রথম কাতারটি ঐ কাতার যা সাধারণত ইমামের নিকটে থাকে অর্থাৎ যা ক্বিবলার অধিক নিকটবর্তী? নাকি প্রথম কাতার পূর্ণাঙ্গই উদ্দেশ্য? যা ইমামের নিকটবর্তী থাকে। যে কাতারের মাঝে বেষ্টিত কোন কিছু প্রবেশ হয়ে যায় তা উদ্দেশ্য নাকি প্রথম কাতার বলতে ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য যে আগে সালাতে আসে যদিও সে পেছনে সালাত আদায় করে? ইমাম নাবাবী বলেন, প্রথম কাতার বলতে ঐ প্রশংসিত কাতার যে কাতারের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। তা ঐ কাতার যা ইমামের কাছাকাছি। চাই সে কাতারের মালিক আগে আসুক বা পরে আসুক। চাই কাতারের মাঝখানে সীমাবদ্ধ বা তার অনুরূপ কোন কিছু প্রবেশ করুক বা না করুক। এটিই সঠিক কথা যা হাদীসসমূহের বাহ্যিক দিক দাবি করছে।
বিশ্লেষকগণ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কথা বলেছেন। বিদ্বানদের একটি দল বলেন, প্রথম কাতার বলতে মসজিদের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যার মাঝে সীমাবদ্ধ বা অনুরূপ কোন জায়গা বা বস্ত্তর প্রবেশ করবে না সুতরাং যে কাতার ইমামের কাছাকাছি তার মাঝে যদি কোন কিছু প্রবেশ করে তাহলে তা প্রথম কাতার বলে গণ্য হবে না বরং প্রথম কাতার বলতে ঐ কাতার যার মাঝে কোন কিছু প্রবশে করবে না যদিও তা পেছনে হয়। এক মতে বলা হয়েছে, প্রথম কাতার বলতে কোন ব্যক্তি মসজিদে প্রথম আসা যদিও সে পেছনের কাতারে সালাত আদায় করে এ দু’টি উক্তি স্পষ্ট ভুল।