আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
15 views
in সালাত(Prayer) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম। লম্বা প্রশ্ন করার জন্য শুরুতেই দুঃখ প্রকাশ করছি। নামাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করা সত্ত্বেও প্রায় সময়ই বিভিন্ন ধরনের ভুল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি যে কয়টা সমস্যায় পড়ি-

১। প্রথম বৈঠক শুরু করার জন্য ২ রাকাত ইতোমধ্যে পড়া হয়েছে  নাকি হয় নি সেই সন্দেহ শুরু হয়, এক্ষেত্রে আমি সাধারণত ১ রাকাত ধরে নতুন করে আরেক রাকাত নামাজ পড়ে নিই এবং আত্তাহিয়াতু পড়ে শেষ বৈঠকে ১ বার সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে পুনরায় আত্তাহিয়াতু, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করি। আমার এই নামাজ কী শুদ্ধ হয়? আমি বিভিন্ন জায়গায় রাকাত সংখ্যায় ভুল/ সন্দেহ  হলে সাহু সিজদা দেয়ার বিভিন্ন নিয়ম পড়েছি। কোথাও কোথাও লেখা রাকাত সংখ্যা ভুল হলে পরবর্তী প্রত্যেক রাকাতের পরে বৈঠক করে তাশাহহুদ পড়তে হয় এবং শেষ রাকাতে তাশাহহুদ পড়ে ১ বার সালাম ফিরিয়ে  সাহু সিজদা দিয়ে  আত্তাহিয়াতু, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পড়ে নামাজ শেষ করতে হয়। তাহলে কি রাকাত সংখ্যা ভুল এবং অন্যান্য ওয়াজিবের ভুলের ক্ষেত্রে সাহু সিজদা দেয়ার ভিন্ন নিয়ম? নাকি আমি শুরুতে যেভাবে সাহু সিজদা দেয়ার কথা উল্লেখ করলাম সেটা সব ধরনের ভুলের ক্ষেত্রেই সঠিক?

২। নামাজে মাঝেমধ্যে চতুর্থ রাকাত পড়ছি নাকি তৃতীয় রাকাত এ নিয়ে সন্দেহ হয়। আমি শুনেছি কম রাকাত সংখ্যা ধরে নিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে নামাজ শেষ করতে হয়। এক্ষেত্রে যদি তৃতীয় রাকাত ধরে আরেক রাকাত পড়ে নামাজ শেষ করি তাহলে যদি বেশি পড়া হয় তবে রাকাত সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ এ। কিন্তু কোন কোন আলেমের কাছে শুনেছি চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজে রাকাত সংখ্যা নিয়ে ভুল হলে ৬ রাকাত মিলিয়ে পড়তে হয় এবং ৩ রাকাত হলে ৫ রাকাত। তাহলে ফরজ গণনা করার পর বাকি ২ রাকাত নফল হিসেবে গণ্য হবে। আবার কেউ কেউ বলেন কম রাকাত সংখ্যা ধরে নিয়ে আদায় করলেই হয়, এক্ষেত্রে ৩ বা ৪ যে কয় রাকাত বিশিষ্ট নামাজই হোক না কেন যদি বেশি পড়া হয় তাহলে ১ রাকাতই অতিরিক্ত হয়। কোনটা সঠিক?
৩। ফজরের ফরজ নামাজ ১ রাকাত পড়েছি সন্দেহ হলে কিন্তু বৈঠক শেষে ২ বার সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করে মাসয়ালা দেখার জন্য মোবাইল ঘেঁটে ( মোবাইল নেয়ার জন্য কিবলা থেকে পিছন ফিরতে হয়েছিল) পরে সিজদায়ে সাহু দিয়ে আবার সালাম ফিরিয়ে নিলে এই নামাজ কি সঠিকভাবে আদায় হয়েছে বলে গণ্য হবে? নাকি আবার পড়তে হবে?

৩। আমি সাধারণত সাহু সিজদা দেয়ার জন্য শুধু তাশাহহুদ পড়ে ১ বার সালাম ফিরিয়ে আবার সব পড়ে শেষ করে ২ বার সালাম ফিরাই। যদি কখনো আত্তাহিয়াতুর পরে সাহু সিজদা দিতে ভুলে যাই, তাহলে বৈঠক শেষে  ২ বার সালাম ফিরানোর পরে ২ টি সিজদা দিয়ে আবার সালাম ফিরাই।  কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় পড়েছি সবক্ষেত্রেই আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দোয়া মাসুরা পড়ে বৈঠক শেষ করে ২ বার সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে আবার সালাম ফিরাতে হয়(এক্ষেত্রে কিন্তু অতিরিক্ত ১ বার তাশাহহুদ পড়া হচ্ছে না)। কোন নিয়মটি আসলে সঠিক? আমি হানাফি মাযহাবের অনুসারী। যদি বিভিন্ন সময়ে ২ টি নিয়মই অনুসরণ করি তাহলে কি নামায আদায় হবে?
৪। নামাজে শেষ বৈঠকে দরুদের শেষাংশ পড়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ হলে কিন্তু ১ বার সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দেয়ার নিয়মটি পালন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ২ বার সালাম ফিরিয়েই সাহু সিজদা দিয়ে আবার সালাম ফিরাই। এভাবে প্রায়ই  বিভিন্ন ভুলের জন্য আমার ২ টি নিয়মই অনুসরণ করা হয়ে যায়। হানাফি মাযহাবের অনুসারী হিসেবে নামাজের শুদ্ধতায় এতে কোন সমস্যা হয় কী?

1 Answer

0 votes
by (671,280 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/62231/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ-
নামাযে রা'কাত বা সেজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হলে,যে ঐ ব্যক্তির কি এটা প্রথম হয়েছে না মাঝেমধ্যে এমন হয়।যদি প্রথমবার বা কদাচিৎ হয়ে তাহলে উনি আবার প্রথম থেকে শুরু করে নতুনভাবে পড়ে নিবেন।
(মুছান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ২/২৮)

যে ব্যক্তির প্রায় সময় সন্দেহ হয় এবং সন্দেহ তার অভ্যাসে পরিণত হয়, ওই ব্যক্তি যেদিকে তার মন বেশি যায় (প্রবল ধারণা হয়), সেটার ওপর আমল করবে। যদি সব বিষয়ে ধারণা সমান হয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যার ওপর আমল করবে এবং প্রত্যেক রাকাতকে নামাজের শেষ মনে করে বসবে, শেষে সিজদায়ে সাহু করবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ أَبِي خَلَفٍ، حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ دَاوُدَ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا شَكَّ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَتِهِ فَلَمْ يَدْرِ كَمْ صَلَّى ثَلاَثًا أَمْ أَرْبَعًا فَلْيَطْرَحِ الشَّكَّ وَلْيَبْنِ عَلَى مَا اسْتَيْقَنَ ثُمَّ يَسْجُدُ سَجْدَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يُسَلِّمَ فَإِنْ كَانَ صَلَّى خَمْسًا شَفَعْنَ لَهُ صَلاَتَهُ وَإِنْ كَانَ صَلَّى إِتْمَامًا لأَرْبَعٍ كَانَتَا تَرْغِيمًا لِلشَّيْطَانِ " .

মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) ..... আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন রাকাআত আদায় করা হলো না চার রাকাআত আদায় করা হলো- সালাতের মধ্যে তোমাদের কারো এরূপ সন্দেহ হলে সে যে কয় রাক’আত আদায় করেছে বলে নিশ্চিত হবে (তিন রাকাআত) সে কয় রাকাআতকে ভিত্তি ধরে অবশিষ্ট করণীয় করবে। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে দুটি সিজদা করবে। (এখন) সে যদি পাঁচ রাকাআত আদায় করে থাকে তাহলে এ দু' সিজদা দ্বারা তার সালাতের জোড়া পূর্ণ হয়ে যাবে। আর যদি তার সালাত চার রাকাআত হয়ে থাকে তাহলে (এই) সিজদা দুটি শয়তানের মুখে মাটি নিক্ষেপের শামিল হবে। (মুসলিম ১১৫৯.ইসলামী ফাউন্ডেশন ১১৫২, ইসলামীক সেন্টার ১১৬১)

বিস্তারিত জানুনঃ- 

সেজদার সংখ্যা নিয়ে এমন সন্দেহ হলে প্রবল ধারণার উপর আমল করতে হয়।

আর কোনো দিকে প্রবল ধারণা না হলে সেক্ষেত্রে কম সংখ্যক সেজদাহ ধরে আরো একটি সেজদাহ আদায় করে শেষে সেজদায়ে সাহু দেয়া।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে আপনার নামাজ শুদ্ধ হয়েছে।
আপনি যেভাবে সেজদায়ে সাহু দিয়েছেন,এটি সঠিক পদ্ধতি। 

(০২)
এক্ষেত্রে তো আপনি প্রথমে প্রবল ধারণার উপর আমল করবেন। 

কোন দিকেই যদি আপনার প্রবল ধারণা না হয় সেক্ষেত্রে আপনি কম রাকাত কে ধরে আরও এক রাকাত আদায় করে শেষে সেজদায় সাহু দিবেন।

যেহেতু আপনি সন্দেহের মধ্যে আছেন, সেক্ষেত্রে পঞ্চম রাকাত হয়েছে বলে নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে?

এক্ষেত্রে তো পঞ্চম রাকাত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই!

যদি আপনি নিশ্চিত হতেন! তাহলে কেনই আরেক রাকাত আদায় করলেন?
কেননা আপনি যদি নিশ্চিত থাকেন যে চার রাকাতে হয়েছে,সেক্ষেত্রে তো আরেক রাকাত আদায়ের সুযোগ নেই।

(০৩)
আপনি তাশাহহুদ পড়ে ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আবার তাশাহুদ,দরুদ শরীফ,দোয়ায়ে মাছুড়া পড়ে শেষ করে ২ বার সালাম ফিরাবেন।
হানাফি মাযহাব মোতাবেক এটিই সহীহ।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
হযরত ছাওবান রাযি থেকে বর্ণিত

عَنْ ثَوْبَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لِكُلِّ سَهْوٍ سَجْدَتَانِ بَعْدَ مَايُسَلِّمُ»

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,প্রত্যেক ভূলের(তরকে ওয়াজিবের)জন্য যযলামের পর দু'টি সেজদা রয়েছে।(সুনানু আবি-দাউদ-১০৩৮,বায়হাক্বী-২/৩৩৭)

উক্ত হাদীসে সালামের পর সেজদায়ে সাহুর কথা বলা হয়েছে।সালামের পর বলতে এক সালামের পর।কেননা দুই সালাম তো নামাযকে সমাপ্ত করে দেয়।

আরো জানুন-897

(০৪)
নামাজে শেষ বৈঠকে দরুদের শেষাংশ পড়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে সন্দেহ হলে দরুদের শেষাংশ পুনরায় পাঠ করবেন।
চাইলে পুরো দরুদ শরীফ আবার পাঠ করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে কোনো সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবেনা।

নামাজের শেষ বৈঠকে একাধিকবার দুরুদ শরীফ পাঠ করলে বা একাধিকবার দোয়ায়ে মাসুরা পাঠ করলেও সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হয় না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 419 views
...