আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (26 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ
১। ভবিষ্যতের জন্য অর্থ সম্পদ জমানো প্রসঙ্গে ইসলাম কি বলে?

২। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য / কোনো বিপদ হতে পারে তখন অর্থের প্রয়োজন হতে পারে, এটা ভেবে অর্থ জমিয়ে  /গোল্ড/ জমি কিনে রাখা যাবে?  এটা কি জায়িজ? নাকি অর্থ না জমিয়ে আল্লাহর উপর তওয়াক্কুল করে থাকতে হবে?
৩। কোনো বিপদ হতে পারে এটা ভেবে অর্থ জমালে কি বাস্তবে সেই বিপদ আল্লাহ দিতে পারেন?

1 Answer

0 votes
by (676,800 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 
 
 (০১)
সুরা তাওবার ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَ الرُّہۡبَانِ لَیَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَ الۡفِضَّۃَ وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿ۙ۳۴﴾

হে মুমিনগণ! নিশ্চয় অনেক পন্ডিত-পুরোহিত মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায় উপায়ে ভক্ষণ করে এবং আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে থাকে।আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তুমি তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দাও। 
,
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন যে, এটা যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বের আদেশ। যাকাতের হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর যাকাত দ্বারা আল্লাহ তাআলা মাল-ধনকে পবিত্র করার মাধ্যম বানিয়েছেন। এই জন্য উলামাগণ বলেন, যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে সে মাল (আয়াতে নিন্দনীয়) ‘জমা করে রাখা’ মাল নয়। আর যে মাল থেকে যাকাত বের করা হবে না, সে মালই হবে ‘জমা করে রাখা’ ধনভান্ডার; যার জন্য রয়েছে এই কুরআনী ধমক। 
,
ইয়াহুদী নাসারা গোষ্ঠীর আলেম সম্প্রদায়ের মিথ্যা ফতোয়া দানের ব্যাধি সৃষ্টি হয় অর্থের লোভ লালসা থেকে। এজন্যে আয়াতে অর্থলিন্সার করুণ পরিণতি ও কঠোর সাজার কথা বর্ণিত হয়। এরশাদ হয়েছেঃ “যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে, তা খরচ করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ দিন”। এখানে “আর তা খরচ করে না আল্লাহর পথে” বাক্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, যারা বিধানমতে আল্লাহর ওয়াস্তে খরচ করে, তাদের পক্ষে তাদের অবশিষ্ট অর্থ সম্পদ ক্ষতিকর নয়। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যে মালামালের যাকাত দেয়া হয়, তা জমা রাখা সঞ্চিত ধন-রত্রের শামিল নয়।” [আবু দাউদ: ১৫৬৪]। এ থেকে বোঝা যায় যে, যাকাত আদায়ের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তা জমা রাখা গোনাহ নয়।
,
পূর্ণ হাদীস হলোঃ
 
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عِيسَى، حَدَّثَنَا عَتَّابٌ، - يَعْنِي ابْنَ بَشِيرٍ - عَنْ ثَابِتِ بْنِ عَجْلاَنَ، عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ كُنْتُ أَلْبَسُ أَوْضَاحًا مِنْ ذَهَبٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَكَنْزٌ هُوَ فَقَالَ " مَا بَلَغَ أَنْ تُؤَدَّى زَكَاتُهُ فَزُكِّيَ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ " .

মুহাম্মাদ ইব্ন ঈসা (রহঃ) ...... উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি স্বর্ণালংকার ব্যবহার করতাম। একদা আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার এই অলংকার “কান্য” হিসেবে গণ্য হবে কী? তিনি বলেনঃ যে মালের পরিমাণ এতটা হবে যার উপর যাকাত ধার্য হয়, তার যাকাত দিতে হবে, তা (ভূগর্ভে) গচ্ছিত ধন নয়।
(আবু দাউদ ১৫৬৪)

 মুয়াবিয়া রাঃ সহ অসংখ্য ছাহাবায়ে কেরামগন মনে করতেন, যাকাত আদায় করাই যথেষ্ট, এরপর আর কিছু সঞ্চয় করাটা দোষের নয়।
,
★সুতরাং সম্পদ জমানো জায়েজ।
তবে সেই সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হলে প্রতি বছর সেই সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে।

টাকা জমিয়ে রেখে সেই টাকা থেকে যাকাত আদায় করলে টাকা জমানো জায়েজ হবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।   

(উল্লেখ্য যে হযরত আবু জর গিফারী (রা:) মনে করতেন, আগামীকালের জন্য কিছু সঞ্চিত রাখাটাও সঙ্গত নয়।)
এটি উনার নিজস্ব ইজতেহাদী মত।) 

(০২)
এটি জায়েজ আছে।
তবে সেই সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হলে প্রতি বছর সেই সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে।

হাদীস শরীফে  বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُودُنِي مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بِي، زَمَنَ حَجَّةِ الوَدَاعِ، فَقُلْتُ: بَلَغَ بِي مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مَالٍ، وَلاَ يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَةٌ لِي، أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: لاَ قُلْتُ: بِالشَّطْرِ؟ قَالَ: لاَ قُلْتُ: الثُّلُثُ؟ قَالَ: الثُّلُثُ كَثِيرٌ، أَنْ تَدَعَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ، وَلَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا، حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِي فِي امْرَأَتِكَ

হযরত আমের ইবনে সাদ তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, বিদায় হজ্বের সময় আমার এক কঠিন পীড়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, আমার মুমূর্ষ অবস্থা তো আপনি দেখছেন, এদিকে আমার অনেক সম্পদ আছে। আর আমার একমাত্র ওয়ারিস আমার মেয়েই। আমি কি আমার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ (গরীবদেরকে) সদকা করে দেবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? নবীজী বললেন, না। এক তৃতীয়াংশ? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও অনেক। নিশ্চয়ই তুমি যদি তোমার ওয়ারিসদেরকে স্বচ্ছল রেখে যাও
তাহলে সেটা উত্তম হবে তাদেরকে এমন দরিদ্র রেখে যাওয়ার চেয়ে যে, তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১২০

(০৩)
এর কারনেই বিপদ আসবে,এমনটি বলা সহীহ নয়। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...