আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
41 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (17 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায,
আমার শশুর যেকোনো মহিলাকে স্পর্শ করে ফেলেন। স্পর্শ মানে হাতে, মাথায় এরকম আরকি, খারাপভাবে না। এ জিনিসটা দেখলে আমার খারাপ লাগে। আমি শাশুড়ির সামনে বুঝিয়েও বলেছি গায়রে মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা গোনাহ। আমার শশুড়ের চরিত্রে বা ফিতরাতে সমস্যা আছে এমনটা আমি মনে করতে পারি না, সুধারণা রাখারই চেষ্টা করি। অথবা পরনারীর প্রতি উনার ইনটেনশন কেমন তাও জানিনা। উনি হয়তো বিষয়টাকে নরমাল মনে করে টাচ করে। যেমন আমাদের প্রতিবেশী নারীরা বেপর্দা, ওরা সবসময় ঘরে আসা-যাওয়া করে। ওদের সাথে অনেক হাসি-মজা-দুষ্টুমির সম্পর্ক। নতুন কোনোকিছু কিনে আনলে ওদেরকে দেখান ডেকে এনে। তখন প্রায়ই হাত ধরে টেনে নিয়ে আসেন। (উল্লেখ্য, আমার শশুর মিশুক আর হাসি-মজা এসব করেন সবসময়। আর তিনি নামাজও পড়েন রেগুলার।)
একদিন আমার একজন মামী শাশুড়ী বেড়াতে আসে। সবাইকে বসতে বলার পর মামী দাঁড়াইয়া ছিলেন, তারপর আমার শশুর "আরে বস না" বলে উনার হাতের কনুইয়ের উপরের অংশে অর্থাৎ বাজুতে ধরে হেঁচকা টানে বসাইছেন, হতে পারে তখন আমার শশুরের আঙ্গুলের সামান্য অংশ হলেও উনার বডিতে লাগছে। আরেকদিন কাজের মহিলাকে বেতন দিয়া মজার ছলে উনার কানে টান দিয়া ধরছেন, ধইরা বলেন "ঠিকমতো কাজ করিস না কেন, হাহা!"
মহিলাও এটাকে খারাপভাবে নেয়নি। আমার এ দৃশ্য দেখে দাঁড়াতে কষ্ট হইতেছিলো, মনে হচ্ছিল পড়ে যাবো মাথা ঘুরে।
আমার জা অর্থাৎ আমার শশুরের ছোট পুত্রবধূ, তাকে প্রায়ই মাথায় হাত দেন। সে পর্দাশীলা মেয়ে না, হুরমত সম্পর্কেও জানে না, সে একদিন আমার শশুরের পেটে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো অসুস্থ ছিলেন বলে। পরে আমি জা'কে হুরমত সম্পর্কে সতর্ক করেছি। একদিন মজার ছলে কোনো এক কথার প্রেক্ষিতে আমার জায়ের উরুতে দুইটা থাবা দিছেন, এটা দেখে অনেক খারাপ লাগছিলো আমার। আমাকেও একদিন মাথায় টাচ করছেন, আল্লাহ মাফ করুন। তবে আমার হাত ধরা বা আমাকে নরমালি টাচ করেন না তিনি, হয়তো বুঝছেন আমার পছন্দ না এগুলো। তবে বিভিন্ন জিনিস আনা-নেয়া করতে গেলে উনার আঙুলের আমার আঙুল লেগে যায়।
তারপর আমাদের রুমের দরজা চাপিয়ে রাখা উনার পছন্দ না। বিয়ের শুরুর দিকে এসব বুঝিনি, সিরিয়াসলি নিই নি, দরজা না লাগিয়ে শুধু চাপ দিয়ে রাখতাম। তখন দেখতাম রুমে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলেও উনি চলে আসতেন। ধরেন, আমার জাওজের শুকনা কাপড় রুমে রেখে যেতেন বা কোনো দরকারে এভাবে চলে আসতেন হুটহাট। পরে আমি ভাবলাম বিষয়গুলো নিয়ে, খারাপ লাগলো, কারণ শুইলে মানুষের বডি শেইপ বুঝা যায়, যেটা আমার নিজ ভাই ও বাবার সামনেও পছন্দ করি না। তারপর থেকে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমাই। আর উনি রুমে আসলে গলা খাঁকারি দিয়ে আসেন না, আসার পর গলায় সাউন্ড করেন। আমাকে দরজা লাগানো নিয়ে চরম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। জাওজরে বলাতে জাওজ বলছেন "আপাতত কয়েকদিন চাপিয়ে ঘুমাও, পরে একদিন ছিটকিনি লাগিয়ে দিও।" যদিও আমি দরজা ছিটকিনি দিয়েই ঘুমাই। এ কয়দিন আবার দরজা নিয়ে কিছু বলেন নি। কিন্তু কয়েকদিন আগে আবার বলছেন। বলেন "আমি দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখি ছিটকিনি লাগানো, কেন লাগাও? খোলা রাখতে পারো না?" পরে আমার শাশুড়ি বলছে, "থাক লাগিয়েই ঘুমাক। তুমি টেনশন করো কেন!"
দুইজন উস্তায বলেছেন আমার খাস পর্দা করা উচিত শশুরের সাথে। কিন্তু বাসার যে পরিস্থিতি, আমি জানিনা কিভাবে পর্দা শুরু করবো। আমার শশুর বয়স্ক প্রায় ৫৫-৬০ এর মধ্যে, তবে বেশ শক্ত সামর্থ্য। চুলদাড়ি অবশ্য সাদা সম্পূর্ণ। আর উনি মহিলাদের মতো সব কাজে অংশ নেন। মাঝে মাঝে চা বানান, রান্নাঘরেও যাওয়া আসা করেন। আপাতত আমাদের বাসায় দুইটা বেডরুম, একটা ড্রয়িং, আরেকটা ডাইনিং। বাথরুম দুইটা, আমার রুমে এটাচড বাথরুম। তারউপর চা নাস্তা সব দিতে হয়। এমনিতেও গল্পটল্প করার জন্যও ডাকেন।
এই পরিস্থিতিতে আমি শশুরের ইনটেনশন নিয়ে কুধারণা বা অতি সন্দেহ না করলেও, উনার এসব আচরণ (যাকে-তাকে স্পর্শ) আমার খারাপ লাগে। ঘরের ভিতর নাকমুখ ঢেকে পর্দা শুরু করলে নিশ্চিত পাগল বলবে।
দুইজন উস্তায বলছেন বাসা আলাদা নিতে শশুরের ফিতনা থেকে বাঁচতে, কিন্তু এটাও হয়তো সম্ভব না। তাছাড়া আমি তাদেরকে যথেষ্ট সম্মান করি এবং মায়াও করি।
তিনদিন আগে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আমার শশুর আমাকে ডেকেছেন উনার আত্মীয় মেয়েকে কল দিয়ে দিতে। বাটন ফোনে কল দিয়ে মেয়েটার ফেসবুক আইডি এনেছি, আরেক হাতে স্মার্ট ফোনে আইডি বের করে নক করেছি। তারপর বাটন ফোনটি রেখে দিয়েছি আমার উরুর উপর। আমি চেয়ারে বসেছিলাম দুই উরু, হাটু একসাথে মিশিয়ে। আমার পাশে বিছানায় তিনি বসেছিলেন। আমি বাটন ফোনটি স্পর্শকাতর জায়গার পাশে দুই উরুর মিলনস্থলে রেখেছিলাম। তারপর আমার শশুর হাত বাড়িয়েছেন বাটন ফোনটি নিতে। তিনি ফোনটি আমার কাছে না চেয়ে সোজা হাত বাড়িয়েছেন আমার উরু থেকে তুলতে। আর প্রায় স্পর্শ লেগেই যাবে, আর ১ সেকেন্ড দেরী করলে স্পর্শ হয়ে যাবে এমনটা হঠাৎ বুঝতে পেরে আমিও সেকেন্ডের মধ্যে ফোনটি তুলে উনার হাতে দিয়ে দিই। কিন্তু তখন আমার ভয় লেগে গিয়েছিল ব্যাপারটা চিন্তা করে, আর তাছাড়া আমার কাছে শরীরের এই জায়গাটা স্পর্শকাতর অংশ। এখন আমি শিওর হয়ে বুঝতে পারছি না স্পর্শ হয়েছিল কিনা।
আমার প্রশ্ন-
১. উপরোক্ত ঘটনায় কি হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে?
২. আমার কি শশুরের সামনে পর্দা করা উচিত? করলে সীমারেখা কতটুকু? অর্থাৎ নিকাবসহ পর্দা? নাকি বড় হিজাব পড়ে থাকলে হবে?
৩. দূরত্ব কিভাবে বজায় রাখবো? এতে যদি উনারা মনঃক্ষুণ্ন হন, মনে করেন যদি আমি উনাকে পিতার মতো স্নেহ করি না? কি করবো?
৪. আমার স্বামীর করণীয় কি এখানে?

1 Answer

0 votes
by (698,160 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
وفى رد المحتار- قوله (بشهوة) اي ولو من احدهما،
وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى
وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)

(৩) স্পর্শ করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। সেই সাথে স্পর্শ করার আগে বা শেষে, হাত ছেড়ে দেওয়ার আগে বা পর যদি উত্তেজনা অনুভূত হয় তাহলেও নিষিদ্ধতার সাব্যস্ত হবে না।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1233

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
প্রশ্নের বিবরণমতে এই বদ অভ্যাস যে সব শশুড়দের রয়েছে, তাদের সাথে গায়রে মাহরামদের মতই পর্দা ফরয। সুতরাং প্রশ্নের বিবরণমতে যদিও এখন পর্যন্ত হুরমত হয় নাই , তবে ভবিষ্যতে কি হবে? তা আল্লাহই ভালো জানের। স্বামী উপর ফরয সে অতিদ্রুত স্ত্রীকে নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...