আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তায,
আমার শশুর যেকোনো মহিলাকে স্পর্শ করে ফেলেন। স্পর্শ মানে হাতে, মাথায় এরকম আরকি, খারাপভাবে না। এ জিনিসটা দেখলে আমার খারাপ লাগে। আমি শাশুড়ির সামনে বুঝিয়েও বলেছি গায়রে মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা গোনাহ। আমার শশুড়ের চরিত্রে বা ফিতরাতে সমস্যা আছে এমনটা আমি মনে করতে পারি না, সুধারণা রাখারই চেষ্টা করি। অথবা পরনারীর প্রতি উনার ইনটেনশন কেমন তাও জানিনা। উনি হয়তো বিষয়টাকে নরমাল মনে করে টাচ করে। যেমন আমাদের প্রতিবেশী নারীরা বেপর্দা, ওরা সবসময় ঘরে আসা-যাওয়া করে। ওদের সাথে অনেক হাসি-মজা-দুষ্টুমির সম্পর্ক। নতুন কোনোকিছু কিনে আনলে ওদেরকে দেখান ডেকে এনে। তখন প্রায়ই হাত ধরে টেনে নিয়ে আসেন। (উল্লেখ্য, আমার শশুর মিশুক আর হাসি-মজা এসব করেন সবসময়। আর তিনি নামাজও পড়েন রেগুলার।)
একদিন আমার একজন মামী শাশুড়ী বেড়াতে আসে। সবাইকে বসতে বলার পর মামী দাঁড়াইয়া ছিলেন, তারপর আমার শশুর "আরে বস না" বলে উনার হাতের কনুইয়ের উপরের অংশে অর্থাৎ বাজুতে ধরে হেঁচকা টানে বসাইছেন, হতে পারে তখন আমার শশুরের আঙ্গুলের সামান্য অংশ হলেও উনার বডিতে লাগছে। আরেকদিন কাজের মহিলাকে বেতন দিয়া মজার ছলে উনার কানে টান দিয়া ধরছেন, ধইরা বলেন "ঠিকমতো কাজ করিস না কেন, হাহা!"
মহিলাও এটাকে খারাপভাবে নেয়নি। আমার এ দৃশ্য দেখে দাঁড়াতে কষ্ট হইতেছিলো, মনে হচ্ছিল পড়ে যাবো মাথা ঘুরে।
আমার জা অর্থাৎ আমার শশুরের ছোট পুত্রবধূ, তাকে প্রায়ই মাথায় হাত দেন। সে পর্দাশীলা মেয়ে না, হুরমত সম্পর্কেও জানে না, সে একদিন আমার শশুরের পেটে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো অসুস্থ ছিলেন বলে। পরে আমি জা'কে হুরমত সম্পর্কে সতর্ক করেছি। একদিন মজার ছলে কোনো এক কথার প্রেক্ষিতে আমার জায়ের উরুতে দুইটা থাবা দিছেন, এটা দেখে অনেক খারাপ লাগছিলো আমার। আমাকেও একদিন মাথায় টাচ করছেন, আল্লাহ মাফ করুন। তবে আমার হাত ধরা বা আমাকে নরমালি টাচ করেন না তিনি, হয়তো বুঝছেন আমার পছন্দ না এগুলো। তবে বিভিন্ন জিনিস আনা-নেয়া করতে গেলে উনার আঙুলের আমার আঙুল লেগে যায়।
তারপর আমাদের রুমের দরজা চাপিয়ে রাখা উনার পছন্দ না। বিয়ের শুরুর দিকে এসব বুঝিনি, সিরিয়াসলি নিই নি, দরজা না লাগিয়ে শুধু চাপ দিয়ে রাখতাম। তখন দেখতাম রুমে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকলেও উনি চলে আসতেন। ধরেন, আমার জাওজের শুকনা কাপড় রুমে রেখে যেতেন বা কোনো দরকারে এভাবে চলে আসতেন হুটহাট। পরে আমি ভাবলাম বিষয়গুলো নিয়ে, খারাপ লাগলো, কারণ শুইলে মানুষের বডি শেইপ বুঝা যায়, যেটা আমার নিজ ভাই ও বাবার সামনেও পছন্দ করি না। তারপর থেকে ছিটকিনি দিয়ে ঘুমাই। আর উনি রুমে আসলে গলা খাঁকারি দিয়ে আসেন না, আসার পর গলায় সাউন্ড করেন। আমাকে দরজা লাগানো নিয়ে চরম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। জাওজরে বলাতে জাওজ বলছেন "আপাতত কয়েকদিন চাপিয়ে ঘুমাও, পরে একদিন ছিটকিনি লাগিয়ে দিও।" যদিও আমি দরজা ছিটকিনি দিয়েই ঘুমাই। এ কয়দিন আবার দরজা নিয়ে কিছু বলেন নি। কিন্তু কয়েকদিন আগে আবার বলছেন। বলেন "আমি দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখি ছিটকিনি লাগানো, কেন লাগাও? খোলা রাখতে পারো না?" পরে আমার শাশুড়ি বলছে, "থাক লাগিয়েই ঘুমাক। তুমি টেনশন করো কেন!"
দুইজন উস্তায বলেছেন আমার খাস পর্দা করা উচিত শশুরের সাথে। কিন্তু বাসার যে পরিস্থিতি, আমি জানিনা কিভাবে পর্দা শুরু করবো। আমার শশুর বয়স্ক প্রায় ৫৫-৬০ এর মধ্যে, তবে বেশ শক্ত সামর্থ্য। চুলদাড়ি অবশ্য সাদা সম্পূর্ণ। আর উনি মহিলাদের মতো সব কাজে অংশ নেন। মাঝে মাঝে চা বানান, রান্নাঘরেও যাওয়া আসা করেন। আপাতত আমাদের বাসায় দুইটা বেডরুম, একটা ড্রয়িং, আরেকটা ডাইনিং। বাথরুম দুইটা, আমার রুমে এটাচড বাথরুম। তারউপর চা নাস্তা সব দিতে হয়। এমনিতেও গল্পটল্প করার জন্যও ডাকেন।
এই পরিস্থিতিতে আমি শশুরের ইনটেনশন নিয়ে কুধারণা বা অতি সন্দেহ না করলেও, উনার এসব আচরণ (যাকে-তাকে স্পর্শ) আমার খারাপ লাগে। ঘরের ভিতর নাকমুখ ঢেকে পর্দা শুরু করলে নিশ্চিত পাগল বলবে।
দুইজন উস্তায বলছেন বাসা আলাদা নিতে শশুরের ফিতনা থেকে বাঁচতে, কিন্তু এটাও হয়তো সম্ভব না। তাছাড়া আমি তাদেরকে যথেষ্ট সম্মান করি এবং মায়াও করি।
তিনদিন আগে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আমার শশুর আমাকে ডেকেছেন উনার আত্মীয় মেয়েকে কল দিয়ে দিতে। বাটন ফোনে কল দিয়ে মেয়েটার ফেসবুক আইডি এনেছি, আরেক হাতে স্মার্ট ফোনে আইডি বের করে নক করেছি। তারপর বাটন ফোনটি রেখে দিয়েছি আমার উরুর উপর। আমি চেয়ারে বসেছিলাম দুই উরু, হাটু একসাথে মিশিয়ে। আমার পাশে বিছানায় তিনি বসেছিলেন। আমি বাটন ফোনটি স্পর্শকাতর জায়গার পাশে দুই উরুর মিলনস্থলে রেখেছিলাম। তারপর আমার শশুর হাত বাড়িয়েছেন বাটন ফোনটি নিতে। তিনি ফোনটি আমার কাছে না চেয়ে সোজা হাত বাড়িয়েছেন আমার উরু থেকে তুলতে। আর প্রায় স্পর্শ লেগেই যাবে, আর ১ সেকেন্ড দেরী করলে স্পর্শ হয়ে যাবে এমনটা হঠাৎ বুঝতে পেরে আমিও সেকেন্ডের মধ্যে ফোনটি তুলে উনার হাতে দিয়ে দিই। কিন্তু তখন আমার ভয় লেগে গিয়েছিল ব্যাপারটা চিন্তা করে, আর তাছাড়া আমার কাছে শরীরের এই জায়গাটা স্পর্শকাতর অংশ। এখন আমি শিওর হয়ে বুঝতে পারছি না স্পর্শ হয়েছিল কিনা।
আমার প্রশ্ন-
১. উপরোক্ত ঘটনায় কি হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে?
২. আমার কি শশুরের সামনে পর্দা করা উচিত? করলে সীমারেখা কতটুকু? অর্থাৎ নিকাবসহ পর্দা? নাকি বড় হিজাব পড়ে থাকলে হবে?
৩. দূরত্ব কিভাবে বজায় রাখবো? এতে যদি উনারা মনঃক্ষুণ্ন হন, মনে করেন যদি আমি উনাকে পিতার মতো স্নেহ করি না? কি করবো?
৪. আমার স্বামীর করণীয় কি এখানে?